বাড়ির সামনে মানিক। নিজস্ব চিত্র
ট্রেন গেলেই কাঁপত রেল লাইন লাগোয়া দরমার একচিলতে জীর্ণ ঘর। শীতের রাতে হু-হু করে হাওয়াও ঢুকত বেড়ার ফাঁক দিয়ে। জলপাইগুড়ির মালবাজারের তেশিমিলা গ্রাম পঞ্চায়েতের উত্তর সীমানায় দু’কাঠা জায়গায় তৈরি ওই ঘরেই সপরিবার থাকতেন মহম্মদ মানিক। পাশেই মালবাজার, চ্যাংরাবান্ধা হয়ে কোচবিহারগামী ট্রেন লাইন।
পাকা ঘরের খুবই প্রয়োজন ছিল তাঁর। সে জন্য আবাস যোজনা বাড়ি পেতে আবেদনও জানিয়েছিলেন কয়েক বছর আগে। কিন্তু তার মধ্যেই নিজের সামর্থ্যে ঘর তৈরির পথেও এগোচ্ছিলেন। গত বছরের শুরু থেকেই গ্রিল কারখানার কাজে ‘ওভারটাইম’ করে অল্প অল্প করে টাকা জমাতে শুরু করেন তিনি। রাজমিস্ত্রি দিয়ে গড়াতে থাকেন ঘরের কাঠামোও। তিনি জানান, লাল ইটের দাম প্রতিটির ১১ টাকা। আর সিমেন্টের ইটের দাম চার টাকা। তাই খরচ বাঁচাতে ঘর তৈরিতে সিমেন্টের ইটই ব্যবহার করেন। টাকার টানাটানিতে মাঝপথে থমকে যায় বাড়ির কাজ। কিন্তু গত ৫ অক্টোবর মাল নদীতে বিপর্যয়ের পরে, পরিস্থিতি বদলে যায় অনেকটাই। সে দিন তীব্র স্রোতের কবল থেকে অনেকের প্রাণ বাঁচিয়েছিলেন মানিকও। তার স্বীকৃতিতে রাজ্য সরকারের তরফে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় মালবাজারে এসে মানিকের মতো কয়েক জনের হাতে তুলে দিয়েছিলেন আর্থিক পুরস্কার। মানিকও পান এক লক্ষ টাকা। পাশাপাশি, বিভিন্ন পুজোর উদ্বোধনের ডাক পেয়েছিলেন তিনি। সেখানেও মেলে আর্থিক কিছু পুরস্কার।
আর দেরি করেননি মানিক। সব টাকা মিলিয়ে গত ডিসেম্বরে শেষ করে ফেলেন ঘর তৈরির কাজ। তৈরি করা হয় দু’টি শোওয়ার ঘর, উঠোনের এক প্রান্তে রান্নাঘর, খাবার ঘরও।
এর পরেই আবাস যোজনার তালিকায় মানিকের নাম ওঠে। তখনই তিনি সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন, সরকারি প্রকল্পে বাড়ির টাকার তাঁর প্রয়োজন নেই। মানিক বলেন, “আমার সামান্য জমি। নতুন বাড়ি তৈরির জায়গা সেখানে নেই। আমার জন্য বরাদ্দ টাকা কোনও দুঃস্থ মানুষ পেলেই খুশি হব।”
মানিকের এমন পদক্ষেপ নিয়ে চর্চা ছড়িয়েছে জেলাতেও। জেলা পরিষদের সহ-সভাধিপতি দুলাল দেবনাথ বলেন, “আমি মানিকের বাড়িতে গিয়েছি। নিজে বাড়ি তৈরি করার পরে, উনি আবাস তালিকা থেকে নাম কাটার আবেদন জানিয়েছেন। সে জন্যে ওঁকে ফের সংবর্ধনা দেওয়া হবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy