প্রতীকী ছবি
নদীঘেরা দ্বীপভূমির জনসংখ্যা প্রায় ২১ হাজার। গত ছ’মাসে মাত্র ৪ জনের করোনা সংক্রমণ ধরা পড়েছিল এখানে। দিন কয়েক আগে নতুন করে শ’খানেক মানুষের লালারসের নমুনা পরীক্ষা করা হলেও কারও পজ়িটিভ রিপোর্ট আসেনি।
সুন্দরবনের আর একটি পঞ্চায়েতও দ্বীপভূমি। হাজার ছাব্বিশ মানুষের বাস। এখনও পর্যন্ত মাত্র দু’জনের শরীরে করোনা ধরা পড়েছে।
প্রথম উদাহরণটি পাথরপ্রতিমার শ্রীধরনগর পঞ্চায়েতের। অন্যটি ব্রজবল্লভপুরের।
প্রশাসন ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, পাথরপ্রতিমা ব্লকের ১৫টি পঞ্চায়েতের মধ্যে নদী ও জঙ্গলে ঘেরা পঞ্চায়েতগুলি হল ব্রজবল্লভপুর, শ্রীধরনগর, বনশ্যামনগর, অচিন্ত্যনগর ও জি-প্লট। ওই পঞ্চায়েতগুলিতে যাতায়াতের জন্য একমাত্র জলপথই ভরসা। ভৌগোলিক এই অবস্থানই দ্বীপভূমিগুলিকে করোনা সংক্রমণের হাত থেকে তুলনায় সুরক্ষিত রেখেছে বলে মনে করছেন চিকিৎসকেরা।
মাস ছ’য়েক আগে দু’জন পরিযায়ী শ্রমিক ভিনরাজ্য থেকে ফিরেছিলেন ব্রজবল্লভপুরে। পাথরপ্রতিমা গ্রামীণ হাসপাতালে পরীক্ষার পরে করোনা পজ়িটিভ ধরা পড়েছিল। সে সময়ে তাঁরা কোয়ারান্টিন সেন্টারে থেকে করোনা-মুক্ত হয়ে তবেই বাড়ি ফেরেন। তারপর থেকে একাধিকবার পরীক্ষা হয়েছে গ্রামবাসীদের মধ্যে। কিন্তু কোনও সংক্রমণ ধরা পড়েনি বলে স্বাস্থ্য দফতর সূত্রের খবর।
ওই পঞ্চায়েতের প্রধান অনুপমা বেরা বলেন, ‘‘করোনার শুরু থেকেই সকলকে সচেতন করছি। স্থানীয় প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে অনেকের পরীক্ষা করানো হলেও করোনা পজ়িটিভ মেলেনি।’’
শ্রীধরনগর পঞ্চায়েত অফিসে দিন কয়েক আগে ৭৫ জনের করোনা পরীক্ষা হয়েছে শিবির করে। নতুন করে কেউ আক্রান্ত হননি এখানে। আগে যে চারজন আক্রান্ত হয়েছিলেন, সকলেই সুস্থ হয়ে উঠেছেন।
এখানে কোনও সরকারি স্বাস্থ্য পরিষেবা কেন্দ্র নেই। একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার পরিচালনায় স্বাস্থ্যকেন্দ্রে উপরে বাসিন্দাদের প্রাথমিক চিকিৎসার জন্য নির্ভর করতে হয়। ওই পঞ্চায়েতের প্রধান প্রদ্যুৎ বর্মণ বলেন, ‘‘লকডাউনের পর থেকে ভিড় এড়াতে কড়া পদক্ষেপ করা হয়েছিল। নদীঘেরা এলাকা বলেই বাইরে থেকে কেউ এলে নজরে পড়ে যায়। বহিরাগতদের আটকাতে নৌকো পারাপার দীর্ঘ দিন বন্ধ রাখা হয়েছিল। ফলে এখনও পর্যন্ত আক্রান্তের সংখ্যা তুলনায় আটকানো গিয়েছে।’’ তবে প্রধানের আশঙ্কা, এলাকার চারটি দুর্গাপুজোয় ভিড় হলে সংক্রমণ ছড়াবে না তো! নদীঘেরা বনশ্যামনগর পঞ্চায়েতে ১৭টি সংসদে জনসংখ্যা প্রায় ২৩ হাজার। ওই দ্বীপে এখনও পর্যন্ত তিনজন পরিযায়ী শ্রমিককে নিয়ে মোট ৫ জন আক্রান্ত হয়েছিলেন। সকলেই সুস্থ। এখানেও কোনও স্বাস্থ্যকেন্দ্র নেই। নদী পেরিয়ে প্রায় ১০ কিলোমিটার দূরে পাথরপ্রতিমা গ্রামীণ হাসপাতালে যেতে হয়। এই পরিস্থিতিতেও স্বাস্থ্যকর্মীরা পঞ্চায়েতে গিয়ে নিয়মিত করোনা পরীক্ষা করেছেন বলে পঞ্চায়েত সূত্রের খবর। এখনও পর্যন্ত শিবির করে ৬০০ জনের পরীক্ষা হয়েছে। কিন্তু একটিও পজ়িটিভ মেলেনি।
পঞ্চায়েতের প্রধান কুলদীপ দেববর্মণ বলেন, ‘‘আমরা পঞ্চায়েত থেকে এলাকার মানুষের সচেতন করতে প্রচার চালাচ্ছি। বাইরে থেকে কেউ নদী পেরিয়ে এলে নজরে রাখা হচ্ছে। নদীপথে পারাপার বেশ কিছু দিন বন্ধ রাখা হয়েছিল।’’
অচিন্ত্যনগর পঞ্চায়েতে জনসংখ্যা প্রায় ২৫ হাজার। পঞ্চায়েতের প্রধান দুলালচন্দ্র শিট বলেন, ‘‘এখানে এখনও পর্যন্ত ৫-৬ জনের করোনা পজ়িটিভ মিলেছে।’’ তবে জি-প্লট পঞ্চায়েত এলাকায় কিছু সংক্রমণ দেখা গিয়েছে বলে ব্লক স্বাস্থ্য দফতর সূত্রের খবর। এখানে হাজার ৩০ মানুষের বাস। যে জনা বারো করোনা পজ়িটিভ ধরা পড়েছিল এখানে, তাঁদের বেশির ভাগই বাইরের রাজ্য থেকে ফেরা পরিযায়ী শ্রমিক বলে ব্লক স্বাস্থ্য দফতর সূত্রের খবর।
স্বাস্থ্যকর্তারা জানাচ্ছেন, গোটা পাথরপ্রতিমা ব্লকে এখনও পর্যন্ত আড়াইশো জনের করোনা পজ়িটিভ রিপোর্ট এসেছে। নমুনা সংগ্রহ হয়েছেন প্রায় ১০ হাজার। মৃত্যু হয়েছে মাত্র ১ জনের। তবে জি-প্লট ছাড়া জলপথ ঘেরা ৪টি পঞ্চায়েত তুলনায় অনেক বেশি সুরক্ষিত বলে মনে করছেন স্বাস্থ্য দফতরের কর্তারা। পাথরপ্রতিমা হাসপাতালের বিএমওএইচ গৌতম নস্কর বলেন, ‘‘এলাকার ১৫ পঞ্চায়েতে নিয়মিত পরীক্ষা করা হচ্ছে। গতকালও শ্রীধরনগরে শিবির করা হয়েছিল। সেখানে ৭৫ জনের পরীক্ষা করা হয়েছিল। সব রিপোর্টই নেগেটিভ এসেছে।’’ তিনি জানান, সব পঞ্চায়েত পজ়িটিভ ধরা পড়ছে তবে সংখ্যাটা অনেক কম। এটা বিচ্ছিন্ন এলাকা বলেই আক্রান্ত কম হতে পারে। একই বক্তব্য পাথরপ্রতিমা পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি শেখ রাজ্জাকের।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy