বিপজ্জনক জেটিতে ঝুঁকি নিয়েই চলছে পারাপার। নিজস্ব চিত্র
শীত পড়তেই পর্যটকদের ভিড় বাড়ছে সুন্দরবনে। প্রায় প্রতিদিনই রাজ্য তথা দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে পর্যটকেরা আসছেন। ভুটভুটি বা লঞ্চে সুন্দরবনের জঙ্গলঘেরা নদীপথে ভ্রমণ এখানকার প্রধান আকর্ষণ। কিন্তু সেই জেটিগুলির অবস্থা জরাজীর্ণ। বার বার বলেও জেটিগুলি মেরামত হচ্ছে না বা নতুন করে তৈরি করা হচ্ছে না বলে অভিযোগ পর্যটন ব্যবসায়ীদের।
কিছুদিন আগে সুন্দরবনের অন্যতম পর্যটন কেন্দ্র পাখিরালয়ের টাইগার মোড়ে অবস্থিত জেটির নীচের অংশটি ভেঙে নদীগর্ভে তলিয়ে যায়। এই জেটিতে পর্যটকদের ওঠানামা কার্যত বন্ধ হয়ে সমস্যায় পড়েছেন পর্যটকেরা। পর্যটন ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত মানুষজনও পড়েছেন সমস্যায়। এই জেটিই ছিল পর্যটকদের ওঠানামার প্রধান মাধ্যম। এর আগেও আমপানের সময়ে পাখিরালয়ের এই এলাকায় আর একটি জেটির নীচের অংশটি ভেঙে নদীতে তলিয়ে গিয়েছিল। একের পর এক জেটি ভেঙে গেলেও পর্যটকদের জন্য এই এলাকায় নতুন করে কোনও জেটি তৈরি হয়নি বলে অভিযোগ স্থানীয় বাসিন্দাদের।
পাশে বন দফতরের একটি জেটি থাকলেও সেখানে পর্যটকদের ওঠানামা করতে দেওয়া হয় না বলে অভিযোগ। বাধ্য হয়ে পাখিরালয়ের উপরে পাড়ে দয়াপুরের উল্টো দিকের পল্টন জেটি দিয়ে পর্যটকদের ওঠানামা করানো হচ্ছে। এতে সেখান থেকে পাখিরালয়ের মূল প্রান্তে আসতে পর্যটকদের আলাদা করে ভ্যান বা টোটো ভাড়া গুনতে হচ্ছে। অনেক সময়ে তা নিয়ে ঝামেলায় জড়িয়ে পড়ছেন পর্যটকেরা। বিব্রত পর্যটন ব্যবসায়ীরা।
শুধু পাখিরালয় নয়, গোসাবার মূল ভূখণ্ড, যেখানে স্যার ড্যানিয়াল হ্যামিল্টনের বাংলো, বেকন বাংলোর মতো দর্শণীয় জায়গাগুলি আছে, সেখানেও পর্যটকদের ওঠানামার জন্য যথাযথ জেটি নেই। একটিমাত্র জেটিতে পর্যটকদের ওঠানামা করতে দেওয়া হয়। সেটির অবস্থাও ভাল নয়। পাশে বিডিও অফিস-সংলগ্ন এলাকায় একটি পল্টন জেটি থাকলেও সেখানে পর্যটকদের ওঠানামা করতে দেওয়া হয় না বলে অভিযোগ। পর্যটন ব্যবসায়ী নিউটন সরকার, সুখময় সাঁতরা জানান, গোসাবায় পর্যটকদের ওঠানামার জন্য জেটি ব্যবহার করলেই পর্যটক-পিছু টাকা নেওয়া হয়। কিন্তু দিনের পর দিন সেটির ভগ্নদশা হলেও সারানোর ব্যবস্থা করা হয়নি। যে কোনও দিন দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। বিডিও ঘাটে সুরক্ষিত জেটি থাকলেও সেখানে পর্যটকদের ওঠানামা করতে দেওয়া হয় না বলে তাঁদের দাবি।
দোবাঁকি, নেতিধোপানি, জটিরামপুর, সোনাখালি-সহ একাধিক জায়গায় জেটির অবস্থা ভাঙাচোরা হলেও সেগুলি মেরামতির জন্য উদ্যোগ করা হচ্ছে না বলে অভিযোগ। সুন্দরবন পিউপল ওয়েলফেয়ার সোসাইটির সম্পাদক উপানন্দ বৈদ্য বলেন, “সোনাখালি জেটির খুবই খারাপ অবস্থা। যে কোনওদিন ভেঙে গিয়ে বড়সড় বিপত্তি ঘটতে পারে। পাখিরালয়ের জেটি ইতিমধ্যে ভেঙে গিয়েছে। স্থানীয় বিধায়ক থেকে শুরু করে জেলা পরিষদ, অন্যান্য দফতর— সব জায়গায় জানিয়েছি। কিন্তু এখনও পর্যন্ত জেটি মেরামতি বা তৈরির উদ্যোগ করা হয়নি।”
এ বিষয়ে গোসাবার বিধায়ক সুব্রত মণ্ডল বলেন, ‘‘ইতিমধ্যে সুন্দরবন উন্নয়ন দফতর-সহ বেশ কয়েকটি দফতরে এই জেটি মেরামতি ও নতুন জেটি তৈরির জন্য আমি নিজে আবেদন জানিয়েছি। আশা করি, দ্রুত সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে।” বাসন্তীর বিধায়ক শ্যামল মণ্ডলও জানান, সোনাখালির জেটির খুবই খারাপ। সুন্দরবন উন্নয়ন দফতরকে সংস্কারের জন্য জানিয়েছেন। দ্রুত কাজ শুরু করার আশা করছেন তিনিও।
এ প্রসঙ্গে সুন্দরবন উন্নয়ন মন্ত্রী বঙ্কিম হাজরা বলেন, ‘‘বেশ কয়েকটি জেটির অবস্থা খারাপ বলে জেনেছি। দফতরের ইঞ্জিনিয়াররা বিষয়টি দেখছেন। দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy