E-Paper

ছেলের শ্রাদ্ধের দিনেও রোগী দেখেছেন নবতিপর চিকিৎসক

তারাশঙ্করের নানা গল্প, উপন্যাসে সুকুমারের চরিত্র ঘুরে ফিরে এসেছে। এই চিকিৎসককে স্থানীয়েরা এক ডাকে বিশুবাবু নামেই চেনেন।

রোগী দেখছেন চিকিৎসক সুকুমার চন্দ্র। লাভপুরে।

রোগী দেখছেন চিকিৎসক সুকুমার চন্দ্র। লাভপুরে। —নিজস্ব চিত্র।

অর্ঘ্য ঘোষ

শেষ আপডেট: ১৩ নভেম্বর ২০২৩ ০৬:১৭
Share
Save

স্ত্রীর দাহ সেরে কিছুটা দেরিতে হলেও নির্দিষ্ট অনুষ্ঠানে হাজির হয়েছিলেন চিকিৎসক অগ্নীশ্বর মুখোপাধ্যায়। একমাত্র ছেলের পারলৌকিক কাজের দিনেও রোগী দেখলেন ৯৫ বছরের চিকিৎসক সুকুমার চন্দ্র।

দু’জনেই কর্তব্যে অবিচল। প্রথম জন কাহিনির চরিত্র। দ্বিতীয় জন বাস্তব। সাহিত্যিক তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়ের স্নেহধন্য লাভপুরের মহুগ্রামের সুকুমার শুধু শ্রাদ্ধের দিনেই নয়, ছেলের মৃত্যুর দিনেও রোগী দেখেছেন। অশৌচের সময়েও রোগী ফেরাননি।

ডাক্তারি পাশ করে প্রথমে মধ্যপ্রদেশের কাটনির অর্ডন্যান্স ফ্যাক্টরির সিন্ধি হাসপাতালে চাকরি নেন। কিন্তু সেখানে বেশ কয়েকটি নিয়ম মন থেকে মেনে নিতে পারেননি বলে ইস্তফা দেন। তার পরে গোপালপুরে সাউথ ইস্টার্ন রেলওয়েতে মোটা মাইনের চাকরি পান। সেই চাকরি তাঁকে নিতে দেননি তারাশঙ্কর। তিনি ছিলেন সুকুমারের বাবার অভিন্ন হৃদয় বন্ধু।

তারাশঙ্করই সুকুমারকে বলেছিলেন, ‘‘তোমার চাকরি করা চলবে না। গ্রামে গিয়ে মানুষের সেবা করো।’’ সেই নির্দেশ শিরোধার্য করে সেবার ব্রতে গ্রামে এক টাকা ফি নিয়ে চিকিৎসা শুরু করেন। সেই ব্রত থেকে আজও বিচ্যুত হননি। যৎসামান্য ফি-তে রোগী দেখে চলেছেন। যাঁরা পারেন ফি দেন, না দিলেও কোনও ব্যাপার নেই। উল্টে গরিবদের ওষুধপত্র দেন।

তারাশঙ্করের নানা গল্প, উপন্যাসে সুকুমারের চরিত্র ঘুরে ফিরে এসেছে। এই চিকিৎসককে স্থানীয়েরা এক ডাকে বিশুবাবু নামেই চেনেন।

চিকিৎসার পাশাপাশি তারাশঙ্করের এক সময়ে কাছারি বাড়ি ‘ধাত্রীদেবতা’য় সাহিত্যিকের স্মৃতিরক্ষায়, বীরভূম সংস্কৃতিবাহিনী-সহ বিভিন্ন জনহিতকর প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যুক্ত রয়েছেন সুকুমার। নানা প্রতিষ্ঠানের থেকে অবদানের স্বীকৃতিও মিলেছে। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁকে জীবনকৃতি পুরস্কার দিয়েছেন।

স্থানীয়েরা জানান, সুকুমারের একমাত্র ছেলে সৌমিত্র চন্দ্রও ছিলেন পরোপকারী শল্য চিকিৎসক। কলকাতার একটি হাসপাতালে কর্মরত থাকলেও বহুবার লাভপুরে বিনা খরচে অস্ত্রোপচার করে গিয়েছেন। রামকৃষ্ণ মিশনের সঙ্গেও যুক্ত ছিলেন। পরিবার সূত্রে খবর, ২ নভেম্বর ফুসফুসের সংক্রমণে কলকাতার একটি হাসপাতালে ৬১ বছর বয়সে তাঁর মৃত্যু হয়। সে দিন সকালেও যথারীতি রোগী দেখেছেন বিশুবাবু।

রবিবার কলকাতার বাড়িতে ছিল ছেলের পারলৌকিক কাজ। এ দিনও গ্রামের বাড়িতে বসে রোগী দেখেছেন তিনি। গোপালপুরের ফাইজুননেশা বিবি, মোরগ্রামের লক্ষ্মী হেমব্রমেরা বলেন, ‘‘আমরা দীর্ঘদিন ধরেই ডাক্তারবাবুর কাছে চিকিৎসা করিয়ে আসছি। আজ এসে শুনি তাঁর ছেলের শ্রাদ্ধ। ভেবেছিলাম ফিরে যেতে হবে। কিন্তু আমাদের দেখে উনি ফেরাননি। আজকের দিনে এমনটা ভাবা যায়!’’

একই বক্তব্য স্থানীয় বিধায়ক অভিজিৎ সিংহ, নাট্যকর্মী উজ্বল মুখোপাধ্যায়দেরও। তাঁরা বলেন, ‘‘বিশুবাবু প্রথম থেকেই সেবামূলক মনোভাব নিয়ে চিকিৎসা করেন। ছেলের সঙ্কটজনক অবস্থা জেনেও নীরবে চিকিৎসা করে গিয়েছেন।’’

এ দিন কথা বলতে গিয়ে অশ্রু ভারাক্রান্ত হয়ে পড়েন নবতিপর চিকিৎসক। কোনও রকমে বলেন, ‘‘যে চলে গিয়েছে তাকে তো আর ফিরে পাব না। যাঁরা আছেন, তাঁরা যাতে সুস্থ থাকেন, সেই জন্য চেম্বার করে যাচ্ছি। হয়তো ছেলের আত্মা তাতে শান্তি পাবে। সেটুকুই সান্ত্বনা।’’ স্ত্রী রাধা চন্দ্র বলেন, ‘‘ওঁকে কোনও দিন রোগীদের ফেরাতে দেখিনি। এই বয়সেও সঙ্কটাপন্ন রোগী দেখার ডাক এলে ছুটে যান।’’

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

doctor humanity Society

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

এটি একটি প্রিন্ট আর্টিক্‌ল…

  • এমন অনেক খবরই এখন আপনার হাতের মুঠোয়

  • সঙ্গে রোজ পান আনন্দবাজার পত্রিকার নতুন ই-পেপার পড়ার সুযোগ

  • ই-পেপারের খবর এখন শুধুই ছবিতে নয়, টেক্সটেও

প্ল্যান সিলেক্ট করুন

মেয়াদ শেষে নতুন দামে আপনাকে নতুন করে গ্রাহক হতে হবে

Best Value
এক বছরে

৫১৪৮

১৯৯৯

এক বছর পূর্ণ হওয়ার পর আপনাকে আবার সাবস্ক্রিপশন কিনতে হবে। শর্তাবলী প্রযোজ্য।
*মান্থলি প্ল্যান সাপেক্ষে
এক মাসে

৪২৯

১৬৯

এক মাস পূর্ণ হওয়ার পর আপনাকে আবার সাবস্ক্রিপশন কিনতে হবে। শর্তাবলী প্রযোজ্য।