Advertisement
২৩ ডিসেম্বর ২০২৪
Dev

দেবকে নিয়ে তৃণমূল নেতার অডিয়ো ক্লিপ ভাইরাল! সব অভিযোগ অস্বীকার করলেন ঘাটালের প্রাক্তন বিধায়ক

শনিবার একযোগে ঘাটাল রবীন্দ্র শতবার্ষিকী মহাবিদ্যালয়, ঘাটাল সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালের রোগী কল্যাণ সমিতি ও বীরসিংহ উন্নয়ন পর্ষদের ভাইস চেয়ারম্যানের পদ থেকে ইস্তফা দিয়েছেন দেব।

দেব।

দেব। —ফাইল চিত্র।

আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা
ঘাটাল শেষ আপডেট: ০৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ২১:০৮
Share: Save:

লোকসভা ভোটের ঠিক আগে তিনটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশাসনিক কমিটি থেকে সাংসদ দেব (দীপক অধিকারী)-এর সরে দাঁড়ানো নিয়ে জল্পনা অব্যাহত রাজ্য-রাজনীতিতে। সেই আবহে তৃণমূল সাংসদকে নিয়ে একটি অডিয়ো ক্লিপ প্রকাশ্যে এল! ওই অডিয়োর সত্যতা যাচাই করেনি আনন্দবাজার অনলাইন। অডিয়ো ক্লিপে এক ব্যক্তিকে বলতে শোনা যাচ্ছে, দেব নাকি তাঁর কাছ থেকে এমপি ল্যাড (সাংসদ তহবিল)-এর ৩০ শতাংশ কমিশন চেয়েছেন। বিরোধীদের দাবি, অডিয়ো ক্লিপের কণ্ঠস্বর যাঁর, তিনি আর কেউ নন, ঘাটালের প্রাক্তন বিধায়ক শঙ্কর দলুই। এ নিয়ে আবার নতুন করে বিতর্ক শুরু হয়েছে। শঙ্কর অবশ্য দাবি করেছেন, ওই কন্ঠস্বর তাঁর নয়।

এ ব্যাপারে সাংসদ দেবের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি। তবে তৃণমূল মুখপাত্র কুণাল ঘোষ বলেন, ‘‘দেবের ভাবমূর্তি নষ্ট করার চেষ্টা হচ্ছে। সেই কারণেই কেউ একটা এ রকম অডিয়ো ক্লিপ বানিয়ে বাইরে ছড়িয়ে দিয়েছে।’’

শনিবার একযোগে ঘাটাল রবীন্দ্র শতবার্ষিকী মহাবিদ্যালয়, ঘাটাল সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালের রোগী কল্যাণ সমিতি ও বীরসিংহ উন্নয়ন পর্ষদের ভাইস চেয়ারম্যানের পদ থেকে ইস্তফা দিয়েছেন দেব। হঠাৎ কেন এই পদত্যাগ, তা নিয়ে আনন্দবাজার অনলাইন দেবের সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করেছিল। কিন্তু তা সম্ভব হয়নি। তবে দেবের ঘনিষ্ঠ মহলের দাবি, ব্যক্তিগত কারণে তিনটি কমিটি থেকে ইস্তফা দিয়ে থাকতে পারেন সাংসদ। এর পরেই রাজ্য-রাজনীতিতে জল্পনা শুরু হয়, তিন-তিনটি সরকারি কমিটি থেকে ইস্তফা দেওয়ার সিদ্ধান্তের মধ্যে দিয়ে কি আসলে লোকসভা ভোটে প্রার্থী হতে না চাওয়ারই বার্তা দিলেন দেব?

জেলায় দলের একাংশের দাবি ছিল, শঙ্করের সঙ্গে বিবাদের কারণেই ইদানীং অত্যন্ত ‘বীতশ্রদ্ধ’ হয়ে পড়েছেন দেব। সম্প্রতি ঘাটাল উৎসব ও শিশু মেলার কমিটি গঠন নিয়ে ওই বিতর্ক চরমে পৌঁছয়। দেবকে বাদ দিয়েই কমিটির মাথা চূড়ান্ত হয়ে যায়। তার পরে অবশ্য চুপ হয়ে যান সাংসদ অনুগামীরা। এই সব মিলিয়ে আর ভোটে না লড়ার কথাও ভাবছেন। যদিও কোনও কিছুই স্পষ্ট নয়। কেউ কিছু প্রকাশ্যে বলছেন না দেখে এক রকম ধোঁয়াশায় রয়েছেন দলের একটি বড় অংশ। এই পরিস্থিতিতে অডিয়ো ক্লিপের বিষয়টিতে শঙ্কর ও দেব দু’জনের নামই জড়িয়ে পড়েছে।

অডিয়োয় শোনা গিয়েছে, ‘‘আমি দিদিকে এমন কথা বলেছি যে, দেব আমার কাছ থেকে তাঁর এমপি ল্যাড থেকে ৩০ শতাংশ কমিশন চাইছেন। দিদি বলেছেন, ‘ছেড়ে দে। ওর কাজটা করিস না।’ কিন্তু আমি তো দিদিকে বলেছি। দিদি জানে। সব দেখেও তো ওকে সাপোর্ট করেছেন। কেন করেছেন? ওকে আবার রাজনীতিতে প্রয়োজন। কাজেই ভালমন্দ, এখানে সততা বলে কিছু নেই। সততার মূল্য নেই। যে যত চুরি জোচ্চুরি-বাটপাড়ি করতে পারবে, তারাই গিয়ে ওই...।’’

শঙ্কর অবশ্য জানিয়েছেন, অডিয়োর ওই কণ্ঠ তাঁর নয়। এ বিষয়ে তিনি কোনও ভাবে জড়িত না বলেও জানিয়েছেন। তাঁর কথায়, ‘‘ওটা জানি না।’’ দেবের সঙ্গে যোগাযোগ করা না গেলেও সাংসদের প্রতিনিধি রামপদ মান্না বলেন, ‘‘শুনেছি একটি অডিয়ো, যা ভাইরাল হয়েছে। বিষয়টি দলকে জানানো হয়েছে।’’ তৃণমূলের ঘাটাল সাংগঠনিক জেলা সভাপতি আশিস হুদাইত বলেন, ‘‘দেব স্বচ্ছ মানুষ, তাকে কলুষিত করতে বিজেপির চক্রান্ত এটা।’’

বছর দুয়েক আগে আনন্দবাজার অনলাইনের ‘অ-জানা কথা’য় দেব একবার ইঙ্গিত দিয়েছিলেন যে, তিনি আসন্ন লোকসভা ভোটে লড়তে চান না। তাঁর প্রার্থী হওয়া নিয়ে জল্পনা ছিল দলের অন্দরে ও বাইরে। তার অবসান হয় গত জানুয়ারি মাসে কালীঘাটে দলনেত্রীর সঙ্গে পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা তৃণমূল নেতৃত্বের বৈঠকে। এ বারের লোকসভা ভোটে ঘাটাল থেকে দেবকেই প্রার্থী করতে চান তিনি। বৈঠকে মমতা বলেছিলেন, ‘‘দেব আমাদের দলের সম্পদ। বেশ কিছু নেতা তার সঙ্গে এমন আচরণ করেছে, যার ফলে ওর অসুবিধা হচ্ছে। এমনটা কেন হবে? ও শিল্পী মানুষ। এটা তোমরা কী করছো?’’ দলনেত্রীর নির্দেশ থাকলে তিনিও যে ভোটে লড়তে প্রস্তুত, অভিনেতা-সাংসদও সেই ইঙ্গিত দিয়েছিলেন।

তৃণমূল সূত্রে খবর, মুখ্যমন্ত্রী এমন কথা বলায় স্বাভাবিক ভাবেই দেব-বিরোধী নেতারাই বৈঠকে খানিকটা চাপে পড়েছিলেন। দেবের পাশে দাঁড়িয়ে জেলা নেতৃত্বের প্রতি মমতার এমন রুষ্ট হওয়ার ঘটনাতেই লোকসভা ভোটে তাঁর প্রার্থী হওয়ার ইঙ্গিত পেয়েছিলেন উপস্থিত নেতারা। কিন্তু তার পরেও আচমকা কেন তিনটি সরকারি কমিটির শীর্ষ পদ থেকে ইস্তফা দিলেন দেব, তা নিয়ে ঘরে-বাইরে প্রশ্ন উঠেছে। ইস্তফাপত্রেও কোনও কারণের উল্লেখ করেননি দেব। তাতেই জল্পনা আরও বেড়েছে।

২০১৪ সালের লোকসভা ভোটে ঘাটালে বাংলা সিনেমার সুপারস্টার দেবকে প্রার্থী করে চমক দিয়েছিলেন মমতা। প্রথম বার ভোটে দাঁড়িয়ে বামফ্রন্টের সিপিআই প্রার্থী সন্তোষ রানাকে পরাজিত করে সাংসদ হন তিনি। ২০১৯ সালে প্রাক্তন আইপিএস তথা বিজেপি প্রার্থী ভারতী ঘোষকে হারিয়ে দ্বিতীয় বার জয়ী হন দেব। কিন্তু ঘাটাল থেকে মাঝেমধ্যেই দেবের সঙ্গে জেলা নেতৃত্বের বিবাদের খবর প্রকাশ্যে আসে। তাই এ বার লোকসভা ভোটের অনেক আগেই ফের নির্বাচনে না দাঁড়ানোর ইচ্ছাপ্রকাশ করেছিলেন তিনি। কিন্তু মমতা বৈঠকে তাঁর পাশে দাঁড়িয়ে যে ভাবে বিরোধী গোষ্ঠীর নেতাদের প্রশ্নের মুখে ফেলেছেন, তাতে ঘাটাল লোকসভায় তৃণমূল প্রার্থী ফের হিসাবে তাঁকে দেখতে পাওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছিল। কিন্তু ঘাটাল হাসপাতালের রোগী কল্যাণ সমিতির চেয়ারম্যান পদ থেকে দেবের এ ভাবে ইস্তফায় আবারও তা নিয়ে প্রশ্ন তৈরি হয়েছে।

অন্য বিষয়গুলি:

Dev
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy