আসানসোলের বস্তিতে শিশুদের খাবার পরিবেশন করছেন এক চিকিৎসক। বুধবার। ছবি: পাপন চৌধুরী
প্লাস্টিকের ছাউনি দেওয়া পরপর দরমা বা মাটির ঝুপড়ি ঘর। মাঝে একচিলতে উঠোন। সেখানে শতরঞ্চি ও বস্তা পেতে সার দিয়ে বসে কয়েকটি কচি মুখ। সামনে থালায় ধোঁয়া ওঠা ভাত-তরকারি। পরিবেশনে যাঁরা ব্যস্ত, তাঁদের কেউ জেলা হাসপাতাল, কেউ আবার ইএসআই হাসপাতালের চিকিৎসক।
আসানসোলের ১৫ নম্বর ওয়ার্ডের ধাদকায় প্রতি সন্ধ্যায় দেখা যায় এই ছবি। দুই থেকে চোদ্দো বছর, নানা বয়সের ৩৮ জনের খাওয়া-দাওয়ার ব্যবস্থা করেন ওই ডাক্তারেরা। ‘ইন্ডিয়ান অ্যাকাডেমি অব পেডিয়াট্রিক্স’ সংগঠনের কোলফিল্ড শাখার ৩০ জন শিশু বিশেষজ্ঞ ফেব্রুয়ারি থেকে এই কর্মকাণ্ড হাতে নিয়েছেন। শুধু রাতের খাবার নয়, ওই কচিকাঁচাদের পড়াশোনা, স্বাস্থ্যপরীক্ষার ব্যবস্থাও করছেন তাঁরা।
চিকিৎসক সংগঠনটির কোলফিল্ড শাখার সভাপতি অতনু ভদ্র জানান, সংগঠনের কেন্দ্রীয় কমিটির নির্দেশে দেশের নানা প্রান্তে আগে থেকেই এই রকম কর্মসূচি চলছে। তবে এ রাজ্যে আসানসোলেই প্রথম তা শুরু হয়েছে। তিনি বলেন, ‘‘বস্তি এলাকায় যে সব শিশু-কিশোর চরম অপুষ্টিতে ভুগছে, প্রচলিত শিক্ষা পাচ্ছে না, অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে বড় হচ্ছে, তাদের চিহ্নিত করে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। দক্ষিণবঙ্গের দশটি জেলায় এই কর্মসূচির পরিকল্পনা রয়েছে।’’
চিকিৎসক কৌস্তুভ মুখোপাধ্যায়, প্রদীপ মুখোপাধ্যায়েরা জানান, কোন এলাকায় এই কর্মসূচি নেওয়া যেতে পারে, সে বিষয়ে তাঁরা প্রথমে আসানসোলের বস্তি উন্নয়ন নিয়ে কাজ করা শিক্ষক চন্দ্রশেখর কুণ্ডুর পরামর্শ নেন। ধাদকার ওই বস্তির বেশির ভাগ পুরুষ-মহিলা পাথর বা কয়লা খাদানে কাজ করেন। সকালে বেরিয়ে বাড়ি ফেরেন বিকেলে। তাঁদের ছেলেমেয়েরা খাবার বা স্বাস্থ্য-শিক্ষা পরিষেবা, কিছুই ঠিক মতো পায় না বললেই চলে। এলাকা ঘুরে দেখে বস্তির কচিকাঁচাদের দেখভালের সিদ্ধান্ত নেন চিকিৎসকেরা।
অতনুবাবু জানান, লাগোয়া এলাকার বাসিন্দা পূর্বা বাউড়িকে পড়ানোর দায়িত্ব দিয়েছেন তাঁরা। বিকেলে বস্তিতে তাঁর সঙ্গে বই-খাতা নিয়ে বসে ছোটরা। ঘুরিয়ে-ফিরিয়ে রান্নার দায়িত্ব দেওয়া হয় বস্তিরই প্রবীণ মহিলাদের। সন্ধ্যা সাড়ে ৭টা নাগাদ খাবার পরিবেশন করেন চিকিৎসকেরা। সম্প্রতি সেখানে গিয়ে দেখা যায়, সার দিয়ে বসে ভাত, ডিমের ঝোল ও সয়াবিনের তরকারি খাচ্ছে খুদেরা।
এই কর্মসূচিতে মাসে খরচ হচ্ছে প্রায় ২৫ হাজার টাকা। চাঁদা তুলে সে খরচ দিচ্ছেন শিশু চিকিৎসকেরা। তাঁদের দাবি, নিয়মিত দেখভালের ফলে ওই শিশুরা অপুষ্টিতে ভুগছে না। ডাক্তারদের এই উদ্যোগে খুশি বস্তিবাসীও। অভিভাবক গণেশ ভুঁইয়ার কথায়, ‘‘বাচ্চাদের জন্য প্রায় কিছুই করতে পারি না। ওঁরা আমাদের কাছে দেবতা হয়ে এসেছেন।’’
আসানসোল জেলা হাসপাতালের সুপার নিখিলচন্দ্র দাস বলেন, ‘‘ডাক্তারের সঙ্গে সাধারণ মানুষের সম্পর্ক যেখানে অনেক ক্ষেত্রে তিক্ত হয়ে যাচ্ছে, সেখানে এ ধরনের উদ্যোগ ভরসা ফেরাবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy