সন্দেশখালিতে চরম উত্তেজনা। —ফাইল চিত্র।
ধামাখালি পৌঁছতে তখনও কিছুটা বাকি। সরবেড়িয়া দিয়ে বাস এগোচ্ছিল। কিন্তু এগোনো হল না। রাস্তায় তখন কয়েকশো মানুষ। হাতে লাঠিসোঁটা, হকি স্টিক। সকলেই খুব উত্তেজিত।
কী হয়েছে? দুর্ঘটনা নাকি? বাইরে মুখ বাড়িয়ে খোঁজখবর করতে যাচ্ছিলেন বাসের কেউ কেউ। তখনই এল হুমকি: রাস্তা থেকে বাস সরাও। না হলে ভাঙচুর হবে।
বছর তিনেক হল নার্সিংয়ের কাজে কলকাতা থেকে সন্দেশখালি যাচ্ছি। কখনও এমন মারমুখি জনতা দেখিনি। হুমকি শুনে মনে হল, এমন পরিস্থিতি তো টিভি-তে দেখি। নিজে কখনও সামনে পড়িনি। যাত্রীদের মধ্যে তখন আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। আমার নিজেরই হাত-পা কাঁপছিল। এক বার ভাবলাম, নীচে নেমে পরিচয় দিই যে, আমি স্বাস্থ্যকর্মী। আমাকে তো কাজের জায়গায় পৌঁছতে হবে।
সেই মতো নেমে একটু এগোতেই এক বয়স্ক ব্যক্তিকে পেলাম। তাঁকেই হাত জোড় করে বললাম, ‘‘চাচা আমি নার্স। হাসপাতালে যেতেই হবে। দয়া করে সাহায্য করুন।’’ তিনি ব্যাপারটা বুঝলেন। ওঁর পিছন পিছন ভিড়ের পাশ কাটিয়ে এগোতে লাগলাম।
প্রায় এক কিলোমিটার পেরিয়েও দেখি মারমুখি জনতার ভিড়। দেখলাম, লাঠি-রড দিয়ে একটা গাড়ি ভাঙছে কয়েক জন। ইট-পাটকেল ছোড়া হচ্ছে। কাচ ভেঙে চৌচির। আর এক জায়গায় দেখলাম, গাড়িতে বসে থাকা কয়েক জনকে বাঁচাতে জনতার কাছে হাতজোড় করে কাকুতি-মিনতি করছেন জওয়ানের পোশাকে, কাঁধে বন্দুকধারী কয়েক জন। পরিস্থিতি যে তাঁদের নিয়ন্ত্রণে নেই, বোঝাই যাচ্ছিল। জওয়ানদের গালাগাল করা হচ্ছিল। ধাক্কাধাক্কি করা হচ্ছিল। তখনও জানি না, কেন এই পরিস্থিতি।
ততক্ষণে আমার পরিত্রাতা সেই বৃদ্ধের মুখেও চিন্তার ছাপ। পুরো রাস্তায় তেমন কোনও কথা হয়নি ওঁর সঙ্গে। এক-দু’বার জানতে চেয়েছিলাম, কী হয়েছে। দেখলাম, তা নিয়ে কথা বলতে চাইছেন না। পরিচিত এক যুবককে ডেকে বৃদ্ধ তাঁর মোটরবাইকে উঠতে বললেন। যুবককে বললেন, ‘‘ইনি হাসপাতালের নার্স-দাদা। বাইকে করে ধামাখালি পৌঁছে দাও।’’
পথে দেখলাম, কোনও গাড়ি চলছে না। ধামাখালিতে সার সার অটো দাঁড়িয়ে। বাইকের চালকের মুখ ঢাকা ছিল মাফলারে। তিনিও গোটা পথ কোনও কথা বললেন না। আমি
চুপটি করে বসে। ধামাখালি পৌঁছে কিছুটা নিশ্চিন্ত লাগছিল। তবে মনে পড়ছিল, বাসে থাকা মহিলা, শিশু, বয়স্ক সহযাত্রীদের কথা। তাঁরা কতক্ষণে উদ্ধার পেলেন, কে জানে! নদী পেরিয়ে হাসপাতালে পৌঁছে
সব শুনলাম।
রাতটা হাসপাতালের কোয়ার্টার্সেই থেকে যেতে বললেন বাড়ির সকলে। এই এলাকাতে ফের আসতে হবে, কাজকর্ম করে বাসও করতে হবে। তাই সংবাদমাধ্যমে নাম বলতে চাইছি না।
পরিচয়: সন্দেশখালির স্বাস্থ্যকর্মী
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy