সুভাষ দত্ত। নিজস্ব চিত্র
লড়াই থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন, জানিয়েছিলেন দলকে চিঠি দিয়ে। সেই মতো লিফলেটও ছড়িয়েছিলেন এলাকায়। শুরুতে খানিকটা নিমরাজি থাকলেও পরে দলের অন্য প্রার্থীদের হয়ে প্রচারেও দেখা গিয়েছিল তাঁকে। তবে মনোনয়ন প্রত্যাহারের দিন পেরিয়েছে ততক্ষণে।
এই অবস্থায় নির্দলের টিকিটেই ভোটে জিতে তাক লাগালেন গোবরডাঙার প্রাক্তন পুরপ্রধান সুভাষ দত্ত। প্রার্থিপদ প্রত্যাহারের ঘোষণার পরেও গোটা রাজ্যে এমন নিদর্শন নেই বলে দাবি তাঁর।
তৃণমূল প্রার্থী দেবাশিস চক্রবর্তীকে ৫২৩ ভোটের ব্যবধানে হারিয়ে জয়ী হয়েছেন সুভাষ। ফল প্রকাশের পরে তিনি বলেন, ‘‘দলের নির্দেশ মেনে আমি ভোটের প্রতিদ্বন্দ্বিতা থেকে সরে দাঁড়িয়েছিলাম। কিন্তু ইভিএমে আমার নাম, প্রতীক থেকে গিয়েছিল। ওয়ার্ডের মানুষ সেখানে ভোট দিয়েছেন। আমি গণনা কেন্দ্রেও যাইনি। আমার প্রতি মানুষের ভালবাসা আছে, সেটা বুঝতে পারলাম।’’
তাঁর দাবি, ‘‘নির্দলে দাঁড়ালেও তৃণমূল নেতৃত্ব আমাকে বহিষ্কার করেননি। আমি তৃণমূলেই আছি। প্রার্থিপদ প্রত্যাহার করার পরেও রাজ্যে আর কেউ জয়ী হয়েছেন বলে শুনিনি।’’
গোবরডাঙায় দু’দফায় পুরপ্রধানের পদ সামলেছেন সুভাষ। বছরখানেকের বেশি সময় ছিলেন পুরপ্রশাসক। জন্মলগ্ন থেকে তৃণমূলের সঙ্গে। কিন্তু গত কয়েক বছরে নানা কারণে দলের সঙ্গে বিরোধ প্রকাশ্যে এসেছে সুভাষের।
গোবরডাঙায় পূর্ণাঙ্গ হাসপাতাল চালুর দাবিতে ব্যারাকপুরে প্রশাসনিক বৈঠকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছিলেন সুভাষ। স্থানীয় বাসিন্দাদের দীর্ঘদিনের চাহিদার কথাই তুলে ধরেন তিনি। কিন্তু মুখ্যমন্ত্রী কার্যত ধমক দিয়ে জানিয়ে দেন, এই দাবি পূরণ সম্ভব নয়।
গোটা ঘটনা নিয়ে অসন্তোষ তৈরি হয় স্থানীয় স্তরে। বন্ধ পালিত হয় হয়। তাতে দলের পতাকা ছাড়াই শামিল হন সব দলের স্থানীয় নেতা-কর্মী। দলের সঙ্গে বিভেদ আরও বাড়ে সুভাষের। পুরপ্রধানের পর থেকে সরিয়ে দেওয়া হয় তাঁকে। পরে মমতার বাড়ি যান সুভাষ। ফেরানো হয় পুরপ্রধানের পদ।
এ বার দল টিকিট দেয়নি সুভাষকে। দল ছাড়ার কথা ঘোষণা করে ৬ নম্বর ওয়ার্ড থেকে নির্দলের হয়ে মনোনয়ন জমা দেন তিনি। প্রচারও শুরু করেন।
পরে তৃণমূল নেতৃত্বের অনুরোধে লিফলেট ছড়িয়ে প্রার্থিপদ প্রত্যাহার করেন। তবে ততদিনে মনোনয়ন প্রত্যাহারের দিন পেরিয়ে গিয়েছে।
কয়েকটি ওয়ার্ডে তৃণমূলের হয়ে প্রচার সেরেছেন সুভাষ। তবে ৬ নম্বর ওয়ার্ডের তৃণমূল প্রার্থীর হয়ে তাঁকে প্রচারে দেখা যায়নি। সুভাষ বলেন, ‘‘ওই প্রার্থী আমাকে প্রচারে ডাকেননি। তাই যাইনি।’’ দলের স্থানীয় একটি সূত্র জানাচ্ছে, গোপনে বাড়ি বাড়ি গিয়ে সুভাষ অনুগামীরা তাঁর হয়েই প্রচার চালিয়ে গিয়েছেন।
তৃণমূলের বিক্ষুব্ধ যাঁরা নির্দল বা অন্য দলের হয়ে দাঁড়িয়েছিলেন ভোটে, তাঁদের মধ্যে ৬১ জনকে দল বহিষ্কার করেছিল। তবে কারও নাম জানানো হয়নি। তৃণমূলের একটি সূত্রের দাবি, তালিকায় সুভাষের নাম ছিল না।
পুরভোটের আগে তৃণমূলের ঘোষিত নীতি, দলের কেউ নির্দল হিসেবে জয়ী হলেও তাঁকে ফিরিয়ে নেওয়া হবে না। তবে সুভাষের অবস্থান একেবারেই আর পাঁচ জনের মতো নয়। তাঁকে নিয়ে কী ভাবছে দল?
ফল প্রকাশের পরে জেলায় পুরভোটের কো-অর্ডিনেটর জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক বলেন, ‘‘আমাদের দলের গাউডলাইন হল, নির্দল কাউকে দলে ফিরিয়ে নেওয়া হবে না। সুভাষের বিষয়টি দলের শীর্ষ নেতৃত্বকে জানানো হবে। তাঁরাই সিদ্ধান্ত নেবেন।’’
তবে সুভাষের জয়ের পরে জেলা তৃণমূলের প্রভাবশালী এক নেতার কথায়, ‘‘এ কথা প্রমাণ হল, ৬ নম্বর ওয়ার্ডে আমাদের প্রার্থী নির্বাচন ঠিক ছিল না। মানুষের সমর্থন সুভাষের দিকেই ছিল।’’
সুভাষের ভাই শঙ্কর দত্ত তৃণমূলের বনগাঁ সাংগঠনিক জেলার চেয়ারম্যান। এ বার পুরভোটে দাঁড়িয়ে জয়ী হয়েছেন। দাদার জয় নিয়ে তাঁর প্রতিক্রিয়া, ‘‘আমরা চেয়েছিলাম, ৬ নম্বর ওয়ার্ডে দলের প্রার্থী জয়ী হোন। তা হলে ভাল লাগত। আমরা ওয়ার্ডের মানুষের কাছে সেই আবেদনও করেছিলাম।’’
দল যদি এবার শাস্তিমূলক পদক্ষেপ করে, তা হলে তিনি কী করবেন?
সুভাষ বলেন, ‘‘দলের নির্দেশ মেনে প্রার্থিপদ প্রত্যাহারের কথা ঘোষণা করেছি। লিফলেট ছড়িয়ে তা মানুষকে জানিয়ে দিয়েছি। কয়েকটি ওয়ার্ডে তৃণমূল প্রার্থীদের হয়ে প্রচারও করেছি। এরপরেও দল যদি আমার বিরুদ্ধে কোনও ব্যবস্থা নেয়, তা হলে আর কী করতে পারি!’’
সুভাষের কথায়, ‘‘কাউন্সিলর পদ তো আর যাবে না। কাউন্সিলর হয়ে কাজ করব।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy