Advertisement
E-Paper

রামনবমীর প্রতিষেধক? ওয়াকফ নিয়ে রাস্তায় মুসলিম জনতা, স্পর্শকাতর জায়গায় রবিবারের সাংগঠনিক প্রস্তুতি তৃণমূলেও

রামনবমীর ৪৮ ঘণ্টা আগে ওয়াকফ নিয়ে রাস্তায় নেমে পড়ল একাধিক মুসলিম সংগঠন। শুক্রবার দুপুর থেকে বিকাল পর্যন্ত ওয়াকফ সংশোধনী বিলের প্রতিবাদে পার্ক সার্কাসের দখল নেয় বিপুল অংশের মুসলিম জনতা।

48 hours before Ramnavami, minorities gather to protest Waqf Bill in Kolkata

সংশোধিত ওয়াকফ বিলের প্রতিবাদে শুক্রবার পার্ক সার্কাসে জমায়েত। ছবি: সারমিন বেগম।

আনন্দবাজার ডট কম সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৪ এপ্রিল ২০২৫ ১৮:৫৯
Share
Save

পশ্চিমবঙ্গ জুড়ে মেরুকরণের রাজনীতি আগেই শুরু হয়েছিল। যুযুধান বিভিন্ন রাজনৈতিক শিবিরের ধারণা, বিধানসভা ভোট যত এগিয়ে আসবে, ততই তা গভীরতর হবে। আগামী রবিবার রামনবমীর আগে শুক্রবার তারই ‘মহড়া’ হয়ে গেল। কেন্দ্রীয় সরকারের ওয়াকফ বিল নিয়ে মুসলিম অধ্যুষিত পার্ক সার্কাসে নেমে পড়ল জনতা। যারা এক দিকে যেমন সমস্বরে নরেন্দ্র মোদী তথা কেন্দ্রীয় সরকারের ভূমিকার বিরুদ্ধে সরব হয়েছে, তেমনই প্রশংসা করেছে বাংলার শাসকদল তৃণমূলের ভূমিকার। প্রতিবাদ-বিক্ষোভ আয়োজনে ‘প্রশাসনিক সহযোগিতা’ করায় সেই জনতা ধন্যবাদ জানিয়েছে রাজ্য সরকারকেও।

আগামী রবিবার রামনবমীর দিন অশান্তির আশঙ্কা রয়েছে প্রশাসনের অন্দরে। সেই আশঙ্কা থেকেই মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় স্বয়ং রাজ্য প্রশাসনকে তৈরি থাকার নির্দেশ দিয়েছেন। দেখা গেল, রামনবমীর ৪৮ ঘণ্টা আগেই ওয়াকফ নিয়ে রাস্তায় নেমে পড়ল একাধিক মুসলিম সংগঠন। শুক্রবার দুপুর থেকে বিকাল পর্যন্ত ওয়াকফ সংশোধনী বিলের প্রতিবাদে পার্ক সার্কাসের ‘দখল’ কার্যত চলে গিয়েছিল সেই সব সংগঠনের লোকজনের হাতে, যাকে অনেকেই আসন্ন রামনবমীর ‘আগাম প্রতিষেধক’ হিসেবে ব্যাখ্যা করছেন।

ধর্মীয় সংগঠনের ডাকে পার্ক সার্কাসে জুম্মাবারের জমায়েতের পিছনে শাসক তৃণমূল রয়েছে বলেই অনেকের বক্তব্য। যদিও তার কোনও ‘আনুষ্ঠানিক সমর্থন’ মেলেনি। শুক্রবারের সমাবেশে কোথাও আনুষ্ঠানিক ভাবে তৃণমূলের কোনও নামও ছিল না। তবে পার্ক সার্কাসের জমায়েতে দেখা গিয়েছে তপসিয়া, কসবা, তিলজলা, বেকবাগান এলাকার স্থানীয় স্তরের পরিচিত তৃণমূল নেতাদের। তৃণমূল নেতা কুণাল ঘোষ অবশ্য বলেছেন, ‘‘ওই জমায়েতের নেপথ্যে দল নেই। ওই জমায়েত রামনবমীর দিকে তাকিয়েও হয়নি। সংসদে সংখ্যার জোরে যে ভাবে বিজেপি বিল পাশ করেছে, তার প্রতিবাদে জনমতের বহিঃপ্রকাশই হল ওই জমায়েত।’’ তবে তৃণমূলের অন্দরে ভিন্ন আলোচনাও রয়েছে। এক প্রবীণ নেতার বক্তব্য, ‘‘হয়তো দলের সরাসরি নির্দেশে কোনও কর্মসূচি হয়নি। কিন্তু রামনবমীর আগে এমন জমায়েত উত্তেজনা প্রশমনের বদলে বৃদ্ধিতেই সাহায্য করবে।’’

পার্ক সার্কাসের জমায়েতে আসা তপসিয়ার বাসিন্দা জে আহমেদের কথায়, ‘‘বিজেপি ওয়াকফ নিয়ে যা করেছে, তার ফল ওরা ২০২৬ সালে পেয়ে যাবে।’’ ২০২৬, অর্থাৎ পরের বছর বিধানসভা ভোট। রাজ্যে সংখ্যালঘুদের প্রায় একচেটিয়া সমর্থন তৃণমূলের দিকে। ফলে আহমেদ খোলসা করে না বললেও তিনি কী বলতে চেয়েছেন তা স্পষ্ট। পার্ক সার্কাসেরই বাসিন্দা মহম্মদ হামিদ হোসেন আবার সার্বিক রাজনৈতিক সমীকরণের কথা বলেছেন। তাঁর কথায়, ‘‘কংগ্রেস, তৃণমূলের মতো ধর্মনিরপেক্ষ দলের ভূমিকা ইতিবাচক। কিন্তু নীতীশ কুমার, চন্দ্রবাবু নায়ডুর দল মুসলিমদের ভোট নিয়ে ক্ষমতায় আসার পরেও সংসদে ওয়াকফ বিল নিয়ে যে ভূমিকা নিয়েছে, তাতে তাদের মুখোশ খুলে গিয়েছে।’’

প্রসঙ্গত, নীতীশ এবং চন্দ্রবাবুর দল কেন্দ্রে নরেন্দ্র মোদী সরকারের শরিক। প্রধানমন্ত্রিত্বের তৃতীয় মেয়াদে মোদীকে শরিকনির্ভর হয়ে চলতে হচ্ছে। সেই অর্থে নীতীশ এবং চন্দ্রবাবুর দল কেন্দ্রে বিজেপির ক্রাচের ভূমিকা নিয়েছে। ওয়াকফ সংশোধনী বিলকে সমর্থন করায় বিহারে নীতীশের দলের বেশ কয়েক জন মুসলিম নেতা দলও ছেড়েছেন।

মাস তিনেক আগে যখন বাংলাদেশে সংখ্যালঘু হিন্দুদের উপর নিপীড়ন এবং ইস্কনের সন্ন্যাসী চিন্ময়কৃষ্ণ দাসকে গ্রেফতারির ঘটনায় বিজেপি কলকাতার রাস্তায় একের পর এক মিছিল করছিল, ঠিক সেই সময়েই ওয়াকফ নিয়ে রানি রাসমণি রোডে সংখ্যালঘু সমাবেশ করেছিল তৃণমূল। যার আয়োজক ছিল তৃণমূলের সংখ্যালঘু সেল। ফলে বিজেপির হিন্দুত্বের রাজনীতির মোকাবিলায় তৃণমূল যে ওয়াকফকে ‘হাতিয়ার’ করে সংখ্যালঘুদের একজোট করতে চাইছে, তা আগেই স্পষ্ট ছিল। রামনবমীর আগে কলকাতায় মুসলিম জমায়েতে তারই ‘ছায়া’ দেখছেন অনেকে।

রবিবার রামনবমীর দিন একাধিক ‘স্পর্শকাতর’ (যেখানে অতীতে রামনবমীর দিন গোলমালের দৃষ্টান্ত আছে) এলাকায় অশান্তির আশঙ্কায় তৃণমূল সাংগঠনিক মোকাবিলার প্রস্তুতি রাখছে। ২০২৩ সালের রামনবমীতে অশান্তি হয়েছিল হাওড়ায়। শহর হাওড়ার যুব তৃণমূল সভাপতি কৈলাস মিশ্র শুক্রবার বলেন, ‘‘রবিবার আমাদের সমস্ত স্তরের নেতা এবং স্বেচ্ছাসেবকেরা রাস্তায় থাকবেন। মন্দিরে মন্দিরে পুজোপাঠ হবে। কিন্তু আমরা কোনও ধরনের অশান্তি করতে দেব না।’’ জগদ্দলের তৃণমূল বিধায়ক সোমনাথ শ্যাম বলেছেন, ‘‘আমরা সকলে মিছিলে হাঁটব। মুসলিম ভাইয়েরা জলসত্র দেবেন। ফলে অশান্তির কিছু নেই। তবে বিজেপির অর্জুন সিংহ এবং তাঁর বাহিনী গন্ডগোল করার চেষ্টা করতে পারে। প্রশাসন তৈরি আছে।’’ সোমনাথ প্রকাশ্যে স্বীকার না করলেও ব্যারাকপুর শিল্পাঞ্চলের তৃণমূল সূত্রে খবর, নির্দিষ্ট কিছু জায়গায় রবিবার দলগত ভাবে জমায়েত রাখা হবে। তবে তাতে কোনও রাজনৈতিক ঝান্ডা থাকবে না। আবার রিষড়া, চন্দননগরের মতো এলাকায় ‘সতর্ক’ থাকতে বলা হয়েছে হুগলি-শ্রীরামপুর সাংগঠনিক জেলার তৃণমূলকে।

WAQF Amendment Bill Waqf Bill 2025 Ram Navami 2025 TMC

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

{-- Slick slider script --}}