n প্রত্যাবর্তন: বাড়ি ফেরার পরে সপরিবার পূজা এবং দীপশিখা। সোমবার। নিজস্ব চিত্র
খারকিভের বাঙ্কার ছেড়ে এক বস্ত্রে শুধু নিজের ল্যাপটপটা নিয়ে বেরিয়ে আসার সময়ে জামার পকেটে রোজনামচার ডায়েরিটা নিয়েছিলেন জোর করেই। খারকিভ থেকে দীর্ঘ ট্রেনযাত্রা লিভিভ পর্যন্ত। সেখান থেকে পাঁচ কিলোমিটার হেঁটে চেক পয়েন্টে পৌঁছেও মাইনাস ১০ ডিগ্রি তাপমাত্রায় প্রায় ১৫ ঘণ্টা ঠায় দাঁড়িয়ে থেকে সীমান্ত পার হওয়ার অপেক্ষা। দমদমের জ’পুরের দীপশিখা দাস গোটা ঘটনাক্রমই লিখে রেখেছেন নিজের ডায়েরিতে।
বীজপুরের গোয়ালাপাড়ার পূজা ছিলেন জ়েপোরিজিয়ায়। গত ২৮ ফেব্রুয়ারি জ়েপোরিজিয়া স্টেট মেডিক্যাল ইউনিভার্সিটির প্রথম বর্ষের ছাত্রী পূজা-সহ ১৪৯৭ জন পড়ুয়াকে নিয়ে জ়েপোরিজিয়া স্টেশন থেকে একটি ট্রেন ইউক্রেনের পশ্চিম সীমান্তের দিকে রওনা হয়েছিল। তিন বার ট্রেন বদলে উজ়গোরো হয়ে জ়াহোনি সীমান্ত পেরিয়ে গত ২ মার্চ হাঙ্গেরির রাজধানী বুদাপেস্টে পৌঁছন পূজা। নিজের মোবাইলের নোটবুকে সেই যাত্রাপথের খুঁটিনাটি তিনি লিখে রেখেছেন এবং ইন্টারনেট পরিষেবা মিলতেই তা পাঠিয়েছেন স্বজন-বন্ধুদের হোয়াটসঅ্যাপে।
পরিস্থিতি বদলালে ফের ইউক্রেনে ফিরে যেতে চান উত্তর শহরতলির দুই ডাক্তারি পড়ুয়াই। দীপশিখা আর পূজা, দু’জনেই বাড়ি ফিরেছেন সোমবার। সাতসকালে মেয়েকে দমদম বিমানবন্দরে আনতে গিয়েছিলেন পূজার মা বর্ণালী ঘোষ। আনন্দে মেয়েকে জড়িয়ে ধরে কেঁদে ফেলেন তিনি। সেখান থেকে সোজা বাড়ি। গোটা পাড়া কার্যত পূজার ফেরার অপেক্ষায় ছিল। বর্ণালী বলেন, ‘‘অবশেষে ঘরের মেয়ে ঘরে ফিরেছে, এর থেকে শান্তির আর কী-ই বা হতে পারে! ভবিষ্যৎ নিয়ে এখনই কিছু ভাবছি না। আগে ও একটু ধাতস্থ হোক।’’ পূজার বাবা অনুপবাবুও বললেন, ‘‘দিন গেল বটে কয়েকটা! মেয়েটার কথা ভেবে রাতে ঘুমোতে পারিনি। এখন যুদ্ধটুদ্ধ না হলেই হয়।’’
দূতাবাসের তরফে সকলের দেশে ফেরার ব্যবস্থা করা হলেও অনেকেই ইতিমধ্যে অভিযোগ তুলেছেন অসহযোগিতা নিয়ে। এ দিন বাড়ি ফিরে দীপশিখা বলেন, ‘‘জানি, এই পরিস্থিতিতে সকলকে ঠিকঠাক পরিষেবা দিয়ে দেশে ফেরানো মোটেই সহজ নয়। তবু একটু ভাল ব্যবহারের আশা করেছিলাম। মাইনাস ১০ ডিগ্রি তাপমাত্রায় হাইপোথারমিয়ায় অনেকের মতো আমিও জ্ঞান হারিয়েছিলাম বুদুমেরাস সীমান্তে। দূতাবাসের কাছে সাহায্য চাওয়ায় শুনতে হয়েছিল, ছিলেন তো বাঙ্কারে, এখানে তার চেয়েও কি খারাপ আছেন?’’
গত ১ মার্চ খারকিভ থেকে বেরিয়ে প্রথমে রুশ সীমান্ত পেরিয়ে আসার চেষ্টা করলে সে দেশের সেনার বাধার মুখে পড়েন দীপশিখারা। এর পরে ট্রেনে চড়ে ও হেঁটে সীমান্ত পেরিয়ে পোল্যান্ডের তারাস্কায় পৌঁছন ৪ তারিখ। সেখানে একটি ভারতীয় আশ্রমে তাঁদের প্রথমে রাখা হয়। পরে রেজ়সোপে একটি হোটেলে। দীপশিখা বলেন, ‘‘তিনশো জনের জন্য মোটে দুটো শৌচাগার ছিল। খাবারও মেলেনি। অসুস্থ অবস্থায় দিল্লি নেমেছিলাম পরের দিন। দেশে ফেরার পরে অবশ্য যথেষ্ট ভাল ব্যবস্থা ছিল। রাজ্য সরকারও উদ্যোগী হয়েছিল বাড়ি পৌঁছে দিতে।’’
নিজেদের বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন দুই পড়ুয়াই। পূজা বলেন, ‘‘আমরা অপেক্ষা করব, পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে ফিরে যাব।’’ দু’জনেই দু’জনের যুদ্ধক্ষেত্র থেকে ফেরার অভিজ্ঞতা লিখে রাখতে চান ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কাছে গল্প
বলার জন্য।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy