ফাইল চিত্র
হাতের ছুরিতে তখন রক্তের দাগ টাটকা। তরুণী থানায় ঢুকে ডিউটি অফিসারকে গিয়ে বললেন, ‘‘স্যার, স্বামীকে মার্ডার করে এসেছি। আমাকে গ্রেফতার করুন।’’
থতমত খেয়ে যান পুলিশ কর্মীরা। কিন্তু তরুণীর শান্ত গলায় কথা বলা, হাতে রক্তমাখা ছুরি দেখে অবিশ্বাস করার কারণ ছিল না। তরুণীকে সঙ্গে নিয়ে বনগাঁ থানার পুলিশ শ্বশুরবাড়িতে পৌঁছে যায়। উদ্ধার করা হয় দেহ।
বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় ঘটনাটি ঘটেছে বনগাঁ শহরের নেহরুনগর এলাকায়। পুলিশ জানিয়েছে, নিহত যুবকের নাম শঙ্কর দে (৩৩)। তাঁর বোন দুর্গা বিশ্বাসের অভিযোগের ভিত্তিতে পুলিশ রাতেই তাঁর স্ত্রী শান্তিকে গ্রেফতার করেছে। শুক্রবার শান্তিকে বনগাঁ মহকুমা আদালতে তোলা হলে বিচারক পুলিশি হেফাজতে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছেন। বনগাঁ থানার আইসি মানস চৌধুরী বলেন, "প্রাথমিক তদন্তের পরে জানা গিয়েছে, সাংসারিক অশান্তির জেরেই ওই ঘটনা।"
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, বনগাঁ শহরের বাবুপাড়া এলাকার বাসিন্দা শান্তির সঙ্গে কয়েক বছর আগে নেহেরুবাগ কলোনির শঙ্করের বিয়ে হয়। শান্তির আগে একবার বিয়ে হয়েছিল। সেই স্বামী মারা যাওয়ার পরে শঙ্করকে বিয়ে করেন। আগের পক্ষের একটি সাত বছরের ছেলে রয়েছে শান্তির। শঙ্করও আগে বিয়ে করেছিলেন। প্রথম পক্ষের স্ত্রী চলে গিয়েছেন।
থানায় লিখিত অভিযোগে দুর্গা জানিয়েছেন, বৌদি ইদানীং নানা ছুতোনাতায় দাদার সঙ্গে অশান্তি করতেন। শারীরিক, মানসিক নির্যাতন করতেন। নিহতের পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, শঙ্কর এক সপ্তাহ বাড়ি ছিলেন না। দূরে মেলায় হোটেল দিয়েছিলেন। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় বাড়ি ফেরেন। অভিযোগ, স্বামী-স্ত্রীর ফের অশান্তি শুরু হয়। স্বামীকে খেতে দেননি শান্তি। পরে ছেলেকে নিয়ে তাঁকে বাড়ি থেকে বেরিয়ে যেতে দেখেন পাড়া-প্রতিবেশীরা। সন্দেহ হওয়ায় তাঁরা ঘরে গিয়ে দেখেন, বিছানায় শঙ্কর রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে রয়েছেন। পুলিশকে খবর দেওয়া হয়।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় শঙ্কর নেশাগ্রস্ত ছিলেন। ঝগড়া করে ঘুমিয়ে পড়েছিলেন। সে সময়ে শান্তি তাঁকে খুন করেন। ধৃতকে জেরা করে পুলিশ জানতে পেরেছে, নেশাগ্রস্ত অবস্থায় শঙ্কর ঘুমিয়ে পড়লে শান্তি তাঁর বুকের উপরে উঠে গলা টিপে শ্বাসরোধ করেন। তারপরে চুড়িদার দিয়ে গলায় ফাঁস দিয়ে স্বামীকে খুন করেন। মৃত্যু নিশ্চিত করতে ছুরি দিয়ে দু'হাতের শিরা কেটে দেন।
স্বামীকে মেরে ঘরের দরজা বন্ধ করে ছেলেকে নিয়ে শান্তি বাপের বাড়ি চলে যান। সেখানে ছেলেকে রেখে রক্তমাখা ছুরি নিয়ে টোটোয় চেপে পৌঁছন থানায়।
পুলিশের দাবি, জেরায় শান্তি জানিয়েছেন, লোকের বাড়ি পরিচারিকার কাজ করে মাসে দেড় হাজার টাকা পান শান্তি। ওই টাকা স্বামী জোর করে নিয়ে নিতেন। দিন কয়েক আগে শঙ্কর স্ত্রীর কাছ থেকে জোর করে ১ হাজার টাকা ও সোনার গয়না ছিনিয়ে নেন। এ সব নিয়ে অশান্তির জেরেই স্বামীকে তিনি খুন করেছেন বলে দাবি করেছেন শান্তি।
নিহতের বোন অবশ্য দাবি করেন, বৌদি কোনও কাজ করতেন না। দাদাই সংসার চালাতেন। টাকা পয়সা কেড়ে নেওয়ার ঘটনা মিথ্যা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy