রাজ্যের সংস্কৃত শিক্ষার প্রায় ৩৩০টি টোল শুক্রবার আনুষ্ঠানিক ভাবে সংস্কৃত কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্তর্ভুক্ত করা হল। আগে এই টোলগুলি বঙ্গীয় সংস্কৃত শিক্ষা পরিষদের অধীনে ছিল।
এ দিন বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এবং সরকারি আধিকারিকদের উপস্থিতিতে এই হস্তান্তর পর্ব সম্পন্ন হয়। স্কুলশিক্ষা দফতরের অধীনস্থ বঙ্গীয় সংস্কৃত শিক্ষা পরিষদের দফতর ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের পাশেই। এ দিন হস্তান্তর পর্বের শেষে খোলা হয় এই দফতরের দু’টি সিন্দুক। পাওয়া যায় আটটি সোনা এবং ১৯টি রুপোর পদক। অন্তর্বর্তী উপাচার্য রাজকুমার কোঠারি জানালেন, পদকগুলির সঙ্গে প্রাপকের নামও লেখা আছে। পঞ্চাশের দশকের পড়ুয়া থেকে শুরু করে বেশ কিছু পড়ুয়ার প্রাপ্ত পদক রয়েছে। তাঁরা চেষ্টা করবেন পদকগুলি প্রাপকদের কাছে পৌঁছে দেওয়ার। যেগুলি পৌঁছে দেওয়া যাবে না, সেগুলি বিশ্ববিদ্যালয়ের সংগ্রহশালায় রেখে দেওয়া হবে।
এই রাজ্যে সংস্কৃত টোলের, অর্থাৎ চতুষ্পাঠী শিক্ষা ব্যবস্থা বহু পুরনো। বিক্ষিপ্ত ভাবে এই শিক্ষা ব্যবস্থা চলত। ১৯৪৯ সালে পশ্চিমবঙ্গ সরকার এই টোল শিক্ষা ব্যবস্থার উন্নতি এবং অগ্রগতির জন্য স্কুলশিক্ষা দফতরের অধীনে বঙ্গীয় সংস্কৃত শিক্ষা পরিষদ নামে একটি সংস্থা তৈরি করে, যেটির উদ্দেশ্যই ছিল সংস্কৃত শিক্ষার প্রচার ও প্রসার ঘটানো।
বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী অধ্যাপক এবং কার্যনির্বাহী সহকারী রেজিস্ট্রার মণিশঙ্কর মণ্ডল জানালেন, রাজ্যে তিনটি সরকারি টোল, দু’টি সরকার-পোষিত এবং বাকি সব মহার্ঘ ভাতাপ্রাপ্ত টোল রয়েছে। বঙ্গীয় সংস্কৃত শিক্ষা পরিষদ থেকে টোলের তিন ধরনের ডিগ্রি দেওয়া হত— আদ্য, মধ্য ও উপাধি। আদ্য মাধ্যমিক সমতুল, মধ্য উচ্চ মাধ্যমিক সমতুল এবং উপাধি স্নাতক সমতুল। কিন্তু ২০০৭ সালে এই সব পরীক্ষা বন্ধ হয়ে যায়। ২০১৫ সালে রাজ্য সরকার আইন করে সংস্কৃত কলেজকে বিশ্ববিদ্যালয়ে উন্নীত করে। তখনই বঙ্গীয়
সংস্কৃত শিক্ষা পরিষদকে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে আনার সিদ্ধান্ত হয়। এত দিন পরে এ দিন সেই অন্তর্ভুক্তি প্রক্রিয়া হল। এ দিন পরিষদের সব কিছু বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছে হস্তান্তরিত হল।
সূত্রের খবর, বিশ্ববিদ্যালয় গঠনের পরে নানা প্রশাসনিক জটিলতায় এই অন্তর্ভুক্তি প্রক্রিয়া বিলম্বিত হয়েছে। অন্তর্বর্তী উপাচার্য এ দিন বলেন, ‘‘আমাদের লক্ষ্য, টোলগুলি চালু করে আধুনিকীকরণ, পাঠ্যক্রমের পুনর্গঠন এবং পড়ুয়ার সংখ্যা বৃদ্ধি করা। সেই সঙ্গে পরীক্ষা ব্যবস্থা নিয়মিত করা। এর মাধ্যমে সংস্কৃত শিক্ষাকে শিক্ষা ব্যবস্থার মূল স্রোতের সঙ্গে যুক্ত করতে হবে।’’ তবে তাঁর বক্তব্য, ‘‘এর জন্য প্রয়োজন অর্থ এবং লোকবল।’’ মণিশঙ্কর বলেন, ‘‘এই হস্তান্তরের মাধ্যমে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের রাজ্য জুড়ে সংস্কৃত শিক্ষার প্রচার ও প্রসারের স্বপ্নকে বাস্তবায়িত করার গুরুদায়িত্ব কাঁধে তুলে নিল সংস্কৃত বিশ্ববিদ্যালয়।’’
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)