দলের মধ্যে তাঁকে একঘরে করে দিয়েই মানস ভুঁইয়াকে আরও এক বার সুযোগ দিল প্রদেশ কংগ্রেস। বিধান ভবনে বৈঠক করে দলের ৩৯ জন বিধায়ক এই মর্মে প্রস্তাবে সই করে দিলেন যে, মানসবাবুকে বিধানসভার পাবলিক অ্যাকাউন্টস কমিটির (পিএসি) চেয়ারম্যানের পদ ছেড়ে দিতে হবে। এ বার মানসবাবু যদি দলের এই বার্তাও না মানেন, তখন এআইসিসি-র সম্মতি সাপেক্ষে তাঁর বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া সহজ হবে। সে ক্ষেত্রে সবংয়ের বিধায়ককে সাসপেন্ড করার পথে এগোতে পারে দল।
কংগ্রেসের শনিবারের বৈঠকে মানসবাবু অবশ্য ছিলেন না। বারাণসী থেকে পুজো দিয়ে কলকাতায় ফেরার পরে তাঁকে প্রস্তাবের প্রতিলিপি পাঠিয়ে দেওয়া হবে। দূর থেকেই মানসবাবু নিজের পথে অনড় রয়েছেন! তাঁর অভিযোগ, বিধায়কদের দিয়ে জোর করে প্রস্তাবে সই করানো হয়েছে! তবে সোমবার কলকাতায় ফেরার পরে প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরীর সঙ্গে তিনি কথা বলবেন বলে মানসবাবু জানিয়েছেন।
বৈঠকের পরে এ দিন অধীর বলেন, ‘‘দলের এক জন শৃঙ্খলাপরায়ণ কর্মী হিসাবে মানসবাবু নিজেকে দাবি করেন। পিএসি-র চেয়ারম্যান পদ জোটকে ছেড়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন কংগ্রেস সভানেত্রী সনিয়া গাঁধী। বিধায়কদের দাবি, তৃণমূলের চক্রান্তে পা না দিয়ে মানসবাবু পিএসি-র চেয়ারম্যান পদ ছেড়ে দিন।’’ এই সিদ্ধান্ত না মানলে মানসবাবু যে শৃঙ্খলাভঙ্গের অভিযোগে পড়বেন, তা-ও স্পষ্ট করে দিয়েছেন অধীর। প্রস্তাবের প্রতিলিপি পেয়ে মানসবাবু কী করেন, প্রদেশ নেতৃত্ব তা দেখতে চান। বিধান ভবনে পরবর্তী বৈঠক ডাকা হয়েছে আগামী শুক্রবার।
দল তাঁকে স্পষ্ট বার্তার পরেও মানসবাবু কিন্তু বুঝিয়ে চলেছেন, তিনি সহজে পিএসি-র চেয়ারম্যান পদ ছাড়বেন না। তাঁর বক্তব্য, ‘‘এটা এক বছরের জন্য সাংবিধানিক পদ। সাত বারের কংগ্রেস বিধায়ক হিসাবে স্পিকার আমাকে নিয়োগ করেছেন। আগামী মঙ্গল-বুধবারে পিএসি-র প্রথম বৈঠক ডাকছি।’’ পিএসি-তে সদস্য হিসাবে রয়েছেন কংগ্রেসের শঙ্কর সিংহ, অসিত মিত্র, সুখবিলাস বর্মা। মানসবাবুর ডাকা প্রথম বৈঠকে দলের বিধায়কেরা সামিল হলে আপত্তি নেই বলেই বোঝান অধীর। প্রদেশ সভাপতির কথায়, ‘‘কালই মানসবাবুকে পদ ছাড়তে হবে, এমন সময়সীমা দিচ্ছি না। বিধায়কেরা জনপ্রতিনিধি হিসাবে বিভিন্ন কমিটিতে থাকেন। কোনও কমিটি বৈঠক ডাকলে বিধায়ক নিশ্চয়ই যাবেন।’’ তবে বিধায়ক শঙ্করবাবু এ দিনের বৈঠকে বলেন, মানসবাবু পদ ছেড়ে দিলে তাঁদেরও কমিটিতে থাকা উচিত নয়।
আপাতত ‘ধীরে চলো’ নীতি নিলেও মানসবাবুকে কড়া বার্তা দিতে চায় প্রদেশ কংগ্রেস। বিরোধী দলনেতা আব্দুল মান্নান, পরিষদীয় দলের সচেতক মনোজ চক্রবর্তীকে সঙ্গে নিয়ে অধীর বলেন, ‘‘মানসবাবু কী জবাব দেবেন, তা নিয়ে শুক্রবার প্রদেশ কংগ্রেসের বর্ধিত বৈঠকে আলোচনা হবে। আমাদের দল চলে এআইসিসি-র সিদ্ধান্তে। তা অমান্য শৃঙ্খলাভঙ্গের মধ্যে পড়ে। কেউই এআইসিসি-র ঊর্ধ্বে নন।’’ বৈঠকে এ দিনের প্রস্তাবের কথা কংগ্রেস হাইকম্যান্ডকেও জানানো হয়েছে। মানসবাবু এআইসিসি-র সিদ্ধান্ত না মানলে তাঁর বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
মান্নান এ দিনের বৈঠকে বিধায়কদের কাছে পুরো বিষয়টি ব্যাখ্যা করেছেন। এই নিয়ে কংগ্রেস পরিষদীয় দলের বৈঠক করলে বিতর্ক এড়ানো যেত বলে কয়েক জন বিধায়ক মন্তব্য করেন। ফাঁসিদেওয়ার বিধায়ক সুনীল তিরকে সরাসরিই বলেন, মানসবাবুকে পিএসি-র চেয়ারম্যান করতে না চাইলে শুরু থেকেই তাঁর নাম কমিটির সদস্য তালিকায় রাখা উচিত হয়নি। কংগ্রেসের ৪৪ জন বিধায়কের মধ্যে শান্তিপুরের অরিন্দম ভট্টাচার্য, হরিশ্চন্দ্রপুরের মুস্তাক আলম ব্যক্তিগত কাজের জন্য বৈঠকে আসেননি। মোথাবাড়ির বিধায়ক সাবিনা ইয়াসমিনের বাবা মারা গিয়েছেন। দুর্গাপুর পশ্চিমের বিধায়ক বিশ্বনাথ পারিয়াল বৈঠক শেষে বিধান ভবনে পৌঁছন। মনোজবাবু জানান, এঁরা সকলেই প্রস্তাবের সঙ্গে একমত। অর্থাৎ, মানসবাবুর পাশে কেউ নেই!
অধীরের ব্যাখ্যা, ‘‘এআইসিসি কংগ্রেসের কাউকে পিএসি-র চেয়ারম্যান করার কথা বললে দলে যোগ্যতম ব্যক্তি হিসাবে মানসবাবুই তা হতেন। কিন্তু যে ভাবে সকালে মানসবাবুর নামে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করে বিকালে তাঁকে পিএসি-র পদ দেওয়া হল, তাতে আমরা ব্ল্যাকমেলের গন্ধ পাচ্ছি!’’ যা শুনে মানসবাবুর জবাব, ‘‘সনিয়াজি যখন মান্নানকে জানালেন সিপিএমকে পদটা ছেড়ে দিতে হবে, কেন মান্নান দিল্লি থেকে ফোনে আমাকে তা জানালেন না? তা হলে আমি নাম প্রত্যাহার করে নিতাম। এ ভাবে অপমানিত হতে হত না! মান্নান আসলে সুজন চক্রবর্তীর কাছে ঋণ শোধ করছেন!’’
কংগ্রেসের দলীয় বিতর্কে বারবার তাঁর নাম জড়িয়ে যাওয়ায় বাম পরিষদীয় নেতা সুজনবাবু অবশ্য এ দিন বলেছেন, ‘‘পিএসি পদের দৌড়ে আমি বা আমরা ছিলাম না। যিনিই চেয়ারম্যান হোন, তাঁর কাজে সহযোগিতা করব। রাজ্যের অর্থনৈতিক অসঙ্গতির দিকে নজর দেওয়া কমিটির প্রধান কাজ। আমার যা বলার মান্নানদা’কে বলেছি।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy