ভিন্ রাজ্যে পাড়ি দেওয়ার জন্য ট্রেন ধরতে ক্যানিং স্টেশন চত্বরে ভিড় পরিযায়ী শ্রমিকদের। —নিজস্ব চিত্র।
একশো দিনের কাজ বন্ধ। অন্য কাজও তেমন নেই। রাজ্যে কর্মসংস্থানের এই কঙ্কালসার চেহারা সামনে এসেছিল গত জুনে। ওড়িশার বালেশ্বরে করমণ্ডল এক্সপ্রেস দুর্ঘটনায় বহু পরিযায়ী শ্রমিকের মৃত্যু হয়েছিল। তার মধ্যে ক্যানিং, বাসন্তী-সহ সুন্দরবন তথা দক্ষিণ ২৪ পরগনারও বেশ কয়েকজন ছিলেন। বাসন্তীর একই পরিবারের তিন ভাইয়ের মৃত্যুও হয়েছিল সেই ভয়াবহ ট্রেন দুর্ঘটনায়। কয়েক মাসের বিরতির পরে, ফের সোমবার দল বেঁধে ভিন্ রাজ্যে কাজের খোঁজে পাড়ি দিলেন এখানকার কয়েকশো মানুষ। ক্যানিং স্টেশন থেকে দফায় দফায় ট্রেনে চড়ে গোসাবা, বাসন্তী-সহ আশপাশের ব্লক থেকে কেরল, অন্ধ্রপ্রদেশের মতো রাজ্যে রওনা হলেন তাঁরা।
ওই দলে থাকা গোসাবার শম্ভুনগরের বছর চল্লিশের মিঠুন গায়েন গেলেন অন্ধ্রে। যাওয়ার আগে তিনি বলেন, “এলাকায় কোনও কাজ নেই। ভিন্ রাজ্যের কাজই ভরসা। দু’তিন মাস ধান রোয়ার কাজ করলে ৪০-৫০ হাজার টাকা মেলে। এই টাকাটা না হলে সারা বছরের সংসার খরচ, ছেলে-মেয়েদের পড়াশোনার খরচ কোথা থেকে জোগাড় হবে? তাই বিপদ, দুর্ঘটনার ভয় থাকলেও কিছু করার নেই।’’
মিঠুনের মতোই অন্ধ্রে রওনা দেন বাসন্তীর সুভাষ সামন্তও। বছর বাষট্টির ওই বৃদ্ধের কথায়, ‘‘এলাকায় কোনও কাজ নেই। আগে ১০০ দিনের প্রকল্পে কিছু কাজ পেতাম। এখন তা-ও বন্ধ। ফলে, যেতেই হবে। পেটের জ্বালা বড় জ্বালা। আগেও গিয়েছি চার-পাঁচ বার।’’ গোসাবার সোনাগাঁয়ের বাসিন্দা মনোজ মণ্ডল, দীনেশ মণ্ডলের গলাতেও এক সুর। তাঁরা জানান, এ বার ‘দুয়ারে সরকার’ শিবিরে পরিযায়ী শ্রমিকের তালিকায় নাম তুলেছেন। কিন্তু কোনও সরকারি সাহায্য মেলেনি বলে তাঁদের অভিযোগ। তাই ব্যাগ কাঁধে বেরিয়ে পড়েছেন।
বস্তুত, প্রতি বছর পুজোর পরই ভিন রাজ্যে পাড়ি দেন সুন্দরবনের বহু মানুষ। পুরুষদের পাশাপাশি মহিলাদেরও সেখানে যাওয়ার প্রবণতা বাড়ছে। কেউ ধান রোয়ার, কেউ রাজমিস্ত্রির, কেউ অন্য কোনও দিনমজুরির কাজ করেন সেখানে। কার্যত সারা বছরই কাজ মেলে, বলছেন ওই পরিযায়ীরা। তাঁদের দাবি, বাসন্তী বা গোসাবা এলাকায় দিনমজুরির কাজে ৩০০-৪০০ টাকা মেলে, সেখানে ভিন রাজ্যে দৈনিক ১২০০-১৫০০ টাকা মেলে।
গোসাবা ব্লক প্রশাসনের এক আধিকারিক বলেন, “গত দুয়ারে সরকার শিবিরে পরিযায়ী শ্রমিকদের নাম নথিভুক্ত হয়েছে ঠিকই, কিন্তু ১০০ দিনের কাজ রাজ্য জুড়েই বন্ধ। তাই কেউকেই সরকারি ভাবে কাজ দেওয়া সম্ভব হয়নি।” সুন্দরবন উন্নয়নমন্ত্রী বঙ্কিম হাজরাও এই যাত্রায় কেন্দ্রীয় ‘বঞ্চনা’র বিষয়টি তুলে ধরে বলেন, ‘‘আমরা চেষ্টা করছি পঞ্চদশ অর্থ কমিশনের যা প্রকল্পের কাজ বা রাজ্য সরকারের প্রকল্পের যা কাজ এলাকায় হবে, তাতে জবকার্ডধারীরা যাতে কাজ পান, সেটা সুনিশ্চিত করা। কিন্তু মানুষ বাড়তি রোজগারের আশায় ভিন রাজ্যে পাড়ি দিচ্ছেন।"
বিজেপির জয়নগর সাংগঠনিক জেলার সাধারণ সম্পাদক বিকাশ সর্দার বলেন, “১০০ দিনের কাজের টাকা চুরি করেছে রাজ্যের তৃণমূল সরকার। তৃণমূল নেতারা সেই টাকা লুট করেছেন। সেই টাকার হিসেব আগে দিক। রাজ্যে কোনও কাজ নেই। শুধু মেলা- খেলার সরকার চলছে।”
— নিজস্ব চিত্র
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy