প্রতীকী ছবি।
আসন্ন বিধানসভা ভোটে শাসকদল বিরোধী আরও নানা দলের আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দুতে ভাঙড়। ফুরফুরাশরিফের পিরজাদা আব্বাস সিদ্দিকি আগেই ঘোষণা করেছিলেন, রাজ্যের যে কয়েকটি আসনে প্রার্থী দিতে চান তাঁরা, তার মধ্যে অন্যতম ভাঙড়। মিমও সম্প্রতি জানিয়েছে, এ রাজ্যের ভোটে ভাঙড়-সহ কয়েকটি আসনে লড়বে তারা। পাওয়ার গ্রিড বিরোধী আন্দোলনের সময় থেকে রাজ্য রাজনীতিতে নজর কাড়ে জমি কমিটি। পঞ্চায়েত ভোটে লড়ে সাফল্যও পায় তারা। এ বার ভাঙড় আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে ইতিমধ্যে প্রচার শুরু করে দিয়েছে তারা। শাসক দলের বিরুদ্ধে দুর্নীতি এবং অনুন্নয়নের মতো বিষয়গুলিকে প্রচারে সামনে আনছে তারা। ধর্মের ভিত্তিতে ভোট ভাগাভাগির চেষ্টা চলছে বলে প্রচার চলছে। অন্য দিকে, আব্বাস সিদ্দিকির সংগঠন বা মিম তুলে ধরছে সংখ্যালঘু, দরিদ্র মানুষের জন্য তৃণমূল যে বিশেষ কিছু করেনি, সে কথা। তবে সরাসরি রাজনৈতিক প্রচার এখনও শুরু করেনি এই দুই শিবির।
এতগুলি দলের ভোট কাটাকাটিতে তৃণমূল ভাঙড়ে ক্ষমতা ধরে রাখতে পারবে কিনা, তা নিয়ে কৌতূহলও তৈরি হয়েছে রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের মধ্যে। আর মাঝখান থেকে বিজেপির ভাগ্যে শিকে ছেঁড়ে কিনা, তা নিয়েও চলছে জল্পনা।
২০১৯ লোকসভা নির্বাচনে যাদবপুর আসনে লড়েছিলেন সিপিএমের বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য। তাঁর সমর্থনে ভাঙড়ে প্রচারে করেছিল জমি কমিটি। ২০২১ বিধানসভা নির্বাচনে তারা সরাসরি ভাঙড় বিধানসভা কেন্দ্রে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার কথা ঘোষণা করেছে। নির্বাচনে সিপিএমের সমর্থন পাওয়ার জন্য লিখিত ভাবে আবেদন করেছে বলে তারা জানিয়েছে।
আব্বাস সিদ্দিকির আহলে সুন্নাতুল জামাত, ওয়েইসির অল ইন্ডিয়া মজলিশ ই-ইত্তেহাদুল মুসলিমিন (মিম) শাসকদলের সংখ্যালঘু ভোটব্যাঙ্ক ভেঙে বিজেপির হাত শক্ত করছে বলে মনে করে তৃণমূল। যদিও বিজেপি এবং ওই দুই ধর্মীয় সংগঠন সে কথা মানতে নারাজ। সংখ্যালঘু অধ্যুষিত ভাঙড় বিধানসভা কেন্দ্রে ওই দুই সংগঠনের মধ্যে আসন সমঝোতা হয় কিনা, তা-ও দেখার বিষয়। এই পরিস্থিতিতে আব্বাসকে নিজেদের দিকে টানতে উঠে-পড়ে লেগেছে বাম-কংগ্রেস। প্রদেশ সভাপতি অধীররঞ্জন চৌধুরী ইতিমধ্যে ফুরফুরাশরিফে গিয়ে আব্বাসের সঙ্গে দেখা করেছেন।
এই আবহে ফুরফুরা শরিফের আর এক পিরজাদা ত্বহা সিদ্দিকিকে অবশ্য পাশে পাচ্ছে তৃণমূল। তিনি ইতিমধ্যে আব্বাস সিদ্দিকির সমালোচনা করে এবং তৃণমূলেক প্রশংসা করে সভাও করেছেন।
ভাঙড় বিধানসভা কেন্দ্রে ভোটারের সংখ্যা ২ লক্ষ ৬৭ হাজার ৬৯৭। এর মধ্যে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ভোট প্রায় ৬৭ শতাংশ। লোকসভার নিরিখে ভাঙড় বিধানসভা এলাকায় শাসকদল তৃণমূল পেয়েছিল ১,৪৬,৭২৩টি ভোট। বিজেপি পেয়েছিল ২৪,৯৬৩টি ভোট। সিপিএম পেয়েছিল ৩৪,৭৫৮টি ভোট। পরিসংখ্যান অনুযায়ী, সংখ্যালঘু ভোট ভাগাভাগি হয়ে গেলে বিজেপির জেতা অনেক সহজ হয়ে যাবে বলে মনে করছেন রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের একাংশ।
২০১৬ সালে বিধানসভা ভোটে তৃণমূলের আব্দুর রেজ্জাক মোল্লা প্রায় ১৮ হাজার ভোটে জয়লাভ করেছিলেন। সে সময় ভাঙড় বিধানসভা কেন্দ্রে এত ভোট কাটাকাটির খেলা ছিল না। সেই জায়গায় দাঁড়িয়ে এ বার বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের পাশাপাশি ধর্মীয় সংগঠন ও জমি কমিটির ভোট কাটাকাটিতে পরিস্থিতি অনেক ঘোরাল হয়ে উঠেছে। সে কথা মেনে নিচ্ছেন তৃণমূলের একাংশও।
ভাঙড়ের জমি কমিটির যুগ্ম সম্পাদক মির্জা হাসান বলেন, ‘‘আমরা আমাদের ব্যানারে এ বার নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করব। আমাদের সঙ্গে সহযোগী দল হিসেবে আছে সিপিআইএমএল রেড স্টার, মজদুর ক্রান্তি পরিষদ সহ বিভিন্ন গণসংগঠন। আমাদের সমর্থনের জন্য ইতিমধ্যে সিপিএমের রাজ্য নেতৃত্বকে লিখিত ভাবে জানিয়েছি। আমরা লোকসভা ভোটে তাদের সমর্থন করেছিলাম।’’ তাঁর কথায়, ‘‘আমরা চাইব, যারা ধর্মীয় মেরুকরণ করতে চাইছেন এবং ধর্মের ভিত্তিতে ভোট ভাগাভাগি করতে চাইছেন, তাঁদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে সকলে আমাদের সঙ্গে থাকুক।’’ সিপিএমের জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য তুষার ঘোষ বলেন, ‘‘জমি কমিটি আমাদের সমর্থন চেয়েছে বলে শুনেছি। তবে ভাঙড়ের মাটিতে তৃণমূলের প্রধান প্রতিপক্ষ সিপিএম। ওদের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা চলছে।’’ তাঁর মতে, জমি কমিটির কাজকর্ম ভাঙড়ের পোলেরহাট ২ পঞ্চায়েতের কয়েকটি গ্রামের মধ্যে সীমাবদ্ধ।
ভোট কাটাকাটি হলে তাদের কি সুবিধা হবে বলে মনে করছেন বিজেপি নেতারা?
দলের ভাঙড় ২ ব্লকের মণ্ডল কমিটির সভাপতি অবনী মণ্ডল বলেন, ‘‘ভাঙড়ে সংখ্যালঘু ভোট কাটাকাটির ফলে আমরা জিতব, এমনটা ভাবা ঠিক নয়। মানুষ তৃণমূলের দুর্নীতি, অপশাসনের বিরুদ্ধে বিকল্প হিসেবে আমাদের চাইছেন। ভাঙড়ের বহু সংখ্যালঘু মানুষও আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করছেন।’’
ভাঙড় ২ ব্লক তৃণমূলের সভাপতি ওহিদুল ইসলামের কথায়, ‘‘ভোটের সময়ে অনেক পরিযায়ী দলের আবির্ভাব ঘটে। ভোট মিটে গেলে তাদের দেখা মেলে না। ভাঙড়ের মানুষ রাজনৈতিক ভাবে খুবই সচেতন। ধর্মের ভিত্তিতে ভোট ভাগাভাগির চেষ্টা মানুষ বুঝতে পারছেন। তাঁরাই যোগ্য জবাব দেবেন।
আহলে সুন্নাতুল জামাতের ভাঙড় ১ ব্লকের সভাপতি শরিফুল মোল্লা বলেন, ‘‘বিজেপি বিরোধী সমস্ত রাজনৈতিক দলকে আহ্বান জানানো হয়েছে। যাঁরা আমাদের সঙ্গে আসবেন না, বুঝে নিতে হবে তাঁরা বিজেপিকে রাজনৈতিক সুবিধা করে দিতে চাইছেন।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy