জ্যোতিষ্মান বিশ্বাস, অভিরূপ নাগ, সাগ্নিক সিনহা। —নিজস্ব চিত্র
পড়াশোনার ভয়ে এক জন স্কুল ছেড়ে দিয়েছিলেন। আর এক জন তো বছরের পর বছর বিভিন্ন মানসিক চিকিৎসা কেন্দ্রে ঘুরে চলেছেন। পড়াশোনা একেবারেই অপছন্দ। আর তৃতীয় জন এমন অসুখে ভুগছেন যে, মাঝে মাঝেই চলে যান কল্পনার জগতে। তাই মোটা মাইনের চাকরি ছাড়তে বাধ্য হয়েছেন। অভিরূপ নাগ, জ্যোতিষ্মান বিশ্বাস, সাগ্নিক সিনহা। এই তিন যুবকের মন অস্থির, অসুস্থ হলেও গুণের খামতি নেই। ওয়েস্ট বেঙ্গল মেন্টাল হেল্থ ফোরামে চিকিৎসাধীন এই তিনমূর্তি ড্রোন বানিয়ে তাক লাগিয়ে দিলেন।
বছর ১৫-র অভিরূপ নাগ ছোট থেকেই অসুস্থ। চিকিৎসার পরিভাষায় যে অসুখের নাম, অ্যাটেনসন ডেফিসিট হাইপার অ্যাক্টিভিটি ডিসঅর্ডার। এক দণ্ড স্থির হয়ে বসে থাকাটা তাঁর কাছে শাস্তির মতো। পড়াশোনায় মন না থাকলেও ইলেকট্রনিক্স যন্ত্রপাতির প্রতি দুরন্ত টান। সেই সঙ্গে ঘুড়ি ওড়ানোও অভিরূপের পছন্দের কাজ। ঘুড়ি নয়, এ বার আকাশে ড্রোন ওড়াবেন অভিরূপ। কাগজে উড়ন্ত ড্রোনের ছবি দেখেই ড্রোন বানানোর ভাবনা তাঁর মাথায় আসে বলে জানিয়েছেন অভিরূপ। তবে সেই ভাবনা সত্যি করতে সঙ্গী পেয়েছেন দু’জনকে।
তাঁদের এক জন দশম শ্রেণির ছাত্র বছর ২৩-এর জ্যোতিষ্মান। চিকিৎসকদের কথায়, অটিজম স্পেকট্রাম ডিসঅর্ডারে ভুগছেন। পড়াশোনাই একদম মন নেই। অসুস্থতার জন্য বিভিন্ন মানসিক চিকিৎসা কেন্দ্রেই কেটে যায় বেশির ভাগ সময়। অভিরূপের মতোই ড্রোন বানানোর জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার দরকার পরেনি জ্যোতিষ্মানেরও। মানসিক চিকিৎসা কেন্দ্রেই তিন মাসের চেষ্টায় ড্রোন বানিয়ে নজড় কাড়লেন। ড্রোন বানিয়ে অভিরূপ, জ্যোতিষ্মান একযোগে বললেন, ‘‘খুব রোমাঞ্চকর লাগছে। আর একটা তৈরি করব আমরা। এ বার এই কেন্দ্রের বাকি আবাসিকদেরও ড্রোন বানানো শিখিয়ে দেবো ভাবছি।’’ এর সঙ্গে জ্যোতিষ্মান আরও যোগ করলেন, ‘‘এই ড্রোনের বেশির ভাগ কাজ কিন্তু আমি করেছি। ড্রোনের মোটর কাজ করছে কী না, সেটাও আমি যাচাই করেছি। অভিরূপ শুধু ওড়াতে শিখিয়ে দিলো।’’
তিন জনের মধ্যে চুপচাপ স্বভাবের বছর ৩০-এর সাগ্নিক। গত ১৬-১৭ বছর ধরে প্যারানয়েড স্কিৎজোফ্রেনিয়া নামের অসুখে ভুগছেন। বি-টেক করে বহুজাতিক সংস্থায় মোটা মাইনের চাকরিও পেয়েছিলেন। কিন্তু অসুস্থতার জন্য চাকরি ছাড়তে বাধ্য হন। আপাতত সরকারি ব্যাঙ্কে বিশেষ কোটায় চাকরি করছেন। তিনি বলেন, ‘‘অভিরূপ আর জ্যোতিষ্মান আমার বন্ধুর মতো, প্রতি শনি আর রবিবার বা অন্য দিন অফিসের পরে ড্রোন বানাতেই আমাদের সময় চলে যেত।’’
আপাতত মুকুন্দপুরের ওই মানসিক চিকিৎসা কেন্দ্রে ড্রোন ওড়ানোই মজেছে বাকি রোগীরা। অন্যদের ড্রোন চালানোর প্রশিক্ষণ দিচ্ছে অভিরূপ, জ্যোতিষ্মানরা। বিয়েবাড়ি বা অন্য অনুষ্ঠানে এই ড্রোন ভাড়া দেওয়ারও পরিকল্পনা রয়েছে মানসিক চিকিৎসাকেন্দ্র কর্তৃপক্ষের। সংস্থার সভাপতি মহেন্দ্র সিংহের বক্তব্য, ‘‘চিরজীবন তো ওঁদের মা-বাবারা সঙ্গে থাকবেন না। সেই সময়ও যাতে ওঁরা নিজেদের পায়ে দাঁড়িয়ে থাকতে পারে সেই চেষ্টা করছি আমরা। এতে যেমন ওঁরা কিছু রোজগার করতে পারবেন তেমনই আত্মবিশ্বাসও বাড়বে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy