সচেতনতার-লক্ষ্যে: গ্রামে বিজ্ঞান মঞ্চের প্রতিনিধি, পুলিশ। নিজস্ব চিত্র
সাপের ছোবলে মৃত্যু হল এক যুবকের। অসুস্থ হয়ে পড়েছেন আরও ১৩ জন। তিন জনের চিকিৎসা চলছে বসিরহাট জেলা হাসপাতালে। সব মিলিয়ে সাপের বর্ষার মরসুমে আতঙ্ক ছড়িয়েছে হাসনাবাদের মনোহরপুর গ্রামে।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, সোমবার রাতে শ্বাসকষ্ট, বুক জ্বালা শুরু হয় বিড়ি ব্যবসায়ী রাজু গাজির (২৪)। বসিরহাট জেলা হাসপাতালে ভর্তি করা হয় তাঁকে। মঙ্গলবার কলকাতার হাসপাতালে স্থানান্তরিত করেন চিকিৎসকেরা। পথেই মারা যান রাজু। চিকিৎসকেরা জানান, সাপের কামড়েই মৃত্যু হয়েছে তাঁর।
বুধবার রাতে একই উপসর্গ নিয়ে অসুস্থ হয়ে পড়েন গ্রামের বাসিন্দা ইসমাইল গাজি। বসিরহাট জেলা হাসপাতালে ভর্তি করা হয় তাঁকে। বৃহস্পতিবার থেকে শনিবার পর্যন্ত ওই গ্রামের পঞ্চায়েত সদস্য মালেক গাজি-সহ ১২ জনের একই উপসর্গ দেখা গিয়েছে। কয়েক জন ঝাঁড়ফুঁক করিয়েছেন ওঝা-গুনিনের কাছে। তিন জন হাসপাতালে ভর্তি।
বসিরহাট জেলা হাসপাতালের সুপার শ্যামল হালদার বলেন, ‘‘আমাদের এখানে চার জন সাপে কাটা রোগী ভর্তি হয়েছিলেন। এক জনের মৃত্যু হয়েছে। তিন জনের চিকিৎসা চলছে। অনেক সময়ে সাপে কামড়ালে শরীরে দাগ দেখা যায় না। এ ক্ষেত্রেও তেমনটা হয়েছে। আমরা রোগীর লক্ষণ দেখে চিকিৎসা করছি।’’
শনিবার গ্রামে বিজ্ঞান মঞ্চের সদস্য এবং পুলিশ পৌঁছয়। দেখা গেল, প্রাথমিক স্কুলের গেটে তালা। সেখানকার আইসিডিএস কর্মী অঞ্জলি হালদার বলেন, ‘‘গত ছ’দিন ধরে যে ভাবে একের পর এক মানুষ সাপের কামড়ে অসুস্থ হয়ে পড়ছেন, তাতে সকলে আতঙ্কিত।’’ তাঁর দাবি, জনা ৪০ পড়ুয়ার মধ্যে মাত্র তিন জন পড়ুয়া স্কুলে আসায় শিক্ষকেরা ছুটি দিতে বাধ্য হন। আতঙ্কেই মানুষ বাড়ির বাইরে পা ফেলছেন না বলে জানালেন অনেকে।
শিক্ষক সাইফুল গাজি বলেন, ‘‘কোথা থেকে কী ভাবে সাপ এসে ছোবল মারছে, তা বোঝা যাচ্ছে না বলেই ভয় আরও জাঁকিয়ে বসেছে।’’
ইছামতী বিজ্ঞান কেন্দ্রের সভাপতি পার্থ মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘চার দিক জলাশয়, আগাছায় ভরা। মাটির স্তূপ কেটে নিচু জমি ভরাট করায় সাপদের আশ্রয় থেকে উৎখাত করা হয়েছে। তারাই রাতের অন্ধকারে ছোবল মারছে। গ্রামের মানুষকে সে কথা বুঝিয়ে পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখার কথা বলা হচ্ছে।’’ সাপ ধরতে বন দফতরকে খবর দেওয়া হচ্ছে বলেও জানান তিনি।
ক্যানিং হাসপাতালের চিকিৎসক, সাপে কাটা রোগীর চিকিৎসায় বিশেষজ্ঞ সমর রায় জানান, লক্ষণ শুনে মনে হচ্ছে কালাচ সাপের ছোবলেই এই ঘটনা ঘটছে। সাপে কাটা রোগীর চিকিৎসায় দীর্ঘ দিনের অভিজ্ঞতা থেকে তিনি আরও জানান, কালাচ সাপে ছোবল মারলে খুব সূক্ষ্ম দাগ হয়। কয়েক ঘণ্টার মধ্যে সে ভাবে কিছু বোঝাই যায় না। তার পরে বমি, পায়খানা, পেটে ব্যথার মতো কিছু উপসর্গ দেখা দেয়। পরে শ্বাসকষ্ট শুরু হয়।
তাঁর মতে, গোখরো, কেউটের ক্ষেত্রে যে ভাবে ছোবলের দাগ দেখা যায়, কালাচ সাপের ক্ষেত্রে তা বোঝা বেশ দুষ্কর।
সমস্যা আছে আরও। গ্রামের মানুষ দেখালেন, বিদ্যুতের খুঁটি থাকলেও তাতে আলোর ব্যবস্থা নেই। তা শুনে ওই পঞ্চায়েতের প্রধান রামকৃষ্ণ ঘোষ বলেন, ‘‘গ্রামে সাপের উপদ্রব বেড়েছে। বিষয়টি জানতে পেরে আগামী দু’একদিনের মধ্যে আগাছা সাফ, নোংরা পরিষ্কার, চুন-ব্লিচিং ছড়ানো হবে। রাস্তার খুঁটিতে আলোর ব্যবস্থাও করা হবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy