মায়ের কোলে তানিশা।—নিজস্ব চিত্র।
টলমল পায়ে কিছুটা এগিয়ে গিয়েই কচি দুটো হাত বাড়িয়ে দিচ্ছে মেয়েটা। হাবেভাবে বুঝিয়ে দিচ্ছে আবদারটা, ‘আমাকে কোলে নাও’। সেই সন্তানকে বাঁচাতেই ধূপগুড়ি পুরসভার ১ নম্বর ওয়ার্ডের জঙ্গলপাড়ার দম্পতি কৃষ্ণ দাস এবং রিয়া দাস চাইছেন কেউ সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিন। তাঁদের বছর তিনেকের সন্তান তানিশা আক্রান্ত বিরল সিস্টিক ফাইব্রোসিসে। সম্প্রতি তা ধরা পড়েছে। কৃষ্ণ পেশায় দর্জি। বললেন, ‘‘মেয়েটার যখন বছর দেড়েক বয়স তখন থেকেই ওর কাশি শুরু হয়। ৩ বছর বয়স হলেও সেই কাশি সারেনি।’’ এই উপসর্গই এখন ভয়ের কারণ হয়ে উঠেছে দাস পরিবারের কাছে।
খবর পেয়ে পাশে দাঁড়িয়েছেন ধূপগুড়ির তৃণমূল বিধায়ক মিতালি রায়। নিজ উদ্যোগে উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজে তানিশার প্রাথমিক চিকিৎসার ব্যবস্থা করে দেন তিনি। সেখানকার বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকেরা পরীক্ষানিরীক্ষার পর জানিয়ে দেন, তানিশার ফুসফুসে বাসা বেঁধেছে বিরল রোগ, সিস্টিক ফাইব্রোসিস। চিকিৎসার বিপুল খরচ। কিন্তু নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবারে এত টাকা আসবে কোথা থেকে? এই চিন্তায় মাথায় আকাশ ভেঙে পড়েছে কৃষ্ণের। তাঁর কথায়, ‘‘আমি সামান্য দর্জির কাজ করি। কী ভাবে এই ব্যায়বহুল চিকিৎসা করাব? যদি কেউ সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেন, তবে মেয়েটার চিকিৎসা করাতে পারি।’’
কৃষ্ণের পাশে থাকার আশ্বাস দিয়েছেন মিতালি। ফেসবুকে তানিশার কথা তুলে ধরে পোস্ট করেন তিনি। বিধায়কের সঙ্গে যোগাযোগ করেন পদ্মশ্রী করিমুল হক-ও। শিশুটির বা়ড়িতেও যান দু’জনে। তানিশাকে দেখে করিমুল বললেন, ‘‘শিশুটির মেডিক্যাল রিপোর্ট কলকাতা-সহ দেশের বেশ কয়েকটি বড় হাসপাতালে পাঠিয়েছি। ইতিমধ্যেই কলকাতার একটি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বাচ্চাটিকে তাঁদের কাছে নিয়ে যেতে অনুরোধ করেছেন।’’
আরও পড়ুন: পুরুষদের নো এন্ট্রি, পুত্র সন্তানও ১৮ বছরের বেশি থাকতে পারে না মহিলাদের এই গ্রামে
আর বিধায়ক বলছেন, ‘‘আমি ব্যাক্তিগত ভাবে খোঁজ নিয়ে দেখেছি, তানিশা যক্ষ্মার ওষুধ পর্যন্ত খেয়েছিল। কিন্তু কোনও কিছুতেই তার তার কাশি কমছিল না। পরে মেডিক্যাল কলেজ থেকে জানা গেল, ও সিস্টিক ফাইব্রোসিসে আক্রান্ত। এই রোগ সারাতে যে ইঞ্জেকশন বা ওষুধ দরকার তার দাম অনেক। কোনও সহৃদয় ব্যক্তি বা সংস্থা এগিয়ে এলে পরিবারটির খুব উপকার হবে।’’
আরও পড়ুন: দলত্যাগীরা ‘হাওয়া মোরগ’ ধ্বংসের রাজনীতি করছে বিজেপি: পার্থ
সিস্টিক ফাইব্রোসিস আসলে কী? শ্বাসযন্ত্র এবং ফুসফুসের রোগের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক সুমিত সেনগুপ্ত বলছেন, ‘‘সিস্টিক ফাইব্রোসিস আসলে একটি জিনগত রোগ। ভারতে এই রোগ বিরল। এই রোগে বেশির ভাগ ক্ষেত্রে শিশুরা আক্রান্ত হয়ে থাকে। তেমন হলে ফুসফুস প্রতিস্থাপন পর্যন্ত করতে হতে পারে।’’ উপযুক্ত চিকিৎসা না হলে পরিস্থিতি সঙ্গীন হয়ে উঠতে পারে বলেই আশঙ্কা বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের। সেই শঙ্কা গ্রাস করেছে ধূপগুড়ির দাস পরিবারকেও।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy