Advertisement
০৫ নভেম্বর ২০২৪

চিকিৎসা বাড়িতেই, জ্বরে মৃত্যু মহিলার

গোটা ঘটনায় ফের ডেঙ্গি-সচেতনতার হাল নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। স্বাস্থ্য দফতর, প্রশাসন, পঞ্চায়েত  থেকে নিয়মিত ভাবে গ্রামে গ্রামে প্রচার করে বলা হচ্ছে, জ্বর-ডেঙ্গিতে আক্রান্ত হলে মানুষ যেন সরকারি স্বাস্থ্যকেন্দ্র বা হাসপাতালে যান।

রূপা মণ্ডল

রূপা মণ্ডল

সীমান্ত মৈত্র
গোবরডাঙা  শেষ আপডেট: ০৩ সেপ্টেম্বর ২০১৯ ০১:১৭
Share: Save:

জ্বরে ভুগে বাড়িতেই মারা গেলেন গোবরডাঙার বাসিন্দা এক মহিলা। নাম, রূপা মণ্ডল (৩৭)। পরিবার সূত্রের খবর, বুধবার থেকে জ্বর এসেছিল বেলিনি এলাকার বাসিন্দা রূপার। রক্ত পরীক্ষায় ডেঙ্গি ধরাও পড়েছিল। তা সত্ত্বেও হাসপাতালে না গিয়ে বাড়িতেই চিকিৎসা চলছিল রূপার। স্থানীয় এক চিকিৎসককে দেখানো হয়েছিল। রবিবার দুপুরে শারীরিক অবস্থার অবনতি হওয়ায় হাবড়া স্টেট জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। চিকিৎসকেরা তাঁকে মৃত বলে জানিয়ে দেন।

গোটা ঘটনায় ফের ডেঙ্গি-সচেতনতার হাল নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। স্বাস্থ্য দফতর, প্রশাসন, পঞ্চায়েত থেকে নিয়মিত ভাবে গ্রামে গ্রামে প্রচার করে বলা হচ্ছে, জ্বর-ডেঙ্গিতে আক্রান্ত হলে মানুষ যেন সরকারি স্বাস্থ্যকেন্দ্র বা হাসপাতালে যান। তারপরেও মানুষ যে সচেতন হচ্ছেন না, রূপার মৃত্যু তা চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিল।

কেন রূপাকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হল না? রূপার স্বামী সুকুমার পেশায় গাড়ি চালক। তিনি বলেন, ‘‘জ্বর-ডেঙ্গি হলে হাসপাতালে নিয়ে যেতে হয়, তা জানা ছিল। কিন্তু ওই চিকিৎসককে আমরা বিশ্বাস করি। উনি বলেছিলেন, চিন্তার কিছু নেই।’’ মৃতের বাবা সুজিত সরকার বলেন, ‘‘ওই চিকিৎসক বলেছিলেন, প্রয়োজন হলে তিনিই রোগীকে হাসপাতালে ভর্তি করে দেবেন।’’ রূপার পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, রবিবার সকাল ১০টা নাগাদ শারীরিক অবস্থার অবনতি হয়। পরিবারের তরফে ওই চিকিৎসককে ফোন করা হলে তিনি জানান, অস্ত্রোপচার করছেন। পরে ফোন করছেন। রোগীর অবস্থার আরও অবনতি হতে থাকে। পায়খানা-বমি হয়। শরীর ঘেমে যাচ্ছিল। পরিবারের লোকজন আবারও চিকিৎসককে ফোন করেন। তাঁদের জানানো হয়, চেম্বারে বসতে এখনও কিছুটা সময় লাগবে। রোগীর অবস্থা খারাপ হলে যেন হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়।

এরপরেই রূপাকে নিয়ে পরিবারের লোকজন হাবড়া স্টেট জেনারেল হাসপাতালে রওনা হন। সুকুমার বলেন, ‘‘ওই চিকিৎসক যদি আগে আমাদের হাসপাতালে যেতে বলতেন, তা হলে হয় তো স্ত্রীকে হারাতে হত না।’’

রূপার শাশুড়ি রেণুকা আগে হাসপাতালে আয়ার কাজ করতেন। তিনি বলেন, ‘‘আমি জানতাম জ্বর-ডেঙ্গিতে আক্রান্ত হলে শুধুমাত্র প্যারাসিটামল খেতে হয় এবং স্যালাইন দিতে হয়। ওই চিকিৎসক রূপাকে বিভিন্ন ওষুধ খেতে বলেছিলেন।’’ সংশ্লিষ্ট চিকিৎসক অবশ্য অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ‘‘আমি ওঁদের আগেই হাসপাতালে যেতে বলেছিলাম। ওঁরা তা করেননি।’’

গোবরডাঙা এলাকায় জ্বর-ডেঙ্গি ছড়িয়েছে। বহু মানুষ স্থানীয় চিকিৎসকদের কাছে যাচ্ছেন। হাবড়া স্টেট জেনারেল হাসপাতালের সুপার শঙ্করপ্রসাদ মাহাতো বলেন, ‘‘স্থানীয় চিকিৎসকদের উচিত, প্রতিটি জ্বরের রোগীকে গুরুত্ব দিয়ে দেখা। ডেঙ্গি রোগের লক্ষণ সম্পর্কে রোগীদের বলে দেওয়া। সে সব লক্ষণ দেখা দিলে দ্রুত রোগীকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দেওয়া উচিত।’’

রূপার বাড়িতে গিয়ে দেখা গেল, চারিদিকে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ। গোবরের ঢিবি। ডোবায় জল জমে আছে। নোংরা আবর্জনা, প্লাস্টিকের ব্যাগ যত্রতত্র পড়ে। বাসিন্দারা জানালেন, দু’আড়াই মাস আগে এলাকায় জ্বর-ডেঙ্গি ছড়ালেও পঞ্চায়েতের তরফে ডেঙ্গি প্রতিরোধে আগেভাগে পদক্ষেপ করা হয়নি।

এলাকাটি বেড়গুম ১ পঞ্চায়েতের মধ্যে পড়ে। পঞ্চায়েত সদস্য প্রিয়া বিশ্বাস বলেন, ‘‘মাসে দু’বার করে এলাকায় চুন, ব্লিচিং, মশা মারার তেল ছড়ানো হচ্ছে। মানুষ সচেতন নন। প্রচারে বলা হচ্ছে জ্বর-ডেঙ্গি হলে সরকারি হাসপাতালে যেতে। রূপার ক্ষেত্রে তা করা হয়নি।’’

বেলিনি এলাকা থেকে গোবরডাঙা গ্রামীণ হাসপাতালের দূরত্ব মাত্র দু’কিলোমিটার। সুকুমারের আক্ষেপ, ‘‘হাসপাতালটি চালু থাকলে, স্ত্রীকে দ্রুত সেখানে নিয়ে যেতে পারলে হয় তো মৃত্যু ঠেকানো যেত।’’

অন্য বিষয়গুলি:

Woman Died Fever Gobardanga
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE