Advertisement
২৬ ডিসেম্বর ২০২৪
যাচ্ছেন জরুরি কাজে, মেয়েকে বলেছিলেন সুভাষ

‘কেন যে জোর করলাম না, তা হলে হয়তো বাবাকে মরতে হতো না’

শনিবার নানুরের বঙ্গছত্র গ্রামের কাছে তাঁর মোটরবাইকের হদিস মেলে। সোমবার দুবরাজপুর থানা এলাকা থেকে উদ্ধার হয় তাঁর খণ্ডবিখণ্ড মৃতদেহ।

দুবরাজপুরের ধানখেতে সুভাষ দে-র খণ্ডিত দেহ (ইনসেটে) ধৃত মতিউর শেখ ও সোনালি। ছবি: দয়াল সেনগুপ্ত, বিশ্বজিৎ রায়চৌধুরী

দুবরাজপুরের ধানখেতে সুভাষ দে-র খণ্ডিত দেহ (ইনসেটে) ধৃত মতিউর শেখ ও সোনালি। ছবি: দয়াল সেনগুপ্ত, বিশ্বজিৎ রায়চৌধুরী

অর্ঘ্য ঘোষ
নানুর শেষ আপডেট: ২২ অক্টোবর ২০১৯ ০১:০০
Share: Save:

বোলপুরে জরুরি কাজ সেরে ছোটমেয়ের বাড়ি যাওয়ার কথা ছিল সুভাষ দে-র। নানুরের বাসাপাড়ার নিহত সেই সিপিএমের শাখা কমিটির প্রাক্তন সদস্যের ছোটমেয়ে শুচিস্মিতা দে বলছেন, ‘‘কিন্তু জরুরি প্রয়োজনে বোলপুর থেকে ইলামবাজার যেতে হবে বলে ফোনে জানিয়েছিল বাবা।’’ তাঁর আক্ষেপ, ‘‘কেন যে সে দিন জোর করলাম না। তা হলে হয়তো বাবাকে মরতে হতো না।’’

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, শুক্রবার সকাল ৮টা নাগাদ মোটরবাইকে বোলপুরে বিমা অফিসে গিয়েছিলেন সুভাষবাবু। শনিবার নানুরের বঙ্গছত্র গ্রামের কাছে তাঁর মোটরবাইকের হদিস মেলে। সোমবার দুবরাজপুর থানা এলাকা থেকে উদ্ধার হয় তাঁর খণ্ডবিখণ্ড মৃতদেহ।

নিহতের পারিবারিক সূত্রে জানা গিয়েছে, সুভাষবাবুর স্ত্রী মিনতিদেবী এবং দুই মেয়ে বর্তমান। বড়মেয়ে তুয়াসা সিংহের বিয়ে হয়েছে লাভপুরের ভালাসে। ময়ূরেশ্বরের কোটাসুরে শ্বশুরবাড়ি ছোটমেয়ে শুচিস্মিতার। সুভাষবাবু এক সময় সিপিএমের বাসাপাড়া শাখা কমিটির সদস্য ছিলেন। সিপিএম নিয়ন্ত্রিত বাসাপাড়া মুটিয়া-মজদুর ইউনিয়নের সম্পাদকও ছিলেন। ২০০০ সালে নানুরের সূঁচপুর গণহত্যা মামলায় যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত হিসেবে কিছু দিন জেলও খেটেছেন। পরে উচ্চ আদালত থেকে বেকসুর খালাস পান।

সুভাষবাবুর পরিজনেরা জানান, তিনি বিমা এজেন্ট ছিলেন। সক্রিয় রাজনীতি করতেন না। তবে সিপিএমের নানুর জোনাল কমিটির সম্পাদক আসগর আলি বলেন, ‘‘তিনি আমাদের দলের সদস্য ছিলেন। নিখোঁজ হওয়ার পরে পুলিশ তৎপর হলে হয়তো তাঁকে খুন হতে হতো না৷ তাঁর কোনও বিবাহ বহির্ভূত সম্পর্কের কথাও জানা নেই।’’

একই দাবি সুভাষবাবুর বড়মেয়ে তুয়াসারও। তিনি বলেন, ‘‘আসল ঘটনা আড়াল করার জন্য ওই অভিযোগ করা হচ্ছে। যে মেয়েটির সম্পর্কে এ সব কথা বলা হচ্ছে, ও বাবাকে কাকা বলে ডাকত। ওর বাবা সোনাকাকু আমাদের সুখ-দুঃখের সঙ্গী। তাঁর মেয়েকে বাবা নিজের মেয়ের মতো দেখত। বাবা নিজে দাঁড়িয়ে ওর বিয়ে দিয়েছে।’’

অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছেন ছোটমেয়ে শুচিস্মিতাও। তিনি বলেন, ‘‘বোলপুর থেকে আমার শ্বশুরবাড়িতে আসার কথা ছিল বাবার। তার পরে যেতেন ষাটপলশায় লক্ষ্মীপুজো দেখতে। কিন্তু শুক্রবার দুপুর সাড়ে তিনটে নাগদ ফোন করে বলে, ওকে ইলামবাজারে কাজে যেতে হচ্ছে। শনিবার আমার বাড়িতে আসবেন।’’

স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, সুভাষবাবু মুটিয়া-মজদুর ইউনিয়নের সম্পাদক থাকাকালীন ওই এলাকায় আড়তে শ্রমিকের কাজ করতেন আটকুল্লার সোনা শেখ। সেই সুবাদে সোনার সঙ্গে তাঁর ঘনিষ্ঠতা তৈরি হয়। একে অন্যের বাড়িতেও যাতায়াত ছিল। পরে ওই ইউনিয়ন তৃণমূলের নিয়ন্ত্রণে চলে যায়। কাজ হারান সোনা। কিন্তু দু’জনের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়নি। কাজ খুঁজতে সোনাকে সাহায্য করেছিলেন সুভাষবাবু।

পুলিশের বক্তব্য, সোনা শেখের মেয়ে সোনালির সঙ্গে সেই সময়েই পরিচয় সুভাষবাবুর। সোনালির মা পিয়ারুল বিবি। সোমবার সুভাষবাবুর বাড়িতে যান। তিনি বলেন, ‘‘ওদের মধ্যে কাকা-ভাইঝির সম্পর্ক ছিল। জামাই সন্দেহের বশে খুন করেছে।’’

যদিও নানুরে পুলিশের গাড়িতে বসে খুনের ঘটনায় অভিযুক্ত মতিউর শেখ বলেন, ‘‘ও জোর করে আমার স্ত্রীয়ের সঙ্গে অসভ্যতা করছিল। সেই রাগে আমি ওর মাথায় শাবল দিয়ে আঘাত করি।’’

অন্য বিষয়গুলি:

Crime Murder LIC Agent CPM leader
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy