Advertisement
২৫ নভেম্বর ২০২৪
Worker

Worker Died: ফিরে এসে পাকা বাড়ি করবেন, বলে গিয়েছিলেন মিরাজুল

রবিবার কর্নাটকের কারখানায় ম্যানহোল সাফ করতে নেমে বিষাক্ত গ্যাসে মৃত্যু হয় মিরাজুলের। ওই ঘটনায় মৃত্যু হয়েছে দেগঙ্গার আরও চার যুবকের।

স্বজনহারা: কান্নায় ভেঙে পড়েছেন পরিজনেরা।

স্বজনহারা: কান্নায় ভেঙে পড়েছেন পরিজনেরা। নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
বসিরহাট শেষ আপডেট: ২০ এপ্রিল ২০২২ ০৬:২৩
Share: Save:

দেগঙ্গার দোগাছিয়া গ্রামে এক চিলতে মাটির বাড়িতে বাবা-মা ও দুই বোনকে নিয়ে থাকতেন মিরাজুল ইসলাম। বছর কুড়ির যুবকের স্বপ্ন ছিল একটা পাকা বাড়ির। টাকা রোজগার করতে পাড়ি দিয়েছিলেন ভিন্ রাজ্যে। মাকে বলেছিলেন, টাকা জমিয়ে ফিরে এসে শুরু করবেন পাকা বাড়ির কাজ। সেই স্বপ্ন অধরাই থেকে গেল মিরাজুলের। মঙ্গলবার বিকেলে কফিনবন্দি হয়ে গ্রামে ফিরেছে তাঁর দেহ।

রবিবার কর্নাটকের কারখানায় ম্যানহোল সাফ করতে নেমে বিষাক্ত গ্যাসে মৃত্যু হয় মিরাজুলের। ওই ঘটনায় মৃত্যু হয়েছে দেগঙ্গার বিভিন্ন গ্রামের আরও চার যুবকের। এ দিন বিকেলে মিরাজুলের সঙ্গেই ফাজিলপুরের মহম্মদ ওমর ফারুক ও দক্ষিণ আমুলিয়া গ্রামের নিজামুদ্দিন সাহাজির দেহ আসে। সরাফত আলি ও সামিউল ইসলামের দেহ রাতে কলকাতা বিমানবন্দরে পৌঁছবে বলে প্রশাসনের তরফে জানানো হয়েছে।

পাঁচ যুবকের মৃত্যুসংবাদ আসার পর থেকেই শোকে ভেঙে পড়েছে পরিবারগুলি। মঙ্গলবার দোগাছিয়া, ফাজিলপুর, রায়পুর গ্রামে গিয়ে দেখা গেল, শোকস্তব্ধ এলাকার মানুষ। দোগাছিয়া গ্রামের ফরিদা বিবি বলেন, “আমাদের গ্রামেরই দুই ছেলে মারা গিয়েছে। ভাবতেই পারছি না যে, ওরা আর কখনও বাড়িতে ফিরবে না। গোটা গ্রামের প্রায় কারও বাড়িতেই হাঁড়ি চড়েনি।”
গ্রামের বাসিন্দা সাহাবুদ্দিন মণ্ডল, সাবুর আলিরা জানান, এলাকায় কাজ না থাকায় দলে দলে গ্রামের ছেলেরা বাইরে কাজে চলে যাচ্ছে।

কর্নাটকের দক্ষিণ কন্নড় জেলার বাজপে এলাকায় একটি মাছ প্রক্রিয়াকরণ কারখানায় কাজ করতেন ওই যুবকেরা। রবিবার সন্ধ্যায় সেখানেই একটি ম্যানহোল পরিষ্কার করতে গিয়ে পাঁচজনের মৃত্যু হয়। আরও কয়েকজন অসুস্থ হয়ে পড়েন। এ দিন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশে বারাসতে জেলাশাসকের দফতরে বনমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক মৃত পাঁচ শ্রমিকের পরিবারের হাতে দু’লক্ষ করে টাকা তুলে দেন। জ্যোতিপ্রিয় বলেন, “আমরা সমস্ত রকম সাহায্য নিয়ে পরিবারগুলির পাশে থাকব।”

এ দিন উত্তর ২৪ পরগনা জেলা কমিটির সম্পাদক মৃণাল চক্রবর্তীর নেতৃত্বে বামেদের একটি প্রতিনিধি দল দেগঙ্গায় আসেন। মৃণাল বলেন, “দলমত নির্বিশেষে আমাদের সকলের ওঁদের পাশে দাঁড়ানো উচিত।” প্রশাসনের তরফে পরিবার-পিছু ২৫ লক্ষ টাকা দেওয়ার দাবি জানান তিনি। মৃণালের কথায়, “এ রাজ্যে কর্মসংস্থান নেই। তাই লক্ষ লক্ষ ছেলেমেয়েকে ভিন্ রাজ্যে যেতে হয়।”
সিপিএম সূত্রের খবর, শ্রমিকদের মৃত্যুতে ম্যাঙ্গালোরের ওই সংস্থার গাফিলতির অভিযোগ তুলে সেখানকার দলীয় কর্মীরা মৃত শ্রমিকদের পরিবারপিছু ক্ষতিপূরণ দাবি করেন। সংস্থাটি প্রথমে দু’লক্ষ টাকা করে ক্ষতিপূরণ দেবে বলে জানায়। তবে দলীয় কর্মীদের লাগাতার আন্দোলনে কোম্পানির তরফে শেষ পর্যন্ত ১৫ লক্ষ টাকা করে ক্ষতিপূরণের আশ্বাস দেওয়া হয়েছে। ক্ষতিপূরণের অঙ্ক আরও দশ লক্ষ করে বাড়ানোর জন্য লড়ছেন কর্মীরা।

মৃত শ্রমিকের পরিবারের পাশে দাঁড়িয়েছেন দেগঙ্গা এক ব্লক তৃণমূল সভাপতি তথা দেগঙ্গা পঞ্চায়েত সমিতির কর্মাধ্যক্ষ আনিসুর রহমান বিদেশ। তিনি তাঁর পাঁচ বছরের অর্জিত সাম্মানিক থেকে ২০ হাজার টাকা করে এককালীন অনুদান হিসেবে পাঁচটি পরিবারের হাতে তুলে দেন।

অন্য বিষয়গুলি:

Worker Man Died
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy