কেউ বাসা বাঁধার খড়কুটো জোগাড়ে ব্যস্ত। কেউ বা বাসায় ছানাদের দেখাশোনা করতে। কেউ আবার প্রজননের জন্য দূর দেশ থেকে পাড়ি জমিয়েছে বাংলায়। নববর্ষে পাখিদের জগতে ঠিক কী চলছে, তা জানতে চার দিন ধরে রাজ্যের আনাচকানাচে নজর রেখেছিলেন পাখি-দেখিয়েরা। আর তাতেই গত শনিবার থেকে আজ, মঙ্গলবার পর্যন্ত টানা চার দিনে রাজ্যে ৫০০ রকম প্রজাতির পাখি নথিভুক্ত করা হয়েছে পোর্টালে। ৩০২ জন পাখিপ্রেমী মিলে চার দিনে জমা করেছেন ৭৫৭টি চেকলিস্ট।
এ রাজ্যের পাখিপ্রেমীদের সংগঠন ‘বার্ড ওয়াচার্স সোসাইটি’র উদ্যোগে ২০২৩ সালে প্রথম নববর্ষে পাখিগণনা শুরু হয়েছিল। তাদের সঙ্গত করে ‘বার্ড কাউন্ট ইন্ডিয়া’ ও ‘ই-বার্ড ইন্ডিয়া’। সে বার দেখা গিয়েছিল ৫৪৪ প্রজাতির পাখি। গত বছর মাত্র এক দিনেই দেখা গিয়েছিল ১৯৬ রকমের পাখি। এ বছর তৃতীয় সংস্করণে প্রাথমিক ভাবে ৫০০টি প্রজাতিকে দেখা গিয়েছে বলে জানা যাচ্ছে। সংগঠনের সেক্রেটারি সুজন চট্টোপাধ্যায় বলছেন, ‘‘এখন সমতলের অনেক পাখিরই প্রজননের সময়। তাই স্থানীয় কোন পাখি, কোথায়, কী করছে, সেই তথ্য জানা যায় সুমারিতে। এ ছাড়া, পরিযায়ী পাখিদের মধ্যে কারা এখনও রয়ে গিয়েছে বা প্রজনন করতে বাংলায় এসেছে— সেই সব তথ্যও জানা যায়। কোনও জায়গার পরিবেশ কী ভাবে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বদলাচ্ছে, মিলছে সেই তথ্যও।’’
কী ভাবে হয়েছে গণনা? ‘বার্ড ওয়াচার্স সোসাইটি’র সদস্য, চিকিৎসক কণাদ বৈদ্য জানাচ্ছেন, রাজ্যের যে কোনও প্রান্ত থেকে টানা ১৫ মিনিট ধরে পাখি দেখে সেই চেকলিস্ট বানিয়ে নথিভুক্ত করতে হয়েছে ই-বার্ড পোর্টালে। পাখির ছবি, পাখির ডাক রেকর্ড করেও তা আপলোড করা হয়েছে। টানা কয়েক বছর ধরে নববর্ষের সময়ে পাখিসুমারি করে তা নথিভুক্ত করা হলে ভবিষ্যতে পাখিদের বাসস্থানের (হ্যাবিট্যাট) পরিবর্তন এবং তাদের সংরক্ষণে এই তথ্য কাজে লাগতে পারে। সব থেকে বেশি প্রজাতির পাখির দেখা মিলেছে দার্জিলিঙে (২৩৮টি)। কোচবিহার, উত্তর ও দক্ষিণ দিনাজপুর ছাড়া প্রতিটি জেলা থেকেই পাখি-দেখিয়েরা গণনায় অংশগ্রহণ করেছেন বলে জানাচ্ছেন কণাদ।
পাখিসুমারিতে ধরা দিয়েছে বেশ কিছু নতুন পাখিও। যেমন, ঝাড়গ্রাম ও হুগলিতে দেখা মিলেছে দু’টি আমুর ফ্যালকনের। কণাদ জানাচ্ছেন, মঙ্গোলিয়া থেকে আসা ছোট এই বাজপাখি এক সময়ে অস্তিত্বের সঙ্কটের মুখে পড়েছিল। নাগাল্যান্ডে শয়ে শয়ে হত্যা করা হত তাদের। তবে সরকারি ও বেসরকারি সহায়তায় বর্তমানে এই পাখির শিকার নিষিদ্ধ। আলিপুরদুয়ারের জয়ন্তীর কাছে দেখা মিলেছে ব্লু-নেপ্ড পিট্টার। এই পাখি সাধারণত ঝোপজঙ্গল ছেড়ে বেরোয় না, তাই সহজে দেখা মেলা ভার। পাখিপ্রেমী সন্দীপ দাসের চোখে ধরা পড়েছে বৈকাল বুশ ওয়ার্বলার— প্রায় ১০ বছর আগে অসমে প্রথম দেখা গিয়েছিল এই পুঁচকে পাখিটিকে। এ বার সোদপুরে একসঙ্গে দেখা দিয়েছে চারটি বৈকাল বুশ ওয়ার্বলার।
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)