—ফাইল চিত্র।
লকডাউনের থাবার বাইরে থাকছে না প্রায় কোনও পেশাই। রুপোর ব্যবসাতেও মন্দা দেখা দিচ্ছে মগরাহাট অঞ্চলে। মগরাহাটের হোটর গ্রামের আশিস বিশ্বাসের রুপোশিল্পের কারখানায় ৭ জন শ্রমিক কাজ করেন। মাসে তাঁদের মাইনে দিতে হয় গড়ে মাথাপিছু প্রায় ১০ হাজার টাকা করে। কিন্তু লকডাউনের আগে থেকেই কারখানার কাজ বন্ধ রয়েছে। ফলে লেনদেন না হওয়ায় নগদ টাকা নেই তাঁর হাতে। বেতনও দিতে পারছেন না শ্রমিকদের। তাতে মালিক-শ্রমিক দু’পক্ষই পড়েছে সঙ্কটে।
ওই এলাকায় রূপো গলানোর কারখানা রয়েছে ১০-১৫টি। প্রতিটি কারখানায় ১৫ থেকে ২০ জন শ্রমিক কাজ করেন। তাঁরা সকলেই পড়েছেন অর্থ সঙ্কটে।
বহু বছর ধরে মগরাহাট ২ ব্লক ধামুয়া উত্তর, ধামুয়া দক্ষিণ হোটর পঞ্চায়েত এলাকায় রত্না, পাঁচপাড়া, মৌখালি, হেঁড়িয়া, বকনড়, বার মৌখালি-সহ ২০-২৫টি গ্রামের কয়েক হাজার মানুষ রুজি-রোজগারের কারণে রুপোশিল্পের উপরে নির্ভরশীল। ওই এলাকায় ছোট ছোট রুপোর কাজের কারখানাও গড়ে উঠেছে। ৪০-৫০ বছর ধরে চলা ওই সব কারখানার কাঁচামাল (রুপো) কলকাতার বড়বাজার থেকে আসে। কয়েক কিলোগ্রাম ওজনের রুপো প্রথমে গালাই কারখানায় নিয়ে গিয়ে গলাতে হয়। ঢালাই করে পাত তৈরি করা হয়। এর পরে সেই পাত কারখানায় এনে মেশিনের সাহায্যে তা থেকে সরঞ্জাম বা অলঙ্কার তৈরি হয়। অলঙ্কারের মধ্যে তৈরি হয় হার, চুড়ি, দুল, বালা, চন্দনবাটি, প্রতিমার ছত্র, থালা, তাজমহল-সহ নানা রকম জিনিস। তৈরির পরে সে সব চলে যায় বড়বাজারেই। সেখান থেকে সে সব যায় রাজস্থান, গুজরাত, দিল্লি, মুম্বই-সহ বিভিন্ন রাজ্যের পাইকারি বাজারে।
লকডাউনে পরিবহণ বন্ধ থাকায় বড়বাজার থেকে রুপো আনার কোনও উপায় নেই। অলঙ্কার তৈরি করে সে সব পাঠানোরও কোনও ব্যবস্থা নেই। ফলে রুপো-বাজারে আর্থিক লেনদেন একেবারেই বন্ধ। আর এতেই মালিক এবং শ্রমিক পক্ষের মধ্যে ঘনিয়েছে অর্থনৈতিক সঙ্কট। আর্থিক লেনদেন বন্ধ থাকায় মালিকদের হাতে টাকা নেই। ফলে শ্রমিকেরাও টাকা পাচ্ছেন না। ওই এলাকার রুপো কারখানার এক শ্রমিক সাধন ঘোষ জানান, লকডাউনের জেরে কাঁচামাল না আনতে পেরে কাজ বন্ধ হয়ে গেল। মালিক কিছু টাকা দিলেও তা শেষ হয়ে গিয়েছে অনেকদিন হল। বর্তমানে ওই সব শ্রমিকদের প্রায় অর্ধাহারে দিন কাটাতে হচ্ছে। হোটর কারখানার শ্রমিক রবিন সর্দার বলেন, ‘‘ছ’জনের সংসার। বৃদ্ধ বাবার জন্য আড়াই হাজার টাকার ওষুধ লাগে। হাতে কোনও টাকা পয়সা নেই। ওষুধ তো দুরের কথা, কী ভাবে দুবেলা-দুমুঠো খেয়ে বাঁচব, সেই চিন্তায় ঘুম নেই।’’
শ্রমিকদের মতো মালিকরাও অসহায়। ওই এলাকার বাসিন্দা রুপো কারখানার মালিক দীপঙ্কর হালদার জানান, আর্থিক লেনদেনের অভাবে তাঁদেরও অর্থসঙ্কট তৈরি হয়েছে। সংসার-খরচ চালাতে পারছেন না।
এ বিষয়ে মগরাহাট পূর্ব কেন্দ্রের বিধায়ক নমিতা সাহা বলেন, ‘‘সরকার সকলের জন্যই বিনা পয়সায় চাল-গম দিচ্ছে। এ ছাড়া বিভিন্ন সংস্থা, ক্লাব ত্রাণের ব্যবস্থাও করছে। এখন তো সব বন্ধ রাখতেই হবে। ফলে এ ভাবেই ক’টা দিন চালাতে হবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy