প্রতীক্ষা: ভ্যাকসিনের লাইনে মানুষ। মঙ্গলবার ক্যানিং মহকুমা হাসপাতালে। ছবি: প্রসেনজিৎ সাহা।
দুই ২৪ পরগনাতেই জোরকদমে চলছে করোনা টিকাকরণ। ৪৫ বছরের বেশি বয়সিদের প্রথম ও দ্বিতীয় ডোজের টিকাকরণ চলছে রোজই। পরিবহণ কর্মী, হকার-সহ যঁারা বেশি সাধারণ মানুষের কাছাকাছি আসেন, তাঁদেরও টিকাকরণ চলছে। তবে ১৮ বছরের বেশি বয়সিদের টিকাকরণ এখনও সর্বত্র শুরু হয়নি। শীঘ্রই এঁদের টিকাকরণ শুরু হবে বলেই জেলা প্রশাসন সূত্রের খবর।
উত্তর ২৪ পরগনায় দৈনিক করোনা সংক্রমণ তিনশোর নীচে নেমে গিয়েছে। দৈনিক মৃত্যুর সংখ্যাও কমেছে। তবে দৈনিক সংক্রমণ ও মৃত্যুর নিরিখে সোমবার পর্যন্ত রাজ্যের মধ্যে শীর্ষেই রয়েছে এই জেলা। এই পরিস্থিতিতে মানুষকে দ্রুত টিকা দেওয়ার কাজে জোর দিয়েছে জেলাপ্রশাসন ও স্বাস্থ্য দফতর। স্বাস্থ্যকেন্দ্র, হাসপাতালের পাশাপাশি আলাদা শিবির করে ভ্যাকসিন দেওয়ার ব্যবস্থা করা হচ্ছে। প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, অটো, টোটো, রিকশা চালক-সহ সমস্ত পরিবহণ কর্মী, হকার, শিক্ষক, আইনজীবী, ল’ক্লার্ক, খবরের কাগজ বিক্রেতা, গ্যাসের ডিলার, পেট্রোল পাম্প কর্মী, সরকারি কর্মীদের আলাদা শিবির করে ভ্যাকসিন দেওয়ার কাজ চলছে। এ ছাড়া, বাজারের বিক্রেতা ও ব্যবসায়ীদেরও প্রতিষেধক দেওয়া হচ্ছে।
স্বাস্থ্য দফতরের এক কর্তা বলেন, “সমাজের যে অংশের সঙ্গে সাধারণ মানুষের যোগাযোগ বেশি, তাঁদের দ্রুত প্রতিষেধক দেওয়া হচ্ছে। সুফলও মিলতে শুরু করেছে।”
উত্তর ২৪ পরগনা জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, ভ্যাকসিন সরবরাহ আগের তুলনায় বেড়েছে। সোমবার পর্যন্ত জেলায় প্রায় সাড়ে ১৭ লক্ষ মানুষ করোনার প্রথম ডোজের প্রতিষেধক পেয়েছেন। দ্বিতীয় ডোজ পেয়েছেন জেলার প্রায় সাড়ে ৪ লক্ষ মানুষ। সোমবার থেকে নতুন করে জেলায় ভ্যাকসিন আসছে। জেলাশাসক সুমিত গুপ্তা বলেন, “মঙ্গলবার জেলার দু’টি স্বাস্থ্য জেলায় আরও প্রায় ৫০ হাজার ভ্যাকসিন এসেছে। এখন আমরা দ্বিতীয় ডোজের উপরে জোর দিচ্ছি।” শীঘ্রই জেলায় ১৮ বছর বা তার বেশি বয়সিদের ভ্যাকসিন দেওয়ার কাজ শুরু হবে বলে জানান তিনি।
মঙ্গলবার সন্দেশখালির ন্যাজাটে শিবির করে প্রায় ২০০ মানুষকে ভ্যাকসিন দেওয়া হয়েছে। জেলাশাসক-সহ উপস্থিত ছিলেন বসিরহাট স্বাস্থ্য জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক দেবব্রত মুখোপাধ্যায়। এ দিনই বনগাঁ পুরসভার পক্ষ থেকে ৭০ বা বেশি বয়সি এবং শারীরিক প্রতিবন্ধীদের বাড়িতে গিয়ে ভ্যাকসিন দেওয়ার কাজ শুরু হয়েছে। প্রতিষেধক পাওয়া এক বৃদ্ধের কথায়, “বাইরে গিয়ে প্রতিষেধক নেওয়ার শারীরিক ক্ষমতা নেই। পুরসভার পক্ষ থেকে বাড়িতে এসে ভ্যাকসিন দেওয়াতে আবারও বেঁচে থাকার ভরসা পেলাম।” বনগাঁর পুরপ্রশাসক গোপাল শেঠ বলেন, “এ দিন পাঁচটি ওয়ার্ডে বাড়ি গিয়ে বৃদ্ধদের ভ্যাকসিন দেওয়া হয়েছে। রোজই পর্যায়ক্রমে ২২টি ওয়ার্ডে এই কর্মসূচি চলবে। এখনও পর্যন্ত পুরসভার ২১ হাজার বাসিন্দাকে ভ্যাকসিন দেওয়া হয়েছে।” বনগাঁ ব্লকে সোম ও মঙ্গলবারে প্রতিষেধক পেয়েছেন প্রায় ১৮০০ মানুষ। ব্লক স্বাস্থ্য আধিকারিক মৃগাঙ্ক সাহা রায় বলেন, “ব্লকে ইতিমধ্যেই প্রায় সাড়ে ৫৬ হাজার মানুষকে ভ্যাকসিন দেওয়া হয়েছে।”
গোবরডাঙা পুরসভার পক্ষ থেকেও ইতিমধ্যেই বাড়িতে গিয়ে আশি বছরের বেশি বৃদ্ধ এবং শারীরিক প্রতিবন্ধীদের ভ্যাকসিন দেওয়ার কাজ শুরু হয়েছে। হাবড়া পুরসভা সূত্রে জানানো হয়েছে, আশি বছর বা তার বেশি বয়সি এবং শারীরিক প্রতিবন্ধীদের বাড়িতে গিয়ে ভ্যাকসিন দেওয়ার কাজ এই সপ্তাহ থেকে শুরু হবে। ১৮ বছরের বেশি বয়সিদেরও পুরসভার স্বাস্থ্যদীপ এবং কলতান প্রেক্ষাগৃহ থেকে শীঘ্রই ভ্যাকসিন দেওয়া হবে।
দু’দিনে বাগদা ব্লকে ১৬০০ মানুষকে ভ্যাকসিন দেওয়া হয়েছে। মঙ্গলবার গাইঘাটা ব্লকে ১২০০ মানুষকে দ্বিতীয় ডোজের প্রতিষেধক দেওয়া হয়েছে।
বসিরহাট স্বাস্থ্য জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক দেবব্রত মুখোপাধ্যায় বলেন, “এখনও পর্যন্ত এই স্বাস্থ্য জেলায় প্রথম ও দ্বিতীয় ডোজ মিলিয়ে ৪ লক্ষ ৫৬ হাজার মানুষকে টিকা দেওয়া হয়েছে।” স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, এখনও পর্যন্ত ১৮ বছরের বেশি বয়সি প্রায় ৬ হাজার মানুষকে ভ্যাকসিন দেওয়া হয়েছে। লক্ষাধিক ভ্যাকসিন এখনও মজুত আছে।
দক্ষিণ ২৪ পরগনায় করোনা পরিস্থিতি তুলনায় কিছুটা নিয়ন্ত্রণে। দেড়শোরও নীচে নেমে গিয়েছে দৈনিক সংক্রমণ। এর মধ্যেই টিকা দেওয়ার কাজ চলছে পুরো মাত্রায়। তবে ১৮ বছরের বেশি বয়সিদের টিকা দেওয়ার কাজ এখনও সব জায়গায় শুরু হয়নি। মূলত ৪৫ বছরের বেশি বয়সিদের প্রথম ও দ্বিতীয় ডোজ দেওয়া হচ্ছে। পরিবহণ কর্মী, হকার-সহ বিশেষ বিভাগে ১৮ বছরের বেশি বয়সিদের টিকাকরণ হয়েছে। জেলা প্রশাসন সূত্রের খবর, পর্যাপ্ত টিকা আসছে। দ্রুত ১৮ বছরের বেশি বয়সি সাধারণ মানুষের টিকাকরণ হবে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy