আলোচনা: বাগদার সিন্দ্রাণী পঞ্চায়েতের হরিনগরে তরুণরা। ছবি: নির্মাল্য প্রামাণিক
বিশ্বজ্যোতি দাস: পঞ্চায়েত ভোট চলে এল। সকলেই ভোট দিতে চায়। কিন্তু আমাদের ভোটগ্রহণ কেন্দ্র গ্রাম থেকে প্রায় ৬ কিলোমিটার দূরে, খড়ের মাঠ এলাকায়।
অম্লান বসু: ঠিকই বলেছ। এ কারণেই আমাদের গ্রামের অনেক বয়স্ক ও অসুস্থ মানুষ ভোট দিতে যেতে পারেন না। প্রশাসনের পক্ষ থেকে ভোটগ্রহণ কেন্দ্রে নিয়ে যেতে যানবাহনের কোনও ব্যবস্থা থাকে না।
বিশ্বজ্যোতি: আমাদের গ্রামেই প্রাথমিক স্কুল আছে। আমরা প্রশাসনের কাছে অনেক বার আবেদন করেছিলাম, সেখানে ভোটগ্রহণ কেন্দ্র করার জন্য। আশ্বাস মিললে কাজ হয়নি।
রাকেশ পোদ্দার: ভোটটা না হয় দেব। কিন্তু আমাদের মূল সমস্যাগুলি তো সমাধান হল না।
অভিজিৎ বিশ্বাস: রাঘবপুরে বাওড়ের উপরে একটি কাঠের পাটাতন এবং বাঁশের সাঁকো আছে। কয়েক বার পাকা কংক্রিটের সেতু তৈরির জন্য শিলান্যাস হলেও আজও কাজ শুরু হয়নি। পাকা সেতুর দাবিতে গ্রামের মানুষ রাস্তা অবরোধ করেছিলেন। প্রশাসন থেকে আশ্বাস দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু কাজের কাজ কিছু হয়নি।
সুরজিৎ সরকার: পাকা সেতুর না থাকায় যানবাহন নিয়ে মানুষকে ৬ কিলোমিটার পথ ঘুরে যাতায়াত করতে হয়। চাষিরাও খেতের ফসল ঘুরপথে হাটে-বাজারে নিয়ে যেতে বাধ্য হন। সেতু খুবই দরকার।
আরতি বিশ্বাস: বাজিতপুরে ইছামতী নদীর উপরে পাকা কংক্রিটের সেতু আছে। কিন্তু সেতুতে আলো নেই। আমাদের বাড়ির এলাকাতেও রাস্তায় আলো নেই। সন্ধ্যার পরে রাস্তা অন্ধকারে ডুবে যায়। যাতায়াত করতে ভয় করে। পঞ্চায়েতের সমস্ত এলাকায় রাস্তায় আলোর ব্যবস্থা করা দরকার।
সুরজিৎ: ঠিকই। বাজিতপুর সেতুতে আলো না থাকায় রাতে নেশাসক্ত অনেকের আনাগোনা লেগে থাকে ওখানে। কিছু দিন আগে ওখানে এক যুবক খুন হয়েছিল।
বিশ্বজ্যোতি: আমাদের এখানকার মানুষের সব থেকে বড় সমস্যা কিন্ত সিন্দ্রাণী গ্রামীণ হাসপাতাল থেকে উন্নত চিকিৎসা পরিষেবা না পাওয়া। আমার বয়স এখন ৩৪ বছর। বাবা-কাকাদের মুখে শুনেছি, এই হাসপাতালে আগে রোগী ভর্তির ব্যবস্থা ছিল। আমি অবশ্য দেখিনি। আমাদের দাবি, ২৪ ঘণ্টা চিকিৎসক-নার্স, স্বাস্থ্যকর্মীদের হাসপাতালে থাকতে হবে। রোগী ভর্তির ব্যবস্থা করতে হবে।
সুরজিৎ: এখন একজন মাত্র চিকিৎসক সপ্তাহে ৫ দিন হাসপাতালে আসেন। সকাল ১০টার পরে তিনি আসেন। কিছু সময় বহির্বিভাগে রোগী দেখে দুপুর দেড়টা নাগাদ ফিরে যান। দুপুরের পরে কোনও মানুষ অসুস্থ হলে অসহায় অবস্থায় পড়তে হয় আমাদের।
অম্লান: কোনও মানুষ গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়লে তাঁকে সাড়ে তিন কিলোমিটার দূরে নদিয়ার দত্তপুলিয়া গ্রামীণ হাসপাতালে বা ১৮ কিলোমিটার দূরের বাগদা ব্লক গ্রামীণ হাসপাতালে নিয়ে যেতে হয়।
বিশ্বজ্যোতি: দত্তপুলিয়া হাসপাতালে রোগী নিয়ে গেলে আমাদের সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করা হয় হামেশাই।
শুভজিৎ দাস: আমাদের এখানে আরও একটি সমস্যা, সরকারি ভাবে রোগী নিয়ে যাওয়ার জন্য কোনও অ্যাম্বুল্যান্স পরিষেবা নেই। বনগাঁ মহকুমা হাসপাতালে গাড়ি ভাড়া করে রোগী নিয়ে যেতে হলে ১৪০০ টাকা গাড়ি ভাড়া পড়ে। অ্যাম্বুল্যান্স পরিষেবা চালু করাটা জরুরি।
রাকেশ: ইছামতী নদীর দিকে তো তাকানো যায় না। সারা বছর নদী কচুরিপানায় ভরে থাকে। দত্তপুলিয়া বাজারের আবর্জনা নদীতে ফেলা হয়। জল দূষিত হচ্ছে। নদীর পূর্ণাঙ্গ সংস্কারের প্রয়োজন।
অভিজিৎ: এলাকায় চুরি বেড়েছে। ফাঁকা বাড়ি রেখে কেউ বেরোতে পারেন না। সাইকেল-বাইকও চুরি হচ্ছে। পুলিশের নজরদারি আরও বাড়ানো প্রয়োজন।
বিশ্বজ্যোতি: পঞ্চায়েত থেকে শংসাপত্র বা প্রধানের সই সহজেই পাওয়া যায়, এটা একটা সুবিধা। অনেক কাঁচা রাস্তা ঢালাইও হয়েছে। সজলধারা প্রকল্পে পরিস্রুত পানীয় জলের ব্যবস্থা করা হয়েছে। কমিউনিটি টয়লেট করা হয়েছে।
আরতি: এখন কিছু রাস্তা ভাঙাচোরা ও বেহাল অবস্থায় আছে। সেগুলির সংস্কার দরকার।
রাকেশ: তবে আমাদের একটা বড় চিন্তা, কর্মসংস্থান নিয়ে। এখানে রাজ্য সরকারের চাকরি বলতে পুলিশের চাকরি। যাদের উচ্চতা কম, তাদের সেই সুযোগও নেই। রাজ্য সরকারের দফতরগুলিতে নিয়োগ বন্ধ। সেগুলি চালু করা দরকার। এলাকায়কাজ নেই বলে অনেকেই ভিন্ রাজ্য বা ভিন্ দেশে কাজ করতে যেতে বাধ্য হন।
বিশ্বজ্যোতি: খয়রামারি শ্মশানের পরিকাঠামো বাড়ানো দরকার।
আরতি: এখানের অনেক নাটকের দল ও সাংস্কৃতিক সংগঠন থাকলেও কোনও অডিটোরিয়াম নেই। সে দিকেও নজর দিতে হবে।
রাহুলদেব বিশ্বাস: পারমাদনে বিভূতিভূষণ অভয়ারণ্যকে ইকো টুরিজম হিসাবে গড়ে তুললে কর্মসংস্থান বাড়বে। পারমাদনে টিকিটের দাম কমাতে হবে। রাঘবপুর বাওড়ের সংস্কারও জরুরি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy