বন্ধ অগ্রাহ্য করেই পথে পাহাড়। কড়া সতর্কতা ছিল প্রশাসনেরও। দার্জিলিঙে রোজকার মতো চলল টয় ট্রেনও। ছবি: রবিন রাই ও বিশ্বরূপ বসাক।
কাকভোর থেকে সন্ধ্যা অবধি পাহাড়ের চড়াই-উতরাইয়ে ঘুরে বেড়ালেন তিন মন্ত্রী। কখনও এক মন্ত্রীকে দেখা গেল কার্শিয়াঙে রাস্তার ধারে ফুটপাতে বসে চা খাচ্ছেন। আবার কখনও দেখা গেল কালিম্পঙের ডম্বরচকে মিছিলের ফাঁকে দাঁড়িয়ে সংবাদপত্র বিক্রেতার সঙ্গে গল্প জুড়েছেন মন্ত্রী। দার্জিলিঙের চকবাজারেও আরেক ক্যাবিনেট মন্ত্রীকে দেখা গেল জনে জনে কুশল বিনিময় করে হাত মেলাচ্ছেন। বুধবার বন্ধের দিন সূর্যোদয় থেকে সূর্যাস্ত অবধি ঘাম ঝরানোর জেরেই কিছুটা হলেও জনজীবন স্বাভাবিক রাখা গিয়েছে বলে মনে করছেন তৃণমূলের প্রদেশ নেতৃত্ব।
তবে মন্ত্রীদের এত ছোটাছুটিকে কটাক্ষ করেছেন মোর্চা নেতারা। মোর্চার সাধারণ সম্পাদক রোশন গিরি বলেছেন, ‘‘মন্ত্রীদের এত দৌড়াদৌড়ি সত্ত্বেও পাহাড় তো পুরোপুরি স্বাভাবিক ছিল না। মানুষ বন্ধে সায় দিয়েছেন। কাজেই এত ঘাম ঝরিয়ে কী লাভ হল!’’
শুধু তাই নয়, মোর্চার কয়েকজন নেতা হুঁশিয়ারি দিচ্ছেন বলেও অভিযোগ উঠেছে। কয়েকজন ব্যবসায়ী জানান, তাঁরা দোকান খোলায় কয়েকজন মোর্চা নেতা ফোন করে হুঁশিয়ারি দিয়ে জানিয়েছেন, বন্ধের দিন মন্ত্রীরা থাকলেও সব সময় তো পাহাড়ে তাঁদের দেখা মিলবে না। ব্যবসায়ী ও বাসিন্দাদের মারফত সেই খবর পৌঁছেছে তৃণমূলের শীর্ষ নেতৃত্বের কাছেও। সূত্রের খবর, বন্ধে পাহাড়ের যে সব দোকানপাট খোলা ছিল তাঁদের মালিক-কর্মীদের যেন কোনও হেনস্থা করা না হয়, তা নিশ্চিত করতে নির্দেশ দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী।
মোর্চার কটাক্ষকে আমল দিতে রাজি নন মন্ত্রী গৌতম দেব কিংবা রবীন্দ্রনাথ ঘোষ অথবা জেমস কুজুর।
কার্শিয়াঙে দোকান খোলা রাখতে অনুরোধ করছেন উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী রবীন্দ্রনাথ ঘোষ।
বিশেষত গৌতমবাবু তো কোমর বেঁধে নেমেছিলেন আগের রাতেই। মঙ্গলবার সন্ধেতেই নির্দেশ দিয়েছিলেন, দ্রুত তাঁর কালিম্পঙের অতিথি নিবাসের ঘরে ইন্টারনেটের ওয়াইফাই সংযোগ বসানোর। রাতে মুখ্যমন্ত্রীর ফোন আসার পরে একটি প্রিন্টার মেশিনের ব্যবস্থা করতেও বলে রেখেছিলেন। গোটা মহকুমার দায়িত্বে থাকা পুলিশ অফিসার এবং দলের নেতাদের ফোন নম্বর ল্যাপটপে বন্দি। বুধবার ভোরে ওঠে ল্যাপটপ দেখে নম্বর মিলিয়ে ফোনে ধরতে থাকেন একের পর এক দলের নেতা কর্মীকে। কোথায় বন্ধের কেমন সাড়া মিলেছে, কোথায় মিছিল হচ্ছে সব পাঠাতে বলেন হোয়াটসঅ্যাপে। সকালের প্রথম তিন ঘণ্টা কালিম্পঙের হিলটপ সরকারি অতিথি নিবাসে পর্যটনমন্ত্রী গৌতম দেবের ঘর অনেকটা ওয়াররুমের চেহারা নেয়।
সকাল দশটা নাগাদ মন্ত্রী নিজেই ডম্বরচকে হাজির হয়ে মিছিল শুরু করেন। কালিম্পং শহরে দুবার ঘোরে মিছিল। পুলিশ বাহিনী সামনে পেছনে নিয়ে মিছিল দেখে বাসিন্দারাও অনেকে রাস্তায় বেরিয়ে আসেন। ডম্বরচকের একটি ওষুধের দোকানের মালিক কর্মীদের ডেকে নেনে মন্ত্রী। দোকান খোলা রাখায় কোনও সমস্যা হলে তাঁকে জানানোর নির্দেশ দিয়ে ফোন নম্বরও দেন। ততক্ষণে খবর আসে পেদঙে একটি গাড়ি ভাঙচুর হয়েছে। গাড়ির মালিককে ডেকে পাঠান মন্ত্রী। গাড়ি চালকদের সংগঠনের সদস্যদের ডেকে বিভিন্ন হোটেলে পর্যটকদের গাডির প্রয়োজন রয়েছে কিনা খোঁজ নিতে পাঠান। ততক্ষণে তৃণমূল কর্মী সমর্থকদের অনুরোধে বাজারের কয়েকটি দোকান খুলতে শুরু করেছে। তিনি বলেন, ‘‘আজকে না হয় কয়েকটি দোকান খুলেছে, কিন্তু এটাই পথ দেখাবে। এরপর পাহাড়ে আর বনধ দেখবে না।’’
কার্শিয়াঙের ছবিও জমজমাট ছিল। ভোরেই সদলবলে কার্সিয়াং স্টেশনের সামনে হাজির হন রবীন্দ্রনাথবাবু। ইতিমধ্যে তৃণমূল নেতা প্রদীপ প্রদান, বিন্নি শর্মারাও হাজির হন। সেখানেই মোর্চার অনশন মঞ্চের দিক থেকে স্লোগান উঠতে থাকে। বনধের পক্ষে রাস্তায় নামেন মোর্চা নেতা অনিত থাপা সহ অনেকেই। পুলিশ অনিতবাবু সহ ৫০ জনকে গ্রেফতার করে থানায় নিয়ে যায়। প্রায় দিনভর উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রীকে কার্শিয়াঙের এ মাথা থেকে ও মাথায় ঘুরে বেড়াতে দেখা যায়। কয়েকটি চা বাগানেও শ্রমিকদের কাজে যোগ দেওয়ার জন্য অনুরধ করেন তাঁরা। দার্জিলিঙে চকবাজার দিয়ে শুরু পরে শহরের নানা প্রান্তে ঘুরেছেন জেমস কুজুরও।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy