বজ্রনিরোধক ছাতার স্টিক তৈরিতে ব্যস্ত শ্রেয়ক। নিজস্ব চিত্র
বাবার সঙ্গে স্কুলে যাওয়ার সময় রাস্তার পাশের পুকুরে খুব কাছ থেকে বাজ পড়তে দেখে চমকে গিয়েছিল ষষ্ঠ শ্রেণির ছাত্রটি। পরে এক দিন সংবাদমাধ্যমে সে জেনেছিল বিহারে একই দিনে বজ্রপাতে ২০ জনের মৃত্যু হয়েছে। খুদে মনে আলোড়ন পড়েছিল। পরে স্কুলে যখন শিক্ষকেরা বিজ্ঞানভিত্তিক বিভিন্ন মডেল বানানোর কাজ দিলেন, ওই ছাত্র বানাতে চাইল বজ্রনিরোধক ছাতা।
শুধু চাওয়া নয়, পূর্ব মেদিনীপুরের ভগবানপুর-২ ব্লকের বাসিন্দা, স্থানীয় বাহাদুরপুর শিক্ষা নিকেতনের ছাত্র শ্রেয়ক পন্ডা বজ্রনিরোধক ওই ছাতা বানিয়েও ফেলেছে। এমন ভাবনা আর কাজের জন্য জাতীয় স্তরে পুরস্কৃত হতে চলেছে সে। আগামী ৫ সেপ্টেম্বর শিক্ষক দিবস উপলক্ষে তাকে পুরস্কৃত করবে জাতীয় শিশু বিজ্ঞান কংগ্রেস।
করোনা আবহে প্রায় দু’বছর স্কুলের পঠনপাঠন বন্ধ। বাড়িতে থেকেই বিজ্ঞানভিত্তিক মডেল তৈরির প্রতিযোগিতা ‘চিল্ড্রেন সায়েন্স কংগ্রেস, ২০২০-২১-এ যোগ দিয়েছিল শ্রেয়ক। কেন্দ্রীয় সরকারের ‘ন্যাশন্যাল কাউন্সিল ফর সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি’র সহযোগিতায় এবং রাজ্য ‘সায়েন্স কমিউনিকেটর ফোরাম’ গত ২০ জানুয়ারি ভার্চুয়াল মাধ্যমে ওই প্রতিযোগিতার আয়োজন করেছিল। তার জন্যই ‘থান্ডারস্টিক ফর ফারমার্স’ মডেল তৈরি করে শ্রেয়ক।
শ্রেয়ক জানাচ্ছে, আমরা সাধারণত যে ছাতা ব্যবহার করি, তার শিকগুলো উপরের দিকে উল্টো করে রেখে তা থেকে একটি লোহার সরু তার মাটিতে পুঁতে দিতে হবে। এতে আশেপাশে বাজ পড়লে, তা লোহার তারকে আকর্ষণ করবে এবং তার মাধ্যমেই মাটিতে মিশে যাবে। এই ছাতা পাশে রেখে মাঠে কাজ করলে প্রাণে বাঁচবে চাষিরা। শ্রেয়কের কথায়, ‘‘মাঠে কাজ করার সময় চাষিরা এই স্টিক ব্যবহার করতে পারেন। স্টিকটিকে যদি ১৫-২০ ফুট উঁচুতে ধরে রাখা যায়, তবে অনেকটা বড় এলাকার মানুষ রক্ষা পাবেন। কাজ মিটে গেলে স্টিকটি ছাতার মতোই গুটিয়ে রাখা যাবে।’’ তবে তার মাটিতে পুঁততে হবে বলে এই ছাতা হাতে নিয়ে চলা যাবে না।
রাজ্যস্তরেও শ্রেয়কের এই মডেল সাফল্য পেয়েছে। তাকে এই স্টিক বানানোর কাজে সাহায্য করেছেন স্কুলের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক নিতাইচরণ পাত্র। শিক্ষকেরা জানাচ্ছেন, আবহাওয়া পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে দিন দিন বজ্রবিদ্যুৎ-সহ বৃষ্টিপাত বাড়ছে। চলতি বছর জুনে এক দিনেই পশ্চিমবঙ্গে ২৭ জন বজ্রাঘাতে মারা গিয়েছেন। ফলে শ্রেয়কের মডেলের কার্যকারিতা রয়েছে বলেই মনে করা হচ্ছে। শ্রেয়ক যে স্কুলে পড়ে, সেখানেই ইংরেজির শিক্ষক তার বাবা অসীমকুমার পন্ডা। তিনিও বলেন, ‘‘বজ্রপাতে মৃত্যু ঠেকাতে এই মডেল বাস্তবে ব্যবহারের জন্য সরকারের ভাবনাচিন্তা করা দরকার।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy