অচিন্ত্য সাহা ও পূজা দেবনাথ
বর্ষা শুরু আগেই জ্বর ও ডেঙ্গির প্রকোপ ছড়াতে শুরু করেছে উত্তর ২৪ পরগনার বিভিন্ন এলাকায়। বৃহস্পতিবার হাবড়া ও অশোকনগরে ডেঙ্গি আক্রান্ত দু’জনের মৃত্যুও ঘটেছে।
বৃহস্পতিবার সকালে পূজা দেবনাথ (২১) নামে ন’মাসের অন্তঃসত্ত্বা এক তরুণীর মৃত্যু হয় হাবড়া স্টেট জেনারেল হাসপাতালে। পরিবারের লোকজন চিকিৎসায় গাফিলতির অভিযোগ তুলে বিক্ষোভ দেখান। পুলিশ এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
বুধবার জ্বর নিয়ে ডহরথুবার বাসিন্দা পূজাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল। হাসপাতাল সুপার শঙ্করলাল ঘোষ বলেন, ‘‘ওই প্রসূতির রক্তে ডেঙ্গির জীবাণু ছিল। তিনি হঠাৎ করেই ডেঙ্গি শকে মারা গিয়েছেন। মৃত্যুর মিনিট পনেরো আগেও রোগী ভালই ছিলেন। তবে চেষ্টা করেও বাঁচানো যায়নি।’’ দেহটি ময়নাতদন্তের জন্য বারাসত জেলা হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
বৃহস্পতিবার ভোরে হাবড়া স্টেট জেনারেল হাসপাতালে মারা গিয়েছেন অচিন্ত্য সাহা (৫৮) নামে অশোকনগরের গুমা ১ পঞ্চায়েতের কালীনগরপল্লি এলাকার বাসিন্দা এক ব্যক্তি। মৃত্যুর কারণ হিসাবে শংসাপত্রে লেখা হয়েছে, ‘ডেঙ্গি ফিভার উইথ লেফট ভেনটিকুলার ফেলিওর।’
হাসপাতাল ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, ইতিমধ্যেই হাবড়া শহরের বেশ কিছু মানুষ ডেঙ্গিতে আক্রান্ত হয়েছেন। দিন কয়েক আগে ৩ নম্বর রেলকলোনি এলাকার বাসিন্দা বারো বছরের সুকন্যা কর্মকার জ্বরে আক্রান্ত হয়ে মারা গিয়েছে। তারও রক্তে ডেঙ্গির জীবাণু পাওয়া গিয়েছিল বলে হাসপাতাল সূত্রে জানানো হয়েছিল।
হাবড়া শহরে ইতিমধ্যেই কয়েকজনের রক্তে ডেঙ্গির জীবাণু মিলেছে। হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, ডেঙ্গির জীবাণু নিয়ে ১৫ জন মানুষ এখন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। চলতি বছরে হাবড়া হাসপাতালে জ্বর নিয়ে আসা ১০০ জনের রক্তে ডেঙ্গির জীবাণু মিলেছে।
২০১৭ সালে হাবড়া শহরে জ্বর ও ডেঙ্গির প্রকোপ ছড়িয়েছিল। কয়েকজন মারাও যান। গত বছর তুলনায় কম হলেও জ্বর-ডেঙ্গি দেখা গিয়েছিল। যদিও গত বছর পুরসভা থেকে আগেভাগে জ্বর-ডেঙ্গির মোকাবিলায় পদক্ষেপ করা হয়েছিল। নিকাশি নালা সাফাই, এলাকার বন জঙ্গল পরিস্কার করা, বাড়ি বাড়ি ও এলাকায় নিয়মিত মশা মারার তেল স্প্রে করা হয়েছিল।
পুরসভার স্বাস্থ্যকর্মীরা বাড়ি বাড়ি গিয়ে মশার লার্ভা কোথাও আছে কিনা, তা খতিয়ে দেখেছেন। পুরসভার তরফে অতিরিক্ত সাফাই কর্মী নিয়োগ করা হয়েছিল।
পুরবাসীর দাবি, এ বছর পুরসভার তরফে মশা মারতে বা জ্বর-ডেঙ্গির প্রকোপ কমাতে তেমন কোনও পদক্ষেপ চোখে পড়েনি। গত বছর অক্টোবর মাসে পুরসভায় প্রশাসক বসেছে। বাসিন্দাদের দাবি, তারপর থেকে নালা সাফাই বা মশা মারার কাছ আর সে ভাবে হচ্ছে না। নালাগুলি আবর্জনায় ভরে রয়েছে। ডেঙ্গি প্রতিরোধে পুরসভার তরফে প্লাস্টিক ও থার্মোকলের ব্যবহার সম্পূর্ণ ভাবে নিষিদ্ধ করা হয়েছিল গত বছর। প্লাস্টিকের ব্যবহার বন্ধ করতে শহরের বাজারগুলিতে পুরসভার পক্ষ থেকে নিয়মিত নজরদারি চালানো হত। দোকানে দোকানে হানা দিয়ে মজুত প্লাস্টিকের ক্যারিব্যাগ বাজেয়াপ্ত করা হয়েছিল। মানুষকে সচেতন করতে লাগাতার প্রচার কর্মসূচি নেওয়া হয়েছিল। এ সবের ফলে শহর এলাকায় প্রকাশ্যে প্লাস্টিকের ব্যবহার কার্যত বন্ধ হয়ে গিয়েছিল একটা সময়ে।
এলাকার মানুষ জানালেন, পুরসভার ক্ষমতা প্রশাসকের হাতে থাকায় এবং লোকসভা ভোটের কারণে মশা মারার কাজ সে ভাবে গতি পায়নি। দ্রুত পুরভোটের দাবি করছেন সকলে। হাবড়ার প্রাক্তন পুরপ্রধান নীলিমেশ দাস বলেন, ‘‘বারাসতের মহকুমাশাসককে বলেছি, নালা সাফাই ও মশা মারার কাজ আরও জোরদার করতে।’’
ডেঙ্গি মোকাবিলায় স্থানীয় বিধায়ক তথা মন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক শনিবার সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে নিয়ে পুরসভায় বৈঠক করেছেন। হাবড়া পুরসভার প্রশাসক তথা মহকুমাশাসক তাপস বিশ্বাসের অবশ্য দাবি, ‘‘মশা মারা ও নালা সাফাইয়ের কাজ পুরোদমে চলছে। রেল কলোনি এলাকায় নালায় জল জমে থাকে। জল বের করার কোনও পথ নেই। মানুষ নিজেরাই সেখানে প্লাস্টিক ফেলে রাখেন। ইতিমধ্যেই দু’টি মেডিক্যাল ক্যাম্প করা হয়েছে। মানুষকে সচেতন করতে মাইক প্রচার শুরু করা হচ্ছে।’’
ডেঙ্গি আক্রান্ত হয়ে অশোকনগরের বাসিন্দার মৃত্যুতে সেই এলাকাতেও আতঙ্ক ছড়িয়েছে। পঞ্চায়েত বা ব্লক প্রশাসনের তরফে মশা মারার তেল, ব্লিচিং কিছুই ছড়ানো হচ্ছে না বলে ক্ষোভ উগরে দিচ্ছেন স্থানীয় মানুষজন।
মৃতের পরিবার ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, দিন পনেরো ধরে জ্বরে ভুগছিলেন অচিন্ত্য। স্থানীয় একটি স্বাস্থ্যকেন্দ্রে চিকিৎসা করিয়েছিলেন। রক্ত পরীক্ষায় ডেঙ্গির জীবাণু মেলায় মঙ্গলবার সন্ধ্যায় হাবড়া স্টেট জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, দুর্গানগর এলাকায় খালের কাছে দোকান ছিল অচিন্ত্যর। সেখানেও মশার উপদ্রব রয়েছে।
কালীনগরপল্লি এলাকায় গিয়ে দেখা গেল, চারিদিকে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ। ঝোপ-জঙ্গলে ভরা। অচিন্ত্যর বাড়ির কাছ দিয়ে বিদ্যাধরী খাল বয়ে গিয়েছে। খালের একাংশ কচুরিপানায় ঢেকে আছে। ইতিমধ্যেই ওই এলাকায় কয়েকজন জ্বরে আক্রান্ত হয়েছেন। কেউ বাড়িতে চিকিৎসাধীন, কেউ আবার হাসপাতালে।
২০১৭ সালে হাবড়া ২ পঞ্চায়েত সমিতি এলাকায় জ্বর ডেঙ্গির প্রকোপ ছড়িয়েছিল। কয়েকজন মারাও গিয়েছিলেন। হাবড়া ২ পঞ্চায়েত সমিতির অধীন। সমিতির সভাপতি রতনকুমার দাস বলেন, ‘‘কিছু এলাকায় সমস্যা থাকলেও বেশিরভাগ এলাকায় নিয়মিত মশা মারা হচ্ছে। বনজঙ্গল সাফাই চলছে।’’ গুমা ১ পঞ্চায়েত প্রধানের স্বামী অসুস্থ থাকায় কাজে কিছুটা অসুবিধা হচ্ছিল বলে জানিয়েছেন তিনি।
হাবড়া ২ বিডিও মনতোষ রায় বলেন, ‘‘মৃত্যুর খবর পেয়েছি। শুক্রবার থেকেই ওই এলাকায় অতিরিক্ত কর্মী নিয়োগ করে সাফাই ও মশা মারার কাজ শুরু করা হচ্ছে।’’
এবার শুধু খবর পড়া নয়, খবর দেখাও। সাবস্ক্রাইব করুন আমাদের YouTube Channel - এ।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy