শুষ্ক: জল ওঠে না টিউবওয়েলে। বাসন্তীর গ্রামে তোলা নিজস্ব চিত্র।
গরম পড়তেই নামতে শুরু করেছে ভূগর্ভস্থ জলের স্তর। ফলে দ্রুত অকেজো হয়ে যাচ্ছে এলাকার একের পর এক পানীয় জলের নলকূপ। এই পরিস্থিতিতে যত্রতত্র গজিয়ে উঠছে বেআইনি জলের কারখানা। পরীক্ষানিরীক্ষা ছাড়াই পরিস্রুত পানীয় জলের নামে বোতলবন্দি করে সেই জল বিক্রি করা হচ্ছে। বাধ্য হয়ে বহু মানুষ সেই জলই কিনে পান করছেন।
ক্যানিংয়ের বিভিন্ন এলাকার চিত্রটা এমনই।
সমস্যা অবশ্য নতুন নয়। প্রতি বছরই একদিকে গরমের জন্য ভূগর্ভস্থ জলের স্তর নীচে নেমে যায়। অন্য দিকে, রবি মরসুমে বহু জায়গায় ভূগর্ভস্থ জল পাম্পের মাধ্যমে তুলে চাষের কাজে ব্যবহার করা হয়। এতে জলসঙ্কট আরও তীব্র হয়। গত কয়েক বছরে সঙ্কট বাড়িয়েছে যত্রতত্র গড়ে ওঠা বেআইনি পানীয় জলের কারখানা। এই কারখানাগুলিতে প্রচুর জল অপচয় হয়। কারণ, এখানে একদিকে যথেচ্ছ ভাবে ভূগর্ভস্থ জল তুলে ফেলা হয়। অন্য দিকে, জল পরিস্রুত করার নামে চার ভাগের তিনভাগ জল ফেলে দিয়ে একভাগ জল বোতলবন্দি করে বাজারে বিক্রি করা হয়।
ইতিমধ্যেই ক্যানিংয়ের সঞ্জয়পল্লি, নোনাঘেরি, মিঠাখালি, নিকারিঘাটা, মালিরধার, দিঘিরপাড় এলাকায় পানীয় জলের সঙ্কট দেখা দিয়েছে। এলাকার বেশিরভাগ নলকূপ অকেজো হয়ে পড়েছে। যে দু’একটি নলকূপ থেকে জল মিলছে, তার পরিমাণও খুব কম বলে জানালেন স্থানীয় মানুষ।
শুধু ক্যানিং নয়, বাসন্তী ও গোসাবাতেও একই ভাবে বাড়ছে জলের সমস্যা। বাসন্তীর পালবাড়ি, সোনাখালি-সহ একাধিক জায়গায় পানীয় জলের দাবিতে বিক্ষোভ, আন্দোলনে নেমেছেন মানুষ। বিষয়টি নিয়ে বার বার স্থানীয় পঞ্চায়েত ও বিডিও অফিসে অভিযোগ জানিয়েছেন তাঁরা।
বাসন্তীর বাসিন্দা সুমিত্রা মণ্ডল বলেন, ‘‘প্রায় আড়াই-তিন মাস ধরে পানীয় জলের সমস্যায় ভুগছি। এলাকার দু’টি নলকূপই খারাপ হয়ে গিয়েছে। ৩-৪ কিলোমিটার হেঁটে জল আনতে হচ্ছে।’’ ক্যানিংয়ের নোনাঘেরি গ্রামের বাসিন্দা রথীন দাস বলেন, ‘‘গ্রামের কোনও নলকূপ থেকেই জল পড়ছে না। গত কয়েকদিনে ক্রমশ বেড়েছে সমস্যা। বাধ্য হয়ে গ্রামের জলের কারখানা থেকে বোতলবন্দি জল কিনে খেতে হচ্ছে।’’
পানীয় জলের সমস্যার কথা স্বীকার করে নিয়েছেন ক্যানিং ১ বিডিও শুভঙ্কর দাস। তিনি বলেন, ‘‘ভূগর্ভস্থ জলের স্তর নেমে যাওয়ার কারণেই সমস্যা বেড়েছে। আমরা পরিস্থিতির উপরে নজর রাখছি। জনস্বাস্থ্য ও কারিগরি দফতরকে ইতিমধ্যেই নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, জলসঙ্কটে থাকা এলাকাগুলিতে যাতে ট্যাঙ্কের মাধ্যমে জল পৌঁছে দেওয়া হয়।’’ বেআইনি জলের কারখানা প্রসঙ্গে বিডিও বলেন, ‘‘এগুলির বেশিরভাগই অবৈধ। ইতিমধ্যেই জেলা খাদ্য সুরক্ষা দফতরকে এ বিষয়ে অভিযোগ জানানো হয়েছে। মাঝে মধ্যেই এলাকায় তল্লাশিও চালাচ্ছেন তাঁরা।’’
জলের সমস্যা মেটাতে নলবাহিত পানীয় জল বাড়ি বাড়ি পৌঁছে দেওয়ার ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে জনস্বাস্থ্য ও কারিগরি দফতরের তরফে। ইতিমধ্যেই গোসাবা ব্লকে এ নিয়ে বৈঠক হয়েছে। আগামী ২০২৪ সালের মধ্যে গোসাবার প্রতিটি বাড়িতে নলবাহিত পানীয় জল পৌঁছে যাবে বলে জানিয়েছেন জনস্বাস্থ্য ও কারিগরি দফতরের আধিকারিকেরা। পাশাপাশি ক্যানিং ১ ব্লকের মাতলা ১, মাতলা ২ ও দিঘিরপাড় পঞ্চায়েতের মোট ৪টি মৌজায় বাড়ি বাড়ি পানীয় জল পৌঁছে দেওয়ার কাজও শুরু হয়েছে। প্রায় ১০ কোটি টাকা ব্যয়ে এই প্রকল্প গ্রহণ করেছে পিএইচই। ইতিমধ্যেই কাজ শুরু হয়েছে। আগামী এক বছরের মধ্যে প্রকল্পের কাজ শেষ হবে বলে জানিয়েছেন দফতরের এক আধিকারিক।
ক্যানিং মহকুমার জনস্বাস্থ্য ও কারিগরি দফতরের সহকারী বাস্তুকার প্রণবকুমার সাঁফুই বলেন, ‘‘ইতিমধ্যেই আমরা মহকুমার ৬৪ হাজার বাড়িতে নলবাহিত পানীয় জল পৌঁছে দিয়েছি। চেষ্টা করছি, দ্রুত আরও বেশি মানুষের কাছে জল পৌঁছে দিতে।’’ যত্রতত্র বেআইনি জলের কারখানা গজিয়ে ওঠা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘‘বিষয়টি নিয়ে পদক্ষেপের জন্য পুলিশ-প্রশাসনের কাছে প্রস্তাব রাখব। ৫ এপ্রিল প্রশাসনের আধিকারিক ও জনপ্রতিনিধিদের নিয়ে জল সমস্যা মেটাতে একটি বৈঠক রয়েছে। সেখানেও বিষয়টি উত্থাপন করা হবে।’’
জলের কারখানার এক মালিক বলেন, ‘‘আমরা বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি মেনেই জল পরিস্রুত করি। বার বার বিভিন্ন দফতরের কাছে কারখানার অনুমোদনের জন্য আবেদন করলেও এখনও তা মেলেনি। আমরাও চাই, সরকারি নির্দেশিকা মেনে এই ব্যবসা করতে। আমাদের সঠিক গাইড লাইন দেওয়া হোক।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy