Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪
Fraud

ফের ভুঁইফোড় সংস্থার ফাঁদে পড়ে প্রতারিত 

বিভিন্ন ভুঁইফোড় সংস্থাগুলি নতুন করে গ্রামাঞ্চলে ফাঁদ পাততে শুরু করেছে।  সমিতির নামে গ্রামে গ্রামে চলছে বেআইনি আর্থিক কারবার। কেন পঞ্চায়েত বা প্রশাসন এই ঘটনার কথা জানতে পারলেন না?

থানার দ্বারস্থ হয়েছেন মহিলারা। ছবি: সুজিত দুয়ারি

থানার দ্বারস্থ হয়েছেন মহিলারা। ছবি: সুজিত দুয়ারি

নিজস্ব সংবাদদাতা
অশোকনগর শেষ আপডেট: ০৭ অক্টোবর ২০২০ ০৭:২৭
Share: Save:

কম সুদে ৪০ হাজার টাকার ঋণ দেওয়া হবে। ওই ঋণ পেতে হলে প্রত্যেককে ৮৩০ টাকা দিতে হবে— গ্রামের মহিলারা এই প্রতিশ্রুতির ফাঁদে পা দিয়ে টাকা খুইয়েছেন বলে অভিযোগ। সংস্থার লোকজন কিছু দিন ধরে বেপাত্তা।

ঘটনাটি অশোকনগর থানা এলাকার। প্রতারিত হয়েছেন বুঝতে পেরে মহিলারা দল বেঁধে অশোকনগর থানায় গিয়ে সোমবার রাতে লিখিত অভিযোগ করেছেন। পুলিশ তদন্ত শুরু করেছে। পুলিশের এক কর্তা বলেন, ‘‘অভিযুক্তদের খোঁজে তল্লাশি শুরু হয়েছে। তারা পলাতক।’’

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, দিন সাতেক আগে স্থানীয় দিঘিরহাট এলাকায় একটি সংস্থার সদস্যেরা ঘর ভাড়া নিয়ে অফিস তৈরি করে। ‘আশা মাইক্রোফিনান্স’ নামে সংস্থাটির সদস্যেরাও ছিল মহিলা। এদের এলাকার লোকজন চিনতেন না। কোথা থেকে তারা এসেছে, তা-ও জানতেন না। অভিযোগ, এলাকার কয়েকজন ব্যক্তির সঙ্গে সংস্থার মহিলারা যোগাযোগ করে। স্থানীয় বাসিন্দা মিষ্টির দোকানি, কাপড়ের দোকানি, সাইকেল দোকানিদের তারা কাজে লাগায়। স্থানীয় কয়েকজনকে সঙ্গে নিয়ে সংস্থার মহিলারা গ্রামের মহিলাদের ঋণের লোভ দেখায়। ৮৩০ টাকা দিলে ৪০ হাজার টাকা কম সুদে ঋণ মিলবে, এই প্রতিশ্রুতি পেয়ে গ্রামের মহিলারা অনেকে টাকা দেন। সঙ্গে দিতে হয়েছে, ব্যাঙ্কের পাসবই, আধার কার্ড, প্যান কার্ডের ফটোকপি।

প্রতারিত মহিলারা জানিয়েছেন ,অশোকনগরের রাজবেড়িয়া, ভুরকুন্ডা, হিজলিয়া, সেনডাঙা, নোটনি, দোগাছিয়া সহ কয়েকটি এলাকায় ইতিমধ্যেই জাল বিস্তার করেছে আশা মাইক্রোফাইন্যান্স। ভুরকুন্ডা এলাকা থেকেই ৩২ জন মহিলা ৮৩০ টাকা করে দিয়েছেন। মহিলাদের পাশাপাশি পুরুষদেরও ঋণ দেওয়ার প্রলোভন দিয়েছিল সংস্থার কর্মীরা। তবে তা শুরু করতে পারেনি।

গোটা প্রক্রিয়াটি ঘটে গিয়েছে সাত দিনের মধ্যে। পুলিশ জানিয়েছে, মাসে ১৮৪১ টাকা কিস্তিতে ঋণ পরিশোধ করার প্রতিশ্রুতি ছিল। ৮৩০ টাকা নেওয়া হয়েছিল বিমা করে দেওয়ার জন্য। ভুরকুন্ডা এলাকার প্রতারিত মহিলা পাপিয়া দেবনাথ বলেন, ‘‘সংস্থার মহিলাদের আমরা চিনি না। অনেকেই ঋণ নিতে চাননি সে কারণে। আমিও নিতে চাইনি প্রথমে। কিন্তু এলাকার পরিচিত কয়েকজন আমাদের আশ্বাস দেওয়ায় ৮৩০ টাকা দিয়েছিলাম।’’ বীণা সিংহ নামে এক মহিলা খেতমজুরের কাজ করেন। তিনিও ৮৩০ টাকা দিয়েছেন। তাঁর কথায়, ‘‘লকডাউনের কারণে স্বামীর কাজকর্ম বন্ধ। ভেবেছিলাম, কম সুদে ঋণ পেলে নতুন করে কোনও ব্যবসা শুরু করতে পারব। এ ভাবে প্রতারিত হব বুঝতে পারিনি।’’ প্রতারিত মহিলারা জানালেন, প্রিয়াঙ্কা নামে এক মহিলা ওই চক্রের পান্ডা। তবে তার পরিচয় তাঁরা জানেন না। সারদা-সহ একাধিক ভুঁইফোড় আর্থিক সংস্থার ফাঁদে পড়ে হাজার হাজার মানুষ প্রতারিত হয়েছেন। জমি বাড়ি বিক্রি করে করে টাকা রেখে বা ঋণ করে টাকা রেখে বহু মানুষ সর্বস্বান্ত হয়ে গিয়েছেন। এরপরেও কিছু মানুষ এখনও যে ওই বিষয়ে সচেতন হননি, তা ফের প্রমাণিত হল অশোকনগরে। বিভিন্ন ভুঁইফোড় সংস্থাগুলি নতুন করে গ্রামাঞ্চলে ফাঁদ পাততে শুরু করেছে। সমিতির নামে গ্রামে গ্রামে চলছে বেআইনি আর্থিক কারবার। কেন পঞ্চায়েত বা প্রশাসন এই ঘটনার কথা জানতে পারলেন না? ভুরকুন্ডা পঞ্চায়েতের প্রধান বৃন্দাবন ঘোষ বলেন, ‘‘পঞ্চায়েতের অনুমতি নিয়ে কোনও সংস্থাকে ঘর ভাড়া দিতে হয়। কিন্তু ঘরের মালিক তা করেননি। মহিলারা আমাদের কিছু জানাননি আগে। সোমবার রাতে বিষয়টি জানতে পেরেছি। সংস্থাটি যে ঘর ভাড়া নিয়েছিল, তার মালিকের সঙ্গে কথা বলেছি। তাঁকে বলেছি আইনি পদক্ষেপ করতে।’’ তাঁর দাবি, প্রতারণা সংস্থার বিষয়ে নিয়মিত মানুষকে সচেতন করা হয়।

অন্য বিষয়গুলি:

Fraud Micro finance agency Ashokenagar
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy