ঘটনাস্থল পরিদর্শনে পূর্ব রেলের কর্তারা। রবিবার। নিজস্ব চিত্র
দুর্ঘটনার পরে রাত পেরিয়ে গেলেও আতঙ্ক কাটেনি সালামত মণ্ডল, সানাই শেখদের। প্রতিদিন নানা কারণে যেখান দিয়ে যাতায়াত করেন, চোখের সামনে ভেঙে পড়তে দেখেছেন সেই ভবনের অংশ। রবিবার তাঁরা বলেন, ‘‘এখনও যেন চোখের সামনে ভাসছে ছবিটা!’’
সালামত বলেন, ‘‘ওই জায়গার কাছেই ৩৫ বছর ধরে পেয়ারা বিক্রি করি। সন্ধ্যায় বাড়ি ফিরি। শনিবার দেরি হয়েছিল। চেনা বাড়িটা ভেঙে পড়তে দেখে খুব ভয় পেয়ে গিয়েছি। এখনও আতঙ্ক কাটেনি।’’ রিকশা চালক সানাই বলেন, ‘‘এক অসুস্থ যাত্রীকে ১ নম্বর প্ল্যাটফর্মে পৌঁছতে গিয়েছিলাম। ওই থামের পাশ দিয়ে এটিএম কাউন্টারের কাছে যেতেই ভেঙে পড়ার আওয়াজ পাই। এখনও যেন সেটা কানে লেগে আছে।’’
শনিবার রাতে বর্ধমান স্টেশনে দুর্ঘটনার সময়ে তিনি ওই এলাকাতেই ছিলেন বলে জানান বর্ধমান-দুর্গাপুরের প্রাক্তন সিপিএম সাংসদ সাইদুল হক। তিনি বলেন, ‘‘ট্রেন থেকে নেমে ওই রাস্তা ধরে বেরিয়েই রিকশায় উঠি। তার খানিক পরেই ভবনের অংশটি ভেঙে পড়ে।’’ তিনি দাবি করেন, সাংসদ থাকাকালীন বৈজ্ঞানিক ভাবে ওই ভবন সংস্কারের দাবি জানিয়েছিলেন তিনি।
এ দিন সকালে বর্ধমান স্টেশনে গিয়ে দেখা যায়, দুর্ঘটনার পরে অনেকটা সময় কেটে গেলেও ধ্বংসস্তূপ সরানোর কাজ শেষ হয়নি। স্টেশনের মূল প্রবেশপথটি শনিবার গভীর রাতেই ত্রিপল দিয়ে ঘিরে দেওয়া হয়েছে। এটিএম কাউন্টারের পাশ দিয়ে টিকিট কাউন্টারের যাতায়াতের রাস্তাও বন্ধ করে দিয়েছে রেল পুলিশ। রবিবার টিকিট কাটতে গিয়ে সমস্যায় পড়েন যাত্রীরা। তাঁদের একাংশের দাবি, ছুটির দিন হওয়ায় ভিড় ছিল না। আজ, সোমবার সপ্তাহের প্রথম দিনে নিত্যযাত্রীদের ভিড় হবে। টিকিট কাটার জন্য বিকল্প ব্যবস্থা না হলে সমস্যা দেখা দেবে বলে মনে করছেন তাঁরা।
ওই যাত্রীরা জানান, এক নম্বর প্ল্যাটফর্মে যাওয়ার জন্যে গুড্সশেডের কাছে একটি দরজা ব্যবহার করা যাচ্ছে। বাকি দু’টি দরজা বন্ধ রয়েছে। ২ থেকে ৮ নম্বর প্ল্যাটফর্মে যাওয়ার জন্য নতুন ফুট ওভারব্রিজ ব্যবহারও ‘নিয়ন্ত্রণ’ করছে আরপিএফ। টিকিট কাউন্টারের সামনে ওই ফুট ওভারব্রিজের পাশেই চলমান সিঁড়ি বসানোর কাজ চলায় একটা বড় অংশ টিন দিয়ে ঘেরা রয়েছে। সে জন্য যাত্রীদের একাংশের অসুবিধা হচ্ছে বলে তাঁরা জানান। অন্য ফুট ওভারব্রিজেও যাত্রী নিয়ন্ত্রণ করছিল রেল পুলিশ। সকালে স্টেশনের বিভিন্ন প্ল্যাটফর্ম ও ফুট ওভারব্রিজে কুকুর নিয়ে টহল দেয় পুলিশ। প্ল্যাটফর্মের দিকে মূল গেটের কাছ থেকে রেলের ডাক বিভাগের দফতরে ‘তালা’ দিয়ে দেওয়ায় কাজ ব্যাহত হয়েছে। এ দিন কোনও ডাক বর্ধমান থেকে যায়নি।
স্টেশনের বিভিন্ন হকার, স্টল ব্যবসায়ীরা দাবি করেন, এ দিন যাত্রী ছিল না বললেই চলে। বিক্রিবাটাও তেমন হয়নি। প্ল্যাটফর্মে থাকা চায়ের দোকানও বন্ধ করে দেন ব্যবসায়ীরা। স্টেশন ঢোকার মুখে দু’দিকে চা, চপ, লুচি— নানা রকম দোকানের পসরা রয়েছে। সেখানকার ব্যবসায়ীরাও জানান, এ দিন খরিদ্দার মেলেনি। একই বক্তব্য টোটো ও রিকশা চালকদেরও।
ক্ষতিগ্রস্ত ঝুল-বারান্দার বাকি অংশ যাতে ভেঙে না পড়ে, এ দিন সকাল থেকে তা দেখভাল করেন রেল-কর্তারা। সকাল থেকে ট্রাকে করে ‘সিসি ক্রিপ’ নিয়ে আসা হয়। সেগুলি তিন জায়গায় পরপর উঁচু করে সাজিয়ে বারান্দা রক্ষার ব্যবস্থা হয়। পূর্ব রেলের মুখ্য জনসংযোগ আধিকারিক নিখিল চক্রবর্তী বলেন, ‘‘ইঞ্জিনিয়ারেরা দেখার পরে, ভবনের ভবিষ্যৎ ঠিক হবে।’’
রাতভর স্টেশনে ছিলেন রাজ্যের মন্ত্রী তথা জেলা তৃণমূলের সভাপতি স্বপন দেবনাথ। তাঁর অভিযোগ, ‘‘রেলের গাফিলতির জন্যই ভবন ধসে পড়ল। বাইরে চাকচিক্য আর ভিতরটা ফাঁপা। কেন্দ্র সরকারের নীতির জন্যেই এই দশা।’’ সিপিএমের জেলা সম্পাদক অচিন্ত্য মল্লিকেরও অভিযোগ, ‘‘ওই ভবনের একাংশে এখনও ফাটল রয়েছে, ক্ষতির সম্ভাবনা আছে। রেল এ নিয়ে গুরুত্ব দেয়নি। শুধুমাত্র উপরের সৌন্দর্যায়ন করে দায় সেরেছে।’’
এ দিন হুগলির বেগমপুরে এক কর্মসূচিতে গিয়ে বিজেপি সাংসদ লকেট চট্টোপাধ্যায় এই দুর্ঘটনা নিয়ে অবশ্য রাজ্য সরকারকেই পাল্টা দোষ দেন। তাঁর অভিযোগ, ‘‘কেন্দ্র তো টাকা রাজ্য সরকারকে পাঠায়। রাজ্য সরকার সব তৈরি করে। কেন্দ্র তো ওখান থেকে মিস্ত্রি পাঠায় না। নিজেরা ওই টাকা খাওয়া-খাওয়ি করে চুন-সুরকি দিয়ে ওই রকম বানিয়েছে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy