শাসকদলের আধিপত্য ভাঙড়ে। প্রতীকী চিত্র।
এক সময়ে সিপিএমের ‘লাল দুর্গ’ এখন রং পাল্টে সবুজ। ১৯৭৭ সাল থেকে ক্যানিং ২ ব্লক তথা ক্যানিং পূর্ব বিধানসভা থেকে নির্বাচিত হয়ে রাজ্যের মন্ত্রী হন রেজ্জাক মোল্লা। ২০১১ সালে যখন সারা রাজ্যে পালাবদল হয়, তখনও এই কেন্দ্র থেকে সিপিএমের টিকিটে জয়ী হয়েছিলেন রেজ্জাক। একদা তাঁর ‘ডান হাত’ বলে পরিচিত সওকাত মোল্লাকে ২০১১ সালে সিপিএম থেকে বহিষ্কার করা হয়। তিনি সে সময়ে ছিলেন ক্যানিং ২ পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি।
এরপর থেকেই ক্যানিং ২ ব্লকে প্রভাব বাড়াতে থাকে তৃণমূল। তত দিনে রাজ্যেও ক্ষমতায় এসেছে তারা। সে সময়ে ২২ জন পঞ্চায়েত সমিতির সদস্যের মধ্যে ১৯ জন এবং ৯টি গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধানের মধ্যে ৪ জন-সহ একাধিক সদস্য সওকাতের হাত ধরে তৃণমূলে যোগ দেন। পরবর্তী সময়ে পঞ্চায়েত,পঞ্চায়েত সমিতি, জেলা পরিষদের সদস্যেরা তৃণমূলে যোগ দেন।
২০১২ সালে খুন হন তৎকালীন ক্যানিং ২ ব্লক তৃণমূল সভাপতি মানিক পাইক। কিছু দিনের মধ্যেই রাজ্জাক সর্দার নামে আরও এক ব্লক নেতাকে হত্যা করা হয়। এই ঘটনায় নাম জড়ায় নজরুল মোল্লা, হাসান মোল্লা, আসরাফ মোল্লা, জাহাঙ্গির খান চৌধুরী-সহ বেশ কয়েক জন তৃণমূল কর্মীর। দীর্ঘ দিন জেল খেটে তাঁরা জামিন পান। পরবর্তী সময়ে এঁদের অনেকে আবার আইএসএফে যোগদান করেন।
ক্যানিং দুই ব্লকের ৯টি গ্রাম পঞ্চায়েত, পঞ্চায়েত সমিতির ২৭টি আসন ও জেলা পরিষদের ৩টি আসন। ২০১৮ সালের পঞ্চায়েত নির্বাচনে জেলা পরিষদের ১৮ নম্বর আসনে তৃণমূলের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে বিজেপি, সিপিএম, এসইউসি। ৬৪ হাজার ভোটে তৃণমূল জিতে যায়। পঞ্চায়েত, পঞ্চায়েত সমিতি ও জেলা পরিষদের বাকি ২টি আসনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়ী হয় তৃণমূল। ২০১৩ সালের পঞ্চায়েত নির্বাচনে সারেঙ্গাবাদ, দেউলি ১,২, কালীকাতলা এলাকায় কয়েকটি বুথে সিপিএমের সঙ্গে তৃণমূলের প্রতিদ্বন্দ্বিতা হয়। তবে সেখানেও তৃণমূল জেতে। পঞ্চায়েত সমিতি ও জেলা পরিষদের আসনেও লড়াই হয় তৃণমূলের সঙ্গে বিরোধীদের। তবে সব ক’টি আসনেই তৃণমূল জিতে যায়। অধিকাংশ পঞ্চায়েতে সিপিএম প্রার্থী দিলেও পরবর্তী সময়ে অধিকাংশ আসন থেকে মনোনয়ন প্রত্যাহার করে নেয়।
২০১৬ বিধানসভা নির্বাচনে ক্যানিং পূর্ব বিধানসভা কেন্দ্র থেকে ৫০ হাজারেরও বেশি ভোটে জিতে বিধায়ক হন সওকাত মোল্লা। ২০২১ বিধানসভা নির্বাচনেও ওই কেন্দ্র থেকে ফের জয়ী হন সওকাত। তবে বোদরা, দুর্গাপুর ও শাঁকশহর অঞ্চলে লিড পায় আইএসএফ। তাড়দহ অঞ্চলে লিড পায় বিজেপি। দেউলি ১ অঞ্চলে লিড পায় আইএসএফ। ভোট পরবর্তী সময়ে আইএসএফ, বিজেপি থেকে অনেকেই তৃণমূলে যোগ দেয়। বিরোধীদের অভিযোগ ছিল, এলাকায় ভোটের পরে সন্ত্রাস করেছে তৃণমূল। পুলিশ অত্যাচার চালিয়েছে। বিরোধীদের অভিযোগ কোনও সময়েই মানেনি ঘাসফুল শিবির।
বিরোধী শিবিরে মাঝে মধ্যে পালে হাওয়া লাগলেও নেতৃত্বের অভাব চোখে পড়ে। বাম-আইএসএফ-বিজেপির বড়সড় কর্মসূচি অনেক কাল দেখা যাচ্ছে না।
আইএসএফের জেলা সভাপতি আব্দুল মালেক বলেন, ‘‘বিধানসভা নির্বাচনের আগে থেকে ওই এলাকায় যাঁরা আমাদের নেতৃত্ব দিচ্ছিলেন, তাঁদের অর্থনৈতিক ভাবে পঙ্গু করে দেওয়া হয়েছে। আমাদের যাঁরা দলীয় নেতা-কর্মী, তাঁরা কেউ তৃণমূলের কাছে মাথা নিচু করেননি। আমাদের সঙ্গেই আছেন। নির্বাচন ঘোষণা হলে সকলকে দেখতে পাওয়া যাবে। আমাদের দলীয় কর্মীদের এই মুহূর্তে ব্লক এলাকায় কোনও কর্মসূচিতে সামনে আনা হচ্ছে না। সংগঠন মজবুত করার কাজ ভিতরে ভিতরে চলছে।’’ সিপিএমের রাজ্য কমিটির সদস্য তুষার ঘোষের কথায়, ‘‘বিধানসভা নির্বাচনের নিরিখে ক্যানিং ২ ব্লকের দেউলি ১, ২, তাম্বুলদহে আমাদের সংযুক্ত মোর্চা জয়ী হয়েছিল। কিন্তু ভোট পরবর্তী হিংসা, সন্ত্রাসের কারণে অনেকেই বসে গিয়েছেন। রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসের কারণে আমাদের সংগঠন কিছুটা দুর্বল হয়ে পড়েছে। বিরোধীরা এলাকায় মিটিং, মিছিল করতে পারে না। ব্লক এলাকায় কোনও গণতন্ত্র নেই।’’
এ বিষয়ে বিজেপির রাজ্য কমিটির সদস্য সুনীপ দাস বলেন, ‘‘ওখানে সিপিমের আমল থেকেই কোনও ভোট হয় না। ভোট হলে মানুষ তৃণমূলকে ছুড়ে ফেলে দেবে। যেখানেই ভোট হবে, সেখানেই তৃণমূল হারবে। শাসকদলের সন্ত্রাসের কারণে আমাদের সংগঠন কিছুটা দুর্বল। পুলিশ নিরপেক্ষ ভূমিকা পালন করলে নির্বাচনের ফলাফল অন্য রকম হবে।’’
বিরোধীদের অভিযোগ উড়িয়ে দিয়ে বিধায়ক সওকাত মোল্লা বলেন, ‘‘গত কয়েক বছরে আমাদের সরকার এই এলাকায় যে উন্নয়ন করেছে, তার নিরিখে মানুষ বাকিদের প্রত্যাখ্যান করেছেন। ব্লক এলাকায় আমাদের নেতা-কর্মীরা সমস্ত সরকারি পরিষেবা মানুষের কাছে পৌঁছে দিচ্ছেন। অন্য দিকে সাম্প্রদায়িক দল বিজেপি, মৌলবাদী শক্তি আইএসএফের বিভিন্ন বিষয় স্থানীয় মানুষ মেনে নেননি।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy