মগরাহাটে সমস্যায় শাসক দল। প্রতীকী চিত্র।
১৯৯৮ সালে, জন্মলগ্ন থেকেই মগরাহাট ১ ব্লকে তৃণমূলের জয়যাত্রা শুরু হয়। সে সময়ে সিপিএমের দুর্গে ফাটল ধরিয়ে ১১টি পঞ্চায়েতের মধ্যে ৬টি দখল করেছিল তারা। ২০০৩ সালে পঞ্চায়েত নির্বাচনে তৃণমূল ৫টি পঞ্চায়েত দখল করে। একই ভাবে ২০০৮ সালে তারা জেতে ৭টি পঞ্চায়েত। ২০১১ সালের পরে তৃণমূল সাংগঠনিক ভাবে আরও শক্তিশালী হয়ে ওঠে। বর্তমানে এলাকার সব পঞ্চায়েত, পঞ্চায়েত সমিতিই তাদের দখলে। কিন্তু গত কয়েক বছরে এলাকায় পঞ্চায়েত স্তরে তৃণমূলের জনপ্রতিনিধি, এমনকী বিধায়কের বিরুদ্ধেও মানুষের ক্ষোভ বেড়েছে বলে অভিযোগ। সেই সঙ্গে মাথাচাড়া দিয়েছে দলের গোষ্ঠীকোন্দল। এ দিকে, ক্রমশ শক্তি বাড়াচ্ছে আইএসএফএবং বিজেপি। লড়াইয়ে ফিরছে সিপিএমও। এই পরিস্থিতিতে আসন্ন পঞ্চায়েত ভোট তৃণমূলের কাছে বড় পরীক্ষা বলেই মনে করছে রাজনৈতিক মহল।
স্থানীয় সূত্রের খবর, আমপানের ক্ষতিপূরণ থেকে শুরু করে আবাস-দুর্নীতির অভিযোগ ঘিরে গত কয়েক বছরে বার বার মানুষের ক্ষোভের মুখে পড়েছেন তৃণমূলের জনপ্রতিনিধিরা। অনেকের বিরুদ্ধে দুর্ব্যবহার ও দুর্নীতির অভিযোগ তুলেও বার বার সরব হয়েছেন স্থানীয় মানুষের একাংশ। স্থানীয় সূত্রের খবর, এলাকায় দলের সামনের সারির বেশিরভাগ নেতার বিরুদ্ধেই দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। বিধানসভা নির্বাচনে ভোট পরবর্তী হিংসার শিকার হয়েছিলেন ওই এলাকার বিজেপির প্রার্থী মানস সাহা। পঞ্চায়েত ভোটের সময় মনোনয়নপত্র তোলা নিয়েও তৃণমূলের সংঘর্ষ হয়। পুলিশকে গুলি চালাতে হয়েছিল। গুলিতে জখম হন পুলিশকর্মীও। দুর্নীতি, দুর্ব্যবহারের সঙ্গে তাই ভোট সন্ত্রাসের অভিযোগও রয়েছে তৃণমূল নেতৃত্বের বিরুদ্ধে। রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের মতে, তার প্রভাব পড়তে পারে আসন্ন পঞ্চায়েতে নির্বাচনে।
এলাকায় দলের কোন্দলও বড় আকার নিয়েছে। দলের জন্মলগ্ন থেকেই মগরাহাট পশ্চিমকেন্দ্রের বিধায়ক গিয়াসউদ্দিন মোল্লার ছায়া সঙ্গী ছিলেন মানবেন্দ্র মণ্ডল, ইমরান হাসানেরা। বর্তমানে বিধায়কের সঙ্গে ওই নেতাদের সম্পর্ক তিক্ত বলে জানাচ্ছেন দলেরই একটি সূত্র। দল মূল এবং যুব সংগঠনে বিভক্ত হয়ে গিয়েছে। দু’পক্ষের দ্বন্দ্বে গুলি চলেছে, মৃত্যুও হয়েছে।
বেশ কিছু পঞ্চায়েতের প্রধানকে সরিয়ে বিধায়ক নিজের পছন্দের লোককে পদে বসাচ্ছেন বলে অভিযোগ ওঠে কিছু দিন আগে। উত্তর কুসুম পঞ্চায়েতে প্রধানকে সরানোর প্রক্রিয়ায় বাধা দেন ওই পঞ্চায়েতের যুব সভাপতি সুজাউদ্দিন মোল্লা। ২০২১ সালের ১৯ ডিসেম্বর গুলি করে খুন করা হয়েছিল ওই যুবককে। খুনের পিছনে বিধায়কের হাত আছে বলে অভিযোগ ওঠে। ঘটনাকে কেন্দ্র করে এলাকায় দুই গোষ্ঠীর দ্বন্দ্বও চরমে উঠেছিল। দ্বন্দ্ব মেটাতে দু’পক্ষকে নিয়ে আলোচনায় বসেছিলেন ঊর্ধ্বতন নেতৃত্ব। কিন্তু তাতেও সমস্যা মেটেনি বলে দলেরই অনেকের মত।
মগরাহাট ১ পঞ্চায়েত সমিতির সহ-সভাপতি মানবেন্দ্র মণ্ডলের দাবি, “১৯৯৮ সালে আমি তখন শেরপুর পঞ্চায়েতের উপপ্রধান, বিধায়ক ছিলেন শিরাকোল পঞ্চায়েতের প্রধান। বিধানসভা ভোটে দাঁড়ানোর পর থেকে আমি ছায়াসঙ্গী ছিলাম। নির্বাচনে মুখ্য এজেন্টের কাজ করেছি। কিন্তু বিধায়ক হওয়ার পর থেকে বেশ কয়েক বছর ধরে নিজের ইচ্ছে মতো কাজ করে চলেছেন উনি।” বিধায়কের এক সময়ের ছায়াসঙ্গী ইমরান হাসান বলেন, “নিজের ক্ষমতা বলে যা ইচ্ছে করে যাচ্ছেন বিধায়ক। সিপিএম, আইএসএফ কর্মীদের দলে এনে সামনের সারিতে রাখছেন। পুরনো অনেকেই বিধায়কের বিরুদ্ধে বীতশ্রদ্ধ হয়ে রাজনীতি থেকে সরে গিয়েছেন।”
বিধায়ক গিয়াসউদ্দিন মোল্লার অবশ্য দাবি, “কেউ আমার বিরুদ্ধে দশ পয়সার দুর্নীতির অভিযোগে তুলতে পারবেন না। দলের নির্দেশ মেনেই দুর্নীতিগ্রস্তদের বাদ দিয়েছি। করেকম্মে খেতে এসেছিল সব। সংগঠন ঠিক রয়েছে। নিয়মিত সভা, সমিতি, প্রচার করছি।”
স্থানীয় সূত্রের খবর, তৃণমূলের কোন্দলের সুযোগেই মাঠে নেমে পড়েছে বিজেপি এবং আইএসএফ। গত বিধানসভা এবং লোকসভা নির্বাচনে বিজেপি ভাল ফল করে। ২০২১ বিধানসভা নির্বাচনে বেশ কিছু বুথে তৃণমূলের থেকে এগিয়ে ছিল আইএসএফ।
তবে সাম্প্রতিক কালে বিজেপিকে সে ভাবে কর্মসূচিতে দেখা যাচ্ছে না বলে জানাচ্ছেন স্থানীয় লোকজন। বড় মিছিল-মিটিংও হচ্ছে না। গত পঞ্চায়েত নির্বাচনে হরিহরপুর পঞ্চায়েতে বিজেপি জিতলেও পরে তৃণমূলে দখলে চলে যায়। নিজেদের দ্বন্দ্বে অনেক বিজেপি নেতা মুখ ফিরিয়ে নিয়েছেন বলেও দাবি। যদিও বিজেপির সুন্দরবন সাংগঠনিক জেলার সহ-সভাপতি শ্যামাপ্রসাদ হালদার বলেন, “বুথ স্তরের কমিটি অনেক বেশি শক্তিশালী করা গিয়েছে। বুথভিত্তিক সাংগঠনিক শক্তিবৃদ্ধির জন্য প্রতিটি বুথে সভা করতে বলা হয়েছে। তৃণমূলের বিরুদ্ধে দুর্নীতি, স্বজনপোষণ-সহ নানা অভিযোগ তুলে প্রচার করা হচ্ছে। তবে কিছুটা হলেও সংগঠন দুর্বল আছে, চাঙ্গা করার চেষ্টা চলছে।”
ব্লকের আইএসএফ নেতা আজিজ আল হাসান বলেন, “পঞ্চায়েতে নির্বাচনে আমরা ভাল ফলাফল করব। নিয়মিত বুথভিত্তিক কর্মী বৈঠক হচ্ছে। মানুষের সাড়া ভাল মিলছে। তৃণমূলের বিরুদ্ধে দুর্নীতি, তোলাবাজি, চুরি, দুর্ব্যবহার-সহ নানা বিষয় প্রচারের কাজে লাগানো হচ্ছে।”
মগরাহাটের ১ ব্লক তথা মগরাহাট পশ্চিম কেন্দ্র এক সময়ে দুর্ভেদ্য ঘাঁটি ছিল সিপিএমের। কিন্তু ২০১১ সালের পর থেকে এক এক করে হাতছাড়া হয় পঞ্চায়েত, পঞ্চায়েত সমিতি, জেলা পরিষদ। সংগঠনের অভাবে অনেকেই বিজেপি ও তৃণমূলে যোগ দেয়। তবে বর্তমানে পরিস্থিতি অনুকূলে বলে দাবি ব্লকের সিপিএম নেতা মুজাহিদ কবীর শিরওয়ানি, চন্দ্রকান্ত সর্দারদের। তাঁরা জানান, নিয়মিত মিছিল-মিটিং হচ্ছে। ভুল বুঝে যাঁরা বিজেপি বা তৃণমূলে গিয়েছিলেন, তাঁরা আবার ফিরে আসছেন। তবে এখনও সন্ত্রাসের পরিবেশ রয়েছে বলেই অভিযোগ তাঁদের। উস্তি, কালিকাপোতা শিরাকোল, লক্ষ্মীকান্তপুর পঞ্চায়েত এলাকায় প্রচারই করা যাচ্ছে না বলে অভিযোগ বামেদের।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy