ফাইল চিত্র।
কিষান মান্ডিতে ধান বেচতে না পেরে ফড়েদের বিরুদ্ধে প্রশাসনের কাছে লিখিত অভিযোগ জানিয়েছিলেন ঝাড়গ্রামের এক চাষি। তার জেরেই ওই চাষির বাড়িতে হামলা চালানোর অভিযোগ উঠল। চাষির বৃদ্ধ বাবাকে তুলে নিয়ে গিয়ে বন্দুক ঠেকিয়ে কয়েক ঘণ্টা আটকে রাখারও অভিযোগ উঠেছে।
বৃহস্পতিবার গভীর রাতে ওই ঘটনার পরে শুক্রবারই ঝাড়গ্রাম থানায় ফড়েদের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ জানিয়েছেন ঝাড়গ্রাম ব্লকের চন্দ্রি গ্রামের শিবনাথ সাউ। জেলার পুলিশ সুপার অরিজিৎ সিনহা বলেন, ‘‘মামলা রুজু হয়েছে। তদন্ত হচ্ছে।’’
শিবনাথ জানাচ্ছেন, গত এপ্রিলে ঝাড়গ্রামের কিষান মান্ডিতে ধান বিক্রির জন্য রেজিস্ট্রেশন করতে গিয়েছিলেন তিনি ও কয়েকজন ভাগচাষি। কিন্তু তাঁদের ফিরিয়ে দেওয়া হয়। গত বুধবার শিবনাথ ফের কিষান মান্ডিতে যান এবং আবারও ফিরিয়ে দেওয়া হয় তাঁকে। শিবনাথের অভিযোগ, ‘‘আমার সঙ্গে যে ভাগচাষিরা গিয়েছিলেন, ফড়েরা তাঁদের নামে রেজিস্ট্রেশন করিয়ে সেই অ্যাকাউন্ট ব্যবহার করছে। ভাগ চাষিরা বিনিময়ে ৩ হাজার টাকা পাচ্ছেন।’’ অথচ ধান কেনার প্রক্রিয়া দেখভালে কিষান মান্ডিতে তিন সদস্যের কমিটি রয়েছে। গত বুধবার শিবনাথ ওই কমিটির অন্যতম সদস্য ঝাড়গ্রামের যুগ্ম বিডিও-কে লিখিত ভাবে এই অনিয়মের অভিযোগ জানান। তাঁকে ফোনও করেন। যুগ্ম বিডিও বৈদ্যনাথ হেমব্রম মানছেন, ‘‘ওই চাষি ফোনে সব বলেছিলেন। কিন্তু আমার টেবিলে কাগজ এখনও আসেনি।’’
এরপরই বৃহস্পতিবার রাতে শিবনাথের বাড়িতে লোহার রড়, বন্দুক নিয়ে জনা বারো চড়াও হয় বলে অভিযোগ। শিবনাথের বাবা বৃদ্ধ ভবেশ সাউকে তারা তুলে নিয়ে যায়। শিবনাথ বলেন, ‘‘বাবাকে বন্দুক দেখিয়ে তুলে নিয়ে গিয়েছিল। তারপর সাদা কাগজে জোর করে সই করিয়েছে। রাত দেড়টা নাগাদ বাবাকে বাড়িতে ছাড়তে এসে আমাকেও বন্দুক দেখিয়ে সাদা কাগজে সই করতে বাধ্য করেছে ফড়েরা।’’ শিবনাথ বলছেন, ‘‘খুব ভয়ে আছি। বাড়ি থেকে বেরোলেই খুন করে দেবে।’’
চলতি অর্থবর্ষে কুইন্টাল প্রতি ধানের সরকারি দাম ১৯৪০ টাকা। আর স্থায়ী ধান্যক্রয় কেন্দ্রে (সিপিসি) গিয়ে ধান বেচলে উৎসাহ ভাতা বাবদ কুইন্টাল প্রতি আরও ২০ টাকা মেলে। স্বনির্ভর গোষ্ঠীর মহিলাদের মাধ্যমেও ধান কিনছে সরকার। কিন্তু তারপরেও জঙ্গলমহলের এই জেলা জুড়ে ফড়েরা চাষিদের থেকে ১২০০-১৪০০ টাকা কুইন্টাল দরে ধান কিনছে। অভিযোগ, যাঁদের জমি নেই তাঁদের নামে রেজিস্ট্রেশন করছে ফড়েরা। আবার ভাগচাষির নামেও রেজিস্ট্রেশন হচ্ছে। তারপর কম দামে কেনা ধান ফড়েরা এই সব চাষিদের অ্যাকাউন্ট দিয়ে সরকারকে বিক্রি করছে।
এর প্রতিবাদে চলতি বছরের গোড়ায় ঝাড়গ্রাম ব্লকের কিষান মান্ডিতে বিক্ষোভ দেখিয়েছিলেন তৃণমূলেরই একাংশ। সুরাহা হয়নি। ঝাড়গ্রাম ব্লকের বন ও ভূমি কর্মাধ্যক্ষ প্রফুল্ল মাহাতোর অভিযোগ, ‘‘প্রশাসনের একাংশ যুক্ত থাকায় ফড়েদের দাপট চলছেই।’’ তবে জেলা খাদ্য নিয়ামক সুজয় দাসের বক্তব্য, ‘‘ফড়েদের নিয়ে অভিযোগ আগে এসেছিল। স্থানীয় পারচেজ অফিসারদের কাছে বিষয়টি জানতে চেয়েছি। ওই চাষি কেন রেজিস্ট্রেশন করতে পারেননি খোঁজ নিয়ে দেখছি।’’
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, Twitter এবং Instagram পেজ।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy