যক্ষ্মা রোগী ও তাঁদের পরিবারকে খাবার তুলে দিচ্ছেন বারুইপুরের মহকুমাশাসক দেবারতি সরকার। নিজস্ব চিত্র
দিন পনেরো ধরে জ্বরে ভুগছিল ভাঙড়ের প্রাণগঞ্জের বছর সতেরোর এক কিশোর। ওজন কমে গিয়েছিল অনেকটাই। সঙ্গে ছিল কাশি এবং রাত হলেই প্রচণ্ড ঘাম। খবর পেয়ে তার বাড়িতে যান স্বাস্থ্যকর্মীরা। পরীক্ষায় যক্ষ্মা ধরা পড়ে কিশোরের।
শুধু ওই কিশোরই নয়, ভাঙড় ১ নম্বর ব্লকের বেশ কিছু গ্রামে অনেকেরই সম্প্রতি যক্ষ্মা ধরা পড়েছে। ব্লক প্রশাসন ও ব্লক স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে খবর, ইতিমধ্যে ৯৫ জন রোগীকে শনাক্ত করে চিকিৎসা শুরু হয়েছে। এদের মধ্যে প্রায় ১৪ জনের বয়স আঠারোর নীচে।
রোগ নিয়ন্ত্রণে তৎপরতা শুরু হয়েছে প্রশাসনিক স্তরে। ব্লক প্রশাসন সূত্রে খবর, যক্ষ্মা রোগীদের জন্য ইতিমধ্যে সম্পূর্ণ বিনামূল্যে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা ও পুষ্টিকর খাবারের ব্যবস্থা করা হয়েছে। স্বাস্থ্যকর্মীরা রোগীদের বাড়িতে গিয়ে প্রয়োজনীয় ওষুধ খাইয়ে আসছেন। এছাড়া সরকারিভাবে প্রত্যেক রোগীর জন্য মাসে ৫০০ টাকা করে দেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে। মঙ্গলবার নিজের দফতর থেকে বারুইপুরের মহকুমা শাসক দেবারতি সরকার যক্ষ্মা রোগীদের হাতে পুষ্টিকর খাবার-সহ চিকিৎসার কিট তুলে দেন।
চিকিৎসকরা বলছেন, যক্ষ্মা জীবাণুঘটিত সংক্রামক রোগ। একজন থেকে আরেকজনের মধ্যে দ্রুত ছড়িয়ে পড়তে পারে নিঃশ্বাস-প্রশ্বাসের মাধ্যমে। রোগীদের যত্রতত্র ফেলা থুতু, কফ থেকেও সংক্রমণ হতে পারে। সেই কারণে প্রশাসনের পক্ষ থেকে বিভিন্ন এলাকায় সচেতনতামূলক প্রচার শুরু করা হয়েছে। রোগীদের কাছে গিয়েও তাদের নানা ভাবে বোঝানো হচ্ছে। দিনদিন ওজন কমে যাচ্ছে, জ্বর-কাশি রয়েছে, এরকম কাউকে পেলে তাঁদের রক্ত, কফের নমুনা সংগ্রহ করে এনে পরীক্ষা করে দেখা হচ্ছে। যক্ষ্মা ধরা পড়লে সঙ্গে সঙ্গে চিকিৎসা শুরু করা হচ্ছে। সাধারণত যক্ষ্মা রোগীরা শারীরিকভাবে দুর্বল হয়ে পড়েন। দিনদিন ওজন কমতে থাকে। ব্লক প্রশাসন ও পঞ্চায়েত সমিতির উদ্যোগে তাই রোগীদের জন্য পুষ্টিকর খাবারের ব্যবস্থা করা হয়েছে। প্রতি মাসে তাঁদের কাছে পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে চাল, ডাল, সয়াবিন-সহ অন্যান্য পুষ্টিকর খাবার।
কীভাবে ছড়াচ্ছে এ রোগ? প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, এইসব এলাকার বহু মানুষ বিহার, উত্তর প্রদেশ-সহ বিভিন্ন জায়গায় কাজে যান। অনেক ক্ষেত্রেই বাইরে থেকে ফেরার পর তাঁদের যক্ষা ধরা পড়ছে। ফলে বাইরে থেকেই তাঁরা এই রোগের জীবাণু বয়ে আনছেন বলে অনুমান স্বাস্থ্য দফতরের কর্তাদের। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক যক্ষ্মা রোগী বলেন, ‘‘বিহারে ঠিকা শ্রমিকের কাজে গিয়েছিলাম। সেখানে প্রায়ই জ্বর, কাশি লেগেছিল। দিনদিন দুর্বল হয়ে পড়ছিলাম। বাধ্য হয়ে গ্রামে ফিরে আসি। পরে স্বাস্থ্যকর্মীরা আমার কফ পরীক্ষা করে বলেন যক্ষ্মা হয়েছে। প্রশাসনের পক্ষ থেকে চিকিৎসা ও খাবারের ব্যবস্থা করা হয়েছে।’’
ভাঙড় ১ ব্লকের বিএমওএইচ অনিমেষ হোড় বলেন, ‘‘যক্ষ্মা সংক্রামক রোগ। তাই সব সময় সাবধানতা অবলম্বন করা উচিত। এই রোগ ফুসফুস থেকে সারা শরীরে ছড়িয়ে পড়তে পারে। আমরা সাধারণ মানুষকে নানা ভাবে সচেতন করছি। আমাদের স্বাস্থ্যকর্মীরা বাড়ি বাড়ি গিয়ে যক্ষ্মা রোগীদের ওষুধ খাইয়ে আসছেন। ইতিমধ্যে অনেককেই সুস্থ করে তোলা সম্ভব হয়েছে।’’ মহকুমা শাসক দেবারতি সরকার বলেন, ‘‘চিকিৎসা চলাকালীন যক্ষা রোগীদের পুষ্টিকর খাবারের প্রয়োজন। তার জন্য সরকারের তরফে তাদের ৫০০ টাকা করে দেওয়া হচ্ছে। কিন্তু সেটা যথেষ্ট নয়। প্রশাসনের তরফএ প্রতি মাসে যক্ষ্মা রোগীদের হাতে পুষ্টিকর খাবার তুলে দেওয়া হচ্ছে। আগামী দিনে অন্যান্য ব্লক গুলিতেও যক্ষ্মা রোগীদের জন্য পুষ্টিকর খাবার দেওয়া হবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy