E-Paper

সাজা শেষ, তবুও ঘোচেনি বন্দিদশা

নিম্ন আদালতের নির্দেশ ছিল, কারাবাসের সাজা শেষ হলে অভিযুক্তকে মায়ানমারে ফেরত পাঠানোর ব্যবস্থা করতে হবে। সাজা শেষে সেই আর্জি জানানো হয়েছিল। কিন্তু প্রশাসনিক অনুমতি না মেলায় মুক্তি পাননি ফরিদুল।

— প্রতীকী চিত্র।

সব্যসাচী ভট্টাচার্য

শেষ আপডেট: ১৩ এপ্রিল ২০২৫ ০৮:২৫
Share
Save

প্রাণ বাঁচাতে দেশ সপরিবারে দেশ ছেড়েছিলেন মায়ানমারের ফরিদুল আলম। সীমান্ত পেরিয়ে ভারতে ঢুকে চলে আসেন পশ্চিমবঙ্গে। কিন্তু এখানে ধরা পড়ে যান তিনি। ২০১৬ সালের মে মাসে হাওড়া স্টেশনে রেল পুলিশের হাতে ধরা পড়ার পরে রোহিঙ্গা পরিচয় জানাজানি হয়। ঠাঁই হয় জেলে। পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েন তিনি। হাওড়া কোর্টের বিচারে সওয়া বছরের কারাবাসের সাজা হয়েছিল ফরিদুলের। কিন্তু আজও তিনি জেলবন্দি!

নিম্ন আদালতের নির্দেশ ছিল, কারাবাসের সাজা শেষ হলে অভিযুক্তকে মায়ানমারে ফেরত পাঠানোর ব্যবস্থা করতে হবে। সাজা শেষে সেই আর্জি জানানো হয়েছিল। কিন্তু প্রশাসনিক অনুমতি না মেলায় মুক্তি পাননি ফরিদুল। তিনি দিল্লিতে রাষ্ট্রপুঞ্জের মানবাধিকার সংগঠনের রোহিঙ্গা ত্রাণ শিবিরেও যেতে পারেননি। এ ভাবেই প্রায় ছ’বছর পেরিয়ে হাই কোর্টের দ্বারস্থ হয়েছেন ফরিদুল। তাঁর আর্জি, জেল থেকে মুক্তি দিয়ে দিল্লির শিবিরে স্ত্রী-সন্তানের কাছে যেতে দেওয়া হোক। ফরিদুলকে মুক্তি দিয়ে ত্রাণ শিবিরে ফেরানোর ব্যাপারে কেন্দ্রীয় সরকারের বক্তব্য জানতে চেয়েছিলেন বিচারপতি অমৃতা সিংহ। কিন্তু কেন্দ্র এখনও নির্দিষ্ট বক্তব্য জানাতে পারেনি। সর্বশেষ শুনানিতে কেন্দ্রীয় সরকারের কৌঁসুলি ফের সময় চেয়েছেন।

ফরিদুলের আইনজীবী আফরিন বেগম বলছেন, “আমার মক্কেলকে অবৈধ ভাবে আটকে রাখা হয়েছে। আদালতের ঘোষিত সাজা শেষ হওয়ার পরে ছ’বছর কেটে গেলেও বন্দিদশা ভোগ করতে হচ্ছে তাঁকে।” আফরিন বলছেন, ফরিদুলের সঙ্গে যা হচ্ছে তা সংবিধান লঙ্ঘনের সামিল। বিশেষ করে ১৪ নম্বর এবং ২১ নম্বর অনুচ্ছেদে যা বলা হয়েছে তার সঙ্গে ফরিদুলের পরিস্থিতি সম্পূর্ণ বিপরীত। ফরিদুলের মুক্তির পক্ষে সওয়াল করতে গিয়ে আফরিন আদালতে দু’টি রায়ের প্রতিলিপিও পেশ করেছেন। তার মধ্যে ২০২১ সালে খোদ কলকাতা হাই কোর্ট মায়ানমারের এক রোহিঙ্গা উদ্বাস্তুকে দিল্লিতে রাষ্ট্রপুঞ্জের শরণার্থী শিবিরে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছিল। দ্বিতীয় ক্ষেত্রে ১৯৯৭ সালে আফগানিস্তানের নাগরিক দু’জন আবেদনকারীকেও দিল্লিতে রাষ্ট্রপুঞ্জের শরণার্থী শিবিরে পাঠানোর নির্দেশ দেয় পঞ্জাব ও হরিয়ানা হাই কোর্ট।

আইনজীবীদের একাংশের পর্যবেক্ষণ, ভারত ১৯৫১ সালের উদ্বাস্তু কনভেনশনে স্বাক্ষর করেনি। তাই দেশে উদ্বাস্তুদের নিয়ে কোনও নির্দিষ্ট রূপরেখা নেই। তবে বাংলাদেশ, তিব্বত, শ্রীলঙ্কা ইত্যাদি দেশে অতীতে অশান্ত পরিস্থিতির সময়ে ভারত উদ্বাস্তুদের ঠাঁই দিয়েছে। এ ক্ষেত্রে রাষ্ট্রপুঞ্জের মানবাধিকার শাখার সঙ্গে সমন্বয় করে ভারত কাজ করে। আবার নিজের দেশে ফিরলে প্রাণনাশের আশঙ্কা থাকলে বিদেশ থেকে আসা নাগরিকেরা এ দেশের কোর্টের দ্বারস্থ হতে পারেন। সে দিক থেকে ফরিদুলকে মুক্তি দিয়ে কী করা যেতে পারে, সেই ব্যাপারে কেন্দ্রের অবস্থান গুরুত্বপূর্ণ। আগামী ৭ মে কেন্দ্র কলকাতা হাই কোর্টে সেই অবস্থান জানাতে পারে, মনে করছেন অনেকে।

আইনের এই জটিলতার মাঝেই কারাগারের অন্তরালে দিন গুণছেন ফরিদুল। তাঁর চোখ দিল্লির দিকে!

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Myanmar Howrah Court

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

এটি একটি প্রিন্ট আর্টিক্‌ল…

  • এমন অনেক খবরই এখন আপনার হাতের মুঠোয়

  • সঙ্গে রোজ পান আনন্দবাজার পত্রিকার নতুন ই-পেপার পড়ার সুযোগ

  • ই-পেপারের খবর এখন শুধুই ছবিতে নয়, টেক্সটেও

প্ল্যান সিলেক্ট করুন

ক্যানসেল করতে পারবেন আপনার সুবিধামতো

Best Value
প্রতি বছরে

৫১৪৮

১৯৯৯

প্ল্যানটি সিলেক্ট করে 'Subscribe Now' ক্লিক করুন।শর্তাবলী প্রযোজ্য।
*মান্থলি প্ল্যান সাপেক্ষে
প্রতি মাসে

৪২৯

১৬৯

প্ল্যানটি সিলেক্ট করে 'Subscribe Now' ক্লিক করুন।শর্তাবলী প্রযোজ্য।