জালাল মোল্লা
তিনি ব্যবসায়ী। করোনাকালে কার্যত ডোমের কাজ করে চলেছেন স্বেচ্ছায়, বিনা পারিশ্রমিকে।
উলুবেড়িয়ার বাজারপাড়ার বছর বিয়াল্লিশের জালাল মোল্লা প্রতিদিন সকাল ৬টায় পৌঁছে যাচ্ছেন মহকুমা হাসপাতালে। করোনা ওয়ার্ড থেকে মৃতদেহ এনে প্রথমে মর্গে রাখছেন। স্ট্রেচার না-মিললে কাঁধে করেই। তারপরে হিন্দুদের দেহ হলে নিয়ে যাচ্ছেন শিবপুর শ্মশানে। মুসলিমদের দেহ পৌঁছে দিচ্ছেন মৃতের গ্রামে কবর দেওয়ার জায়গা পর্যন্ত। শুধু তাই নয়, করোনা রোগীদের হাসপাতালের চারতলায় স্ট্রেচারে করে তুলে দেওযার কাজেও হাত লাগাচ্ছেন।
জালালকে পাশে পেয়ে হাঁফ ছেড়েছেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। না হলে এই পরিস্থিতিতে কে কোভিড-দেহ বইত? মর্গের সরকারি ডোম তাঁদের সাফ জানিয়ে দিয়েছেন, তিনি করোনায় মৃতদের দেহে হাত দেবেন না।
অনেক বছর ধরেই ওই হাসপাতালে ময়নাতদন্তের জন্য আসা নির্দিষ্ট পৌঁছে দেওয়ার জন্য গাড়ি ভাড়া দেন জালাল। ব্যবসায়িক কারণে দীর্ঘদিন মর্গের কাছাকাছি থাকায় সরকারি ডোমের কাজে তিনি সহায়তা করতেন। কিন্তু করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ে মৃতের সংখ্যা বাড়তে থাকায় ডোম হাত গুটিয়ে নেওয়ায় এগিয়ে আসেন জালাল।
বিবেকের তাড়নাতেই নতুন লড়াইতে নেমেছেন জালাল। তাঁর কথায়, ‘‘আমার যেমন
পরিবার আছে, তেমনই যাঁরা মারা যাচ্ছেন তাঁরাও কারও না কারও বাবা, মা, ভাই, বোন। ভয়ঙ্কর দিন চলছে। এই অবস্থায় আমি যদি মানুষের পাশে না থাকি, সেটা নিজের প্রতি অন্যায় করা হবে।’’
এত সব করার জন্য জালালের প্রাপ্তি বলতে গাড়িভাড়াটুকু। তা সরকার দিয়ে দেয়। কিন্তু দেহ সরানোর বা শ্মশান-গোরস্থানে পৌঁছে দেওয়ার জন্য পারিশ্রমিক পান না তিনি। মৃতদের পরিবারের কাছ থেকে একটি পয়সাও নেন না। করোনার প্রথম পর্যায়েও জালাল এ ভাবেই পরিষেবা দিয়েছিলেন বলে হাসপাতাল সূত্রের খবর। তবে, এবার কাজ অনেক বেশি।
শুধু মহকুমা হাসপাতাল নয়, ফুলেশ্বরের বেসরকারি করোনা হাসপাতাল, নিমদিঘি ইএসআই হাসপাতালের কোভিড-দেহ সরাতেও ডাক পড়ছে জালালের। এমনকি, বাড়িতে যাঁরা মারা যাচ্ছেন, তেমন অনেক ক্ষেত্রেও। মহকুমা
স্বাস্থ্য দফতর থেকেই তাঁর কাছে খবর চলে আসছে।
করোনার দ্বিতীয় ঝড় শুরু হওয়ার পরে সরকার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল ১০ হাজার টাকা বেতনের চুক্তিভিত্তিক ‘কোভিড ডোম’ নিয়োগ করা হবে জেলা ও মহকুমা হাসপাতালগুলিতে। উলুবেড়িয়া মহকুমা হাসপাতালের জন্য ‘কোভিড ডোম’ চেয়ে স্বাস্থ্যভবনে আবেদন করা হয়েছিল। জালালের নিঃস্বার্থ ভূমিকা দেখে তাঁর নামও সুপারিশ করা হয়েছিল। কিন্তু পদটিই অনুমোদিত হয়নি।
হাসপাতালে সুপার সুদীপরঞ্জন কাঁড়ার বলেন, ‘‘জালাল না থাকলে আমাদের বিপাকে পড়তে হত।’’ মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক ভবানী দাস এই হাসপাতালে কেন ‘কোভিড ডোম’ নিয়োগ করা হল না সে বিষয়ে কোনও মন্তব্য করতে না চাইলেও
জালালের অবদানের কথা স্বীকার করেন। তিনি বলেন, ‘‘হাসপাতালের সুপার আমাকে ওই যুবকের কথা বলেছেন। ভাল পরিষেবা দিচ্ছেন তিনি। তাঁর কাজ প্রশংসনীয়।’’
ভ্যাকসিনের দু’টি ডোজ়, হাসপাতাল থেকে দেওয়া পিপিই কিট এবং প্রতি সপ্তাহে করোনা পরীক্ষা— এই তিন রক্ষাকবচই এখন জালালের ভরসা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy