রবিবার বিজেপির মিছিল। ফাইল চিত্র।
কলকাতায় রবিবার বিজেপির মিছিল থেকে ‘দেশ কে গদ্দারোঁ কো, গোলি মারো শালোঁ কো’ স্লোগান দেওয়ার অভিযোগে ধ্রুব বসু, পঙ্কজ প্রসাদ এবং সুরেন্দ্রকুমার তিওয়ারি নামে তিন জনকে গ্রেফতার করল নিউ মার্কেট থানার পুলিশ। সুরেন্দ্রকে রবিবার রাত আড়াইটে নাগাদ বাড়ি থেকে, প্রবীণ ধ্রুববাবুকে সোমবার ভোর সাড়ে ৪টে নাগাদ তাঁর বাড়ি থেকে এবং পঙ্কজকে ভোরের দিকে কালীঘাট থেকে গ্রেফতার করা হয়। ব্যাঙ্কশাল কোর্টের চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট দীপাঞ্জন সেনের আদালতে ধ্রুববাবু জামিন পান। অন্য দু’জনকে দু’দিন পুলিশি হাজতে রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
বিজেপি-সেলের অন্তত এক ডজন আইনজীবী সোমবার আদালতে ছিলেন। ধৃতদের আইনজীবীদের অভিযোগ, উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ভাবে তাঁদের মক্কেলদের গ্রেফতার করা হয়েছে। অপরাধ জামিনযোগ্য হওয়া সত্ত্বেও জোর করে ১৫৩এ ধারা দিয়েছে পুলিশ। ওই আইনজীবীরা বলেন, ‘‘গণতন্ত্রের কণ্ঠ রোধ করতে চাইছে পুলিশ। রাজনৈতিক প্রতিহিংসা মেটাতে এক হকারকে দিয়ে অভিযোগ দায়ের করিয়ে পুলিশ তিন জনকে গ্রেফতার করেছে।’’ ধৃতদের আইনজীবীদের দাবি, ওই স্লোগানে উস্কানিমূলক কোনও বার্তা নেই। ‘দেশের গদ্দার’ শব্দবন্ধটি কোনও সম্প্রদায়কে উদ্দেশ করে বলা হয়নি। ভারতীয় দণ্ডবিধির ১৫৩এ ধারায় মূলত কোনও সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে উস্কানিমূলক বার্তা ছড়ালে গ্রেফতারের সংস্থান রয়েছে। কিন্তু রবিবার মিছিল ছিল শান্তিপূর্ণ এবং তাঁদের মক্কেলরা বিশেষ কোনও সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে প্ররোচনামূলক কথা বলেননি।
এই দাবি খারিজ করে সরকারি কৌঁসুলি অভিজিৎ মুখোপাধ্যায় জানান, সম্প্রদায়, ধর্মের বিভেদ ছাড়া সাধারণ মানুষের মধ্যে বিভেদ তৈরি করলেও ১৫৩এ ধারায় গ্রেফতার করা যায়। রবিবার সাধারণ মানুষের মধ্যে ভীতির সঞ্চার করেছিল ওই স্লোগান। তাই ধৃতেরা জামিন পেতে পারেন না।
চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট দু’পক্ষের বক্তব্য শোনার পরে বয়সের কারণে এক হাজার টাকা বন্ডে ধ্রুববাবুর জামিন মঞ্জুর করেন। ধৃতদের আইনজীবী সিদ্ধার্থশঙ্কর রায় পরে
জানান, তাঁরা তিন জনেরই জামিনের আবেদন জানিয়েছিলেন।
পুলিশ জানায়, রবিবার রাতে ইন্দ্রজিৎকুমার মাল নামে এক ব্যক্তি বিজেপির বেশ কিছু সমর্থকের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করেন। তার ভিত্তিতে সিসি ক্যামেরার ফুটেজ দেখে তিন জনকে গ্রেফতার করা হয়। আরও ২০-২৫ জনকে চিহ্নিত করা গিয়েছে।
কলকাতার পুলিশ কমিশনার অনুজ শর্মা এ দিন এক বার্তায় জানান, কেউ শান্তিভঙ্গ করতে প্ররোচনা দিলে তাঁর বিরুদ্ধে কড়া আইনি পদক্ষেপের জন্য সব থানার ওসি-দের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ওই বার্তায় বলা হয়েছে, রবিবার একটি রাজনৈতিক সমাবেশে যাওয়ার সময় একটি মিছিল থেকে উস্কানিমূলক কিছু স্লোগান দেওয়া হয় এবং তাতে শান্তিভঙ্গের আশঙ্কা ছিল বলে অভিযোগ। নিউ মার্কেট থানায় এ বিষয়ে অভিযোগের ভিত্তিতে মামলা দায়ের করা হয়।
৭৪ বছরের ধ্রুববাবু হরিদেবপুরের পঞ্চাননতলায় ভাগ্নে দীপঙ্কর ঘোষের সঙ্গে থাকেন। পেশায় আইনজীবী দীপঙ্করবাবু বলেন, ‘‘জানতাম, মামা বিজেপির মিছিলে গিয়েছিলেন। কিন্তু কী বলেছেন না বলেছেন, তার কিছুই জানি না। পরে পুলিশের কাছে জানতে পারলাম।’’ ধ্রুববাবু বিয়ে করেননি। সরকারি চাকরি থেকে অবসর নিয়েছেন ১১ বছর আগে। বাড়িতে ঢুকে দেখা গেল, ভিতরে বিজেপির অনেক পতাকা রয়েছে। দীপঙ্করবাবু জানান, এলাকার বিজেপি-সমর্থকেরা ওই পতাকা রেখে গিয়েছেন। ধ্রুববাবু প্রায় ১৯৯০ সাল থেকে বিজেপির সমর্থক। দীপঙ্করবাবু বলেন, ‘‘যখন এই রাজ্যে বিজেপির অস্তিত্ব ছিল না বললেই চলে, তখন থেকেই মামা বিজেপির সমর্থক। মিটিং-মিছিলে যান।’’ ওই স্লোগান তাঁর মামা দিয়েছেন কি না, দীপঙ্করবাবুর তা জানা নেই। তবে তাঁর প্রশ্ন, ‘‘গোলি মারো তো অনেক সময় কাউকে গুরুত্ব না-দেওয়া বা পাত্তা না-দেওয়ার ক্ষেত্রেও ব্যবহার করা হয়। এই শব্দটা কী ভাবে অসংবিধানিক হবে?’’
অভিযুক্ত সুরেন্দ্রের বাড়ি সদর স্ট্রিটের কাছে টোটে লেনে। সেখানে গেলে তাঁর ভাই নরেন্দ্র জানান, পুলিশ রবিবার রাত আড়াইটে নাগাদ দাদার ঘুম ভাঙিয়ে গ্রেফতার করে নিয়ে গিয়েছে। তিনি বলেন, ‘‘আমার দাদা বিজেপির মিটিং-মিছিলে যায় ঠিকই, কিন্তু ‘গোলি মারোর’ মতো ভাষা বলতেই পারে না। দাদা কম কথার আর নরম স্বভাবের মানুষ।’’ নরেন্দ্র জানান, দাদা এবং তিনি জামাকাপড় সেলাইয়ের ব্যবসা করেন। যৌথ পরিবার। দাদা তাঁকে জানিয়েছেন, সিপিএমের একটি মিছিল তাঁদের পাশ দিয়ে যাচ্ছিল। তখন দু’পক্ষই স্লোগান দেয়। তাদের মধ্যে কেউ কিছু বলে থাকতে পারে। নরেন্দ্রের কথায়, ‘‘পুলিশ বলল, একটু পরেই ছেড়ে দেবে। কিন্তু দাদা বাড়ি না-ফেরায় সকালে নিউ মার্কেট থানায় যাই।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy