অকেজো নলকূপ। সন্দেশখালির কালীনগরে। ছবি: নবেন্দু ঘোষ।
সম্প্রতি জমি দখল, নারী নির্যাতনের অভিযোগ ঘিরে রাজ্য জুড়ে শিরোনামে এসেছিল সন্দেশখালি। লোকসভা ভোটের মুখে সেই সন্দেশখালির নানা এলাকায় জলকষ্টের ছবি সামনে এল। সমস্যার কথা স্বীকার করে বিডিও (সন্দেশখালি ১) সায়ন্তন সেন বলেন, ‘‘পানীয় জলের তীব্র সমস্যা দেখা দিয়েছে ব্লক জুড়ে। বাড়িতে পানীয় জলের পাইপলাইন বসানোর কাজ সম্পূর্ণ হলে এই সমস্যা হত না।’’
বাসিন্দারা জানান, গরম পড়তে না পড়তেই পানীয় জলের তীব্র সঙ্কট দেখা দিয়েছে সন্দেশখালি ১ ব্লকের ৮টি পঞ্চায়েত এলাকা জুড়েই। কেউ জলের জার কিনছেন। যাঁদের সেই সামর্থ্য নেই, তাঁরা বহু দূরের কল থেকে দীর্ঘক্ষণ লাইনে দাঁড়িয়ে জল নিচ্ছেন। কেউ আবার মাঠের মধ্যে চাষের জন্য যে সাবমার্সিবল পাম্পের জল সংগ্রহ করতে বাধ্য হচ্ছেন।
প্রশাসন সূত্রের খবর, জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতরের বাড়ি বাড়ি পানীয় জলের পাইপ লাইন পৌঁছে দেওয়ার কাজ বেশিরভাগ জায়গায় এখনও সম্পূর্ণ হয়নি। কিছু জায়গায় বাড়িতে পানীয় জলের পাইপ লাইন গেলেও জল মিলছে না বলে অভিযোগ। কোথাও আবার জল অনিয়মিত। কোথাও কল থেকে সরু সুতোর মতো জল পড়ে বলে অভিযোগ।
ব্লক প্রশাসন ও স্থানীয় সূত্রের খবর, ব্লকের ৮টি পঞ্চায়েতের মধ্যে ন্যাজাট ২, কালীনগর, শেয়ারা রাধানগরের মতো পঞ্চায়েত এলাকা জুড়ে পানীয় জলের তীব্র সঙ্কট তৈরি হয়েছে। ব্লকের সব থেকে বেশি জনসংখ্যা এই পঞ্চায়েতগুলিতেই।
কালীনগর পঞ্চায়েত এলাকায় যতগুলি সরকারি নলকূপ ছিল, প্রায় সব ক’টিই গত দু’মাস ধরে অকেজো হয়ে পড়েছে। কালীনগর মৌজার কিছু বাড়িতে গত দু’তিন ধরে মাস নলবাহিত পানীয় জল গেলেও তা নিয়মিত নয়। কালীনগর গ্রামের বাসিন্দা শ্রীধর মণ্ডল, অজয় দাস বলেন, ‘‘জল অনিয়মিত আসে। গতি না থাকায় এক বোতল জল ভরতে দীর্ঘক্ষণ সময় লাগে।’’
কালীনগর পঞ্চায়েতেরই দক্ষিণ কালীনগর, কালীনগর চরপাড়া, ঘোষপুর মণ্ডলপাড়া, গজালিয়া এফ পি স্কুল চত্বরে জলের পাইপ লাইন কিছু জায়গায় পৌঁছলেও বাড়ি বাড়ি জল যায়নি আজও।বেদেমারি, ঘটিহারা, সিংহপাড়ায় জল পৌঁছলেও গতি খুবই কম। স্থানীয় বহু বাসিন্দাদেরই ২০ লিটার জলের জার ২০ টাকা দিয়ে কিনে খেতে হয়। তা ছাড়া, যখন মাঠে ধানে চাষের জন্য জল দেওয়া হয়, তখন সেই জল কলসি করে আনতে যান অনেকে।
শেয়ারা রাধানগর পঞ্চায়েত এলাকার ১৯টি বুথের মধ্যে সব জায়গাতেই পানীয় জলের সমস্যা। এই পঞ্চায়েত এলাকায় প্রায় ৩৫ হাজার মানুষের বসবাস। স্থানীয় বাসিন্দাদের দাবি, পাইপলাইন কিছু জায়গায় দু’বছর আগে বসেছে। তবে আজও জল আসেনি। রায়পুর, তেঁতুলপাড়া এলাকায় পাইপ পৌঁছে গেলেও জল যায়নি।
ওই পঞ্চায়েতেরই গাজিপাড়া, ভোলাখালি, নিত্যবেড়িয়া গ্রামে পানীয় জলের পাইপলাইনটুকুও এখনও পৌঁছয়নি। পঞ্চায়েতের উপপ্রধান মান্নান মোল্লা বলেন, ‘‘গ্রীষ্মের শুরুতেই জলস্তর নেমে যাওয়ায় গোটা পঞ্চায়েত জুড়ে দু’একটি সরকারি নলকূপ ছাড়া সব অকেজো হয়ে গিয়েছে। জল কিনে খেতে হচ্ছে। সেচের জল খাচ্ছেন অনেকে।’’
ন্যাজাট ২ পঞ্চায়েত এলাকাতেও বাড়ি বাড়ি পানীয় জলের পাইপলাইন বসানোর কাজ সম্পূর্ণ হয়নি। কাজ থেমে রয়েছে। অনেক নলকূপ খারাপও হয়ে গিয়েছে জলস্তর নেমে যাওয়ায়। হাতেগোনা কয়েকটি গভীর নলকূপে এখনও জল উঠছে। অনেক পথ পেরিয়ে সেখানেই জল নিতে আসেন অনেকে।
জল পৌঁছে দেওয়া যে দফতরের দায়িত্ব, সেই জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতর বেশ কিছু দিন ধরে কাজ করছে না বলে স্থানীয়দের অভিযোগ। দফতরের হাসনাবাদ জোনের আধিকারিক অনীশ অঞ্জন ঘোষ বলেন, ‘‘বাড়ি বাড়ি পানীয় জল ২০২৪ সালের মধ্যে যাতে ভাল ভাবে পৌঁছে যায়, সেই মতো কাজ চলছে। কিছু জায়গায় কিছু সমস্যা সামনে এসেছে পাইপ বসানোর পরে। তা আমরা ঠিক করছি।’’ কিছু জায়গায় অভিযোগ পেয়ে সমস্যার সমাধানও করা হয়েছে বলে তাঁর দাবি।
সন্দেশখালির এই অনুন্নয়নের ছবি সামনে আসার পরেই শাসক দল তৃণমূলকে বিঁধেছে বিজেপি। ন্যাজাটের বিজেপি নেতা শান্তি ভুঁইঞা বলেন, ‘‘তীব্র পানীয় জলের সমস্যা ব্লক জুড়ে। তৃণমূল সরকার মানুষের জলের কষ্ট মেটাতে পারছে না। ভোট চাইবে কোন মুখে?’’ স্থানীয় তৃণমূল নেতা বিকাশ মণ্ডলের দাবি, ‘‘জলের সমস্যার সমাধান করতে আমাদের সরকার কাজ করছে। বিরোধীরা সমস্যা বড় করে দেখাচ্ছে।’’
বিডিও জানান, আপাতত জলের সমস্যা মেটানোর জন্য জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতরকে কিছু দিন পঞ্চায়েত এলাকাগুলিতে পানীয় জলের ট্যাঙ্ক পাঠাতে বলা হয়েছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy