Advertisement
E-Paper

সসম্মানে বাঁচার অধিকার দিতে চাই অটিজ়ম নিয়ে সরকারি উদ্যোগ

অন্যের সঙ্গে সংযোগ স্থাপন ও সামাজিক মেলামেশা করবেন, তার উপরে প্রভাব ফেলে এই ডিজ়অর্ডার। এর জন্য অন্য কারও সঙ্গে সামাজিক এবং সাধারণ যোগাযোগের ক্ষেত্রে সমস্যা সৃষ্টি হয়।

যশোধরা চৌধুরী

শেষ আপডেট: ০২ এপ্রিল ২০২৫ ০৮:৫৬
Share
Save

অটিজ়ম স্পেকট্রাম ডিজ়অর্ডার মস্তিষ্কের বিকাশের সঙ্গে সম্পর্কিত একটি অবস্থা। কোনও ব্যক্তি কী ভাবে অন্যের সঙ্গে সংযোগ স্থাপন ও সামাজিক মেলামেশা করবেন, তার উপরে প্রভাব ফেলে এই ডিজ়অর্ডার। এর জন্য অন্য কারও সঙ্গে সামাজিক এবং সাধারণ যোগাযোগের ক্ষেত্রে সমস্যা সৃষ্টি হয়। অটিস্টিক ব্যক্তিদের মধ্যে আচরণের
সীমাবদ্ধতা এবং একই আচরণ বার বার করা অর্থাৎ পুনরাবৃত্তিমূলক বিন্যাসও দেখা যায়।

এপ্রিল মাসটি নির্ধারিত করা হয়েছে অটিজ়ম সচেতনতার মাস হিসেবে। তাই আমাদের একটু বুঝে নেওয়া প্রয়োজন, কেন এই বিষয়ে সচেতনতা দরকার। বর্তমান সমীক্ষা বলছে, প্রতি ৬৮ জন শিশুর মধ্যে এক জনের অটিজ়ম থাকা সম্ভব। অটিজ়ম জন্মের পরে নির্ধারণ করা যায় না। একটি শিশুর তিন বছর বয়সের মধ্যে কিছু বিশেষ লক্ষণ প্রকাশ পায়, যার দ্বারা চিকিৎসকেরা অটিজ়ম ডিজ়অর্ডার নির্ণয় করতে পারেন। লক্ষণগুলি জেনে রাখা অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। কারণ, যত তাড়াতাড়ি বিষয়টি বোঝা যাবে, তত দ্রুত থেরাপি এবং ঠিক প্রশিক্ষণ-সহ শিশুটিকে সাবলম্বী করে তোলার দিকে এগোনো যাবে। পাশাপাশি, কিছু স্নায়ুরোগ আছে, যার লক্ষণগুলি অটিজ়মের সঙ্গে মিলে যায়। তবে সেই রোগের চিকিৎসা সম্ভব। আগে নির্ণয় হলে ওই রকম কিছু রোগ সম্পূর্ণ নির্মূলও করা সম্ভব।

একটি শিশু ১৫ মাসের পরেও যদি নিজের নাম শুনে সাড়া না দেয়, একটি-দু’টি কথাও না বলে, একা এবং নিজের ছন্দে এক ধরনের খেলাই খেলে যায়, বাইরের জগতের সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপনে গভীর অনাগ্রহ প্রকাশ করে, তা হলে মা-বাবার সতর্ক হওয়া প্রয়োজন। দ্রুত বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত এ ক্ষেত্রে।

অটিজ়ম নিয়ে সাধারণ সমাজ এখনও পর্যাপ্ত পরিমাণে সচেতন হয়ে ওঠেনি। তবে এই সচেতনতার প্রভূত প্রয়োজন, কারণ অনেক সময়ে কাউকে কাউকে দেখে বোঝা যায় না যে তিনি অটিস্টিক। তাই নানা সচেতনতা কর্মসূচির মাধ্যমে জনমানসে এই ব্যাপারে সচেতনতা গড়ে তোলার একান্ত প্রয়োজন রয়েছে।

অস্টিটিক মানেই যে বুদ্ধির ঘাটতি আছে, তা নয়। অটিজ়ম স্পেকট্রামে থাকা মানুষগুলির মধ্যে অনেকে বিশেষ প্রতিভাধরও হন। তবে, এ-ও ভাবা অমূলক যে, অটিস্টিক হলে তিনি কোনও বিশেষ গুণের অধিকারী হবেনই। অটিস্টিক মানুষদের মূল সমস্যা হল প্রথাগত উপায়ে অন্য মানুষের সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপনের অপারগতা, মৌখিক ভাষার কিছু সূক্ষ্ম তারতম্য না বোঝা
এবং মৌখিক ভাষা ছাড়া অন্যের অভিব্যক্তি দেখে মনের স্থিতি বোঝার অক্ষমতা, অর্থাৎ থিয়োরি অব মাইন্ডের ঘাটতি।

সকলকে মনে রাখতে হবে, অটিজ়ম স্পেকট্রাম ডিজ়অর্ডার শিশু বড় হলে সেরে যায় না। যে বাচ্চাটি আজ অটিস্টিক, সে বড় হলেও অটিস্টিক থাকবে। তবে ছোট থেকে ঠিক প্রশিক্ষণ পেলে আস্তে আস্তে সে সাবলম্বী হয়ে উঠবে। শুধু সচেতনতা নয়, স্পেকট্রামে থাকা মানুষদের সুস্থ, সুন্দর জীবনযাপনের জন্য লাগবে সরকারি সাহায্য ও প্রকল্প। সরকার নতুন প্রকল্প ও উদ্যোগ নিয়ে এই মানুষদের পাশে দাঁড়াবে, আগামী দিনের জন্য এই আশাই থাকবে। অটিস্টিক মানুষেরা সকলেই আমাদের মতো এই দেশের বাসিন্দা। সব অধিকার নিয়ে, সসম্মানে বাঁচার সমান দাবি তাঁদের রয়েছে।

(পেডিয়াট্রিক নিউরোলজিস্ট)

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Autism awareness

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

{-- Slick slider script --}}