মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। — ফাইল চিত্র।
এ যাবৎ টানা ১২ বছরের মুখ্যমন্ত্রিত্বের কালে তিনি একাধিক বার বিদেশসফরে গিয়েছেন লগ্নি আনতে। শেষ গিয়েছেন সাড়ে চার বছর আগে। তার পর মঙ্গলবার আবার বিদেশসফরে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সকালে কলকাতা থেকে রওনা হয়ে আপাতত তিনি দুবাইয়ে। বুধবার ভোরে দুবাই থেকে তিনি রওনা দেবেন স্পেনের রাজধানী মাদ্রিদের পথে। বৃহস্পতিবার থেকে শুরু তাঁর ঠাসা কর্মসূচি।
মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে এসেছেন রাজ্যের মুখ্যসচিব হরিকৃষ্ণ দ্বিবেদী, মুখ্যমন্ত্রীর মুখ্য উপদেষ্টা আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায় এবং শিল্পসচিব বন্দনা যাদব। এসেছেন মুখ্যমন্ত্রীর সচিব গৌতম সান্যাল। রাজ্যের প্রতিনিধিদলের সদস্য হয়ে এসেছেন একঝাঁক শিল্পপতিও।
গত ১২ বছরের শাসনকালে মমতা সিঙ্গাপুর, লন্ডন, স্কটল্যান্ড, জার্মানি, নেদারল্যান্ডস এবং ইটালিতে গিয়েছেন। কিন্তু এই প্রথম তিনি স্পেনে যাচ্ছেন। স্পেনের মাদ্রিদ এবং বার্সেলোনা শহরে মুখ্যমন্ত্রীর কর্মসূচি রয়েছে। মাদ্রিদ যাওয়ার পথে বিমানসূচির জন্য তাঁকে দুবাইয়ে থামতে হয়েছে। প্রসঙ্গত, এর আগেও যাওয়া-আসার পথে একাধিক বার দুবাই এসেছেন মমতা। কিন্তু এই প্রথম তাঁর দুবাইয়ে সরকারি কর্মসূচি রয়েছে। স্পেন থেকে কলকাতায় ফেরার পথে দুবাইয়ে প্রবাসী ভারতীয় এবং শিল্পপতিদের সঙ্গে বৈঠক করবেন মুখ্যমন্ত্রী। হবে লগ্নি-বৈঠকও। এই হল মমতা-সফরে প্রথম ‘প্রথম’।
মমতার এই সফরে দ্বিতীয় একটি ‘প্রথম’ও রয়েছে। এই প্রথম মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের প্রতিনিধি দলে যুক্ত হয়েছেন প্রকাশনা এবং ক্রীড়াজগতের সদস্যেরা। ‘পাবলিশার্স অ্যান্ড বুকসেলার্স গিল্ড’-এর দুই কর্তা ত্রিদিব চট্টোপাধ্যায় এবং সুধাংশু দে স্পেন যাচ্ছেন মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে। যাচ্ছেন কলকাতা ফুটবলের তিন প্রধানের তিন কর্তা। মোহনবাগানের দেবাশিস দত্ত, ইস্টবেঙ্গলের রূপক সাহা এবং মহামেডানের ইশতিয়াক আহমেদ। অর্থাৎ, এই সফরে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বাণিজ্যের পরিধি বাড়িয়ে নিয়েছেন। প্রকাশনা এবং আধুনিক ক্রীড়াকেও তিনি বাণিজ্যের আওতায় নিয়ে আসছেন। এই প্রথম।
এই ‘প্রথম’ সম্পর্কে ওয়াকিবহাল প্রকাশনা এবং ক্রীড়াক্ষেত্রের সদস্যেরাও। ত্রিদিবের কথায়, ‘‘বইজগৎকে এই সম্মান আগে কখনও কোনও সরকার দেয়নি। মুখ্যমন্ত্রী যে এত বড় বাণিজ্য প্রতিনিধি দলের সঙ্গে আমাদের যাওয়ার সুযোগ দিয়েছেন, সেটা অকল্পনীয় এবং অভাবনীয়!’’ আর সুধাংশুর কথায়, ‘‘প্রকাশনাও যে একটা শিল্পের মধ্যে পড়ে, সেটা মুখ্যমন্ত্রীর জন্য এই প্রথম অনুভব করতে পারছি।’’ ঘটনাচক্রে, গত কলকাতা বইমেলার ‘থিম কান্ট্রি’ ছিল স্পেন। ফলে সেখানকার প্রকাশনা সংগঠনের সঙ্গে আগেই চেনাশোনা রয়েছে কলকাতা বইমেলার কর্তাদের। ত্রিদিব জানাচ্ছেন, মাদ্রিদে তাঁদের সঙ্গে স্পেনের প্রকাশকদের বৈঠক রয়েছে। সেখানে মূলত তিনটি বিষয় নিয়ে আলোচনা হবে। প্রথম, অনুবাদ স্বত্ব। দুই, স্পেনীয় অনুদান এবং তৃতীয় গ্রন্থস্বত্ব। ত্রিদিবের কথায়, ‘‘বিদেশি বই বাংলায় ছাপতে গেলে ভারতীয় ভাষার গ্রন্থস্বত্ব প্রয়োজন হয়। সেই বিষয়টি নিয়ে আলোচনা এবং সমঝোতা হওয়া জরুরি।’’
মোহনবাগানের দেবাশিসের কথায়, ‘‘ভারতের আর কোনও রাজ্যের কোনও মুখ্যমন্ত্রী এ ভাবে ক্রীড়াকর্তাদের বিদেশ সফরে নিয়ে গিয়েছেন বলে আমার জানা নেই। আমি অত্যন্ত সম্মানিত। মোহনবাগান আইএসএল চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পর মুখ্যমন্ত্রী আমাদের ক্লাবে এসেই বলেছিলেন, ভারতের ফুটবলকে বিশ্বের দরবারে পৌঁছে দিতে হবে। এই সফর তারই প্রথম পদক্ষেপ।’’ মহামেডানের ইশতিয়াকের বক্তব্য, ‘‘এমন ক্রীড়াপ্রেমী মুখ্যমন্ত্রী গোটা দেশে নেই। উনি যে আমাদের বিদেশ সফরে নিয়ে যাওয়ার উপযুক্ত মনে করেছেন এতেই আমরা আপ্লুত এবং গর্বিত। স্পেনে গিয়ে ফুটবলকর্তাদের সঙ্গে দেখা করে যুব ফুটবলের উন্নয়ন, কোচ এবং খেলোয়াড় আদানপ্রদান নিয়ে কথা বলব। মহমেডান এবং গোটা দেশের ফুটবলের উন্নতি নিয়েও কথা বলার ইচ্ছে রয়েছে।’’
মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে যাচ্ছে শিল্পপতিদের একটি প্রতিনিধিদলও। সেই তালিকায় নাম রয়েছে সঞ্জীব গোয়েনকা, হর্ষবর্ধন নেওটিয়া, সঞ্জয় বুধিয়া থেকে শুরু করে সিকে ধানুকা, উজ্জ্বল সিন্হা, উমেশ চৌধুরী, তরুণ ঝুনঝুনওয়ালা, মেহুল মোহাঙ্কা, দিলীপ দুগার, সত্যম রায়চৌধুরী, সুমিত দাবরিওয়াল, রুদ্র চট্টোপাধ্যায়দের। থাকার কথা শাশ্বত গোয়েনকা, প্রশান্ত মোদী, শুভঙ্কর সেনদেরও। কিছু শিল্পপতি গোটা সফরটাই মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে থাকবেন। কয়েকজন যোগ দেবেন মাদ্রিদ এবং বার্সেলোনায়। আবার কয়েক জন দুবাইয়ের বাণিজ্য সম্মেলনে।
বুধবার বিকেলের পরে মাদ্রিদ পৌঁছবেন মুখ্যমন্ত্রী। বৃহস্পতিবার তাঁর সঙ্গে স্পেনের লা লিগার প্রেসিডেন্ট হাভিয়ার তেভাজ়ের বৈঠক। সেখানে থাকার কথা সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় এবং কলকাতার তিন প্রধান ক্লাবের কর্তাদের। বাংলায় আধুনিক ফুটবলের প্রসারের জন্য ওই বৈঠক। লা লিগার সঙ্গে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের একটি সমঝোতাপত্র (মউ) সাক্ষরিত হওয়ার কথা। যৌথ সাংবাদিক বৈঠকও করতে পারেন মমতা-তেভাজ়।
শুক্রবার দুপুরে মাদ্রিদে বাণিজ্য শীর্ষবৈঠক। সেখানে বাংলার তরফে যোগ দেবেন মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গী শিল্পপতিরা। সেই প্রতিনিধিদলের সদস্য শিল্পপতি সঞ্জয় বুধিয়ার কথায়, ‘‘মুখ্যমন্ত্রীর নেতৃত্বে এবং উদ্যোগে বাংলায় শিল্পে বিনিয়োগের যে বাতাবরণ তৈরি হয়েছে, বাংলায় শিল্প স্থাপনের যে অনুকূল পরিবেশ তৈরি হয়েছে, তা তুলে ধরাই এই সফরের লক্ষ্য। বিশ্ববঙ্গ বাণিজ্য সম্মেলন এগিয়ে আসছে। ফলে এই সফরের জন্য এর চেয়ে উপযুক্ত সময় আর হতে পারত না।’’ মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে স্পেনের বাণিজ্যমহলের শীর্ষবৈঠকের পাশাপাশি শিল্পপতিদের সঙ্গে আরও বিভিন্ন বৈঠক চলতে থাকবে।
রবিবার দুপুরে মাদ্রিদ থেকে ট্রেনে মমতা যাবেন বার্সেলোনায়। বিকেলে সেখানে পৌঁছে সন্ধ্যায় মুখ্যমন্ত্রী যাবেন স্থানীয় বাঙালি এবং ভারতীয়দের সঙ্গে মিলিত হতে। সোমবার দুপুরে বার্সেলোনায় আবার শিল্পবৈঠক। সেখানে স্পেনীয় শিল্পপতিদের সঙ্গেও বাংলার শিল্পপতিদের আলাদা বৈঠক হবে। মঙ্গলবার বেলা ১২টা থেকে তিন ঘন্টা বার্সেলোনায় শিল্পবৈঠকে যোগ দেবেন মুখ্যমন্ত্রী। সেখানে যোগ দেবেন বাংলার শিল্পপতিরাও।
বুধবার রাতে বার্সেলোনা থেকে দুবাইয়ের পথে রওনা দেবেন মুখ্যমন্ত্রী। বৃহস্পতিবার ভোরে তিনি পৌঁছবেন দুবাই। সে দিনই মুখ্যসচিবের যাওয়ার কথা দুবাই সমুদ্রবন্দরে। শুক্রবার দুপুর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত দুবাইয়ে বাণিজ্য সম্মেলনে যোগ দেবেন মুখ্যমন্ত্রী। সন্ধ্যায় প্রবাসী বাঙালি এবং ভারতীয়দের সঙ্গে তাঁর সাক্ষাৎ।
শনিবার দুপুরে দুবাই থেকে রওনা দিয়ে সেদিন সন্ধ্যায় কলকাতায় ফিরবেন মুখ্যমন্ত্রী। বাংলার প্রশাসনিক মহল এবং বণিকমহল মুখ্যমন্ত্রীর স্পেন এবং দুবাই সফর নিয়ে প্রত্যাশিত ভাবেই আশাবাদী। তাঁদের মতে, এই সফরের ইতিবাচক প্রভাব পড়বে আগামী বছরের বিশ্ববঙ্গ বাণিজ্য সম্মেলনে। সেই কারণেই এই সফর আরও গুরুত্বপূর্ণ।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy