বাকিবুল্লা মোল্লা
তৃণমূল কর্মীকে কুপিয়ে খুনের চেষ্টার অভিযোগ উঠল দলেরই আর এক কর্মীর বিরুদ্ধে। গণপিটুনিতে মৃত্যু হয়েছে অভিযুক্ত তৃণমূল কর্মীর।
মঙ্গলবার রাতে ঘটনাটি ঘটেছে ভাঙড়ের কাশীপুর থানার সাতুলিয়া বাজারের কাছে। পুলিশ জানিয়েছে, ধারাল অস্ত্রের কোপে জখম হয়েছেন মনিরুল ইসলাম বিশ্বাস। তাঁকে কুপিয়ে খুনের চেষ্টার অভিযোগে গণপিটুনিতে মৃত্যু হয়েছে বাকিবুল্লা মোল্লা ওরফে বাকির (৩২)।
বাকিবুল্লার বাড়ি সাতুলিয়ার ঝারারাইট গ্রামে। তার বাবা শাজাহান মোল্লা লিখিত অভিযোগে জানিয়েছেন, ছেলেকে পরিকল্পিত ভাবে পিটিয়ে মারা হয়েছে। অন্য দিকে, মনিরুলের ভাই আখের আলি মোল্লা লিখিত অভিযোগে দাবি করেছেন, তাঁর দাদাকে কুপিয়ে খুনের চেষ্টা হয়েছে।
বারুইপুর পুলিশ জেলার সুপার রশিদ মুনির খাঁ বলেন, ‘‘পুরনো আর্থিক লেনদেন নিয়ে বিবাদের জেরেই খুনের চেষ্টা হয়েছে। অভিযুক্তকে কিছু লোকজন ধরে ফেলে মারধর করে। পরে তাকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পথে মারা যায়। এই ঘটনায় ৬ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। পুরো বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে। ঘটনায় আর যারা জড়িত, তাদের খোঁজ চলছে।’’
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রের খবর, সাতুলিয়া এলাকায় নির্মীয়মাণ একটি প্রকল্পের জমির দালালি, সিন্ডিকেটের মাল ফেলা নিয়ে দীর্ঘ দিন ধরে বিবাদ ছিল মনিরুল ও বাকিবুল্লার মধ্যে। দু’জনেই ইমারতি দ্রব্যের সিন্ডিকেট, জমির দালালির সঙ্গে যুক্ত। কিছু দিন হল ওই প্রকল্পের কাজ বন্ধ।
মনিরুল এলাকায় তৃণমূল কর্মী হিসেবে পরিচিত। তিনি ভগবানপুর পঞ্চায়েতের প্রধানের স্বামী ইব্রাহিম মোল্লার অনুগামী। অন্য দিকে, ওই পঞ্চায়েতেরই তৃণমূল সদস্য খয়রুল ইসলামের অনুগামী বলে পরিচিত বাকিবুল্লা। পুলিশ জানতে পেরেছে, ২০১৬ সালে একটি জমির দালালির জন্য বাকিবুল্লা ৩৫ হাজার টাকা পেত মনিরুলের কাছে। দীর্ঘ দিন ধরে সেই টাকা মনিরুল শোধ করছিলেন না বলে অভিযোগ। সেই রাগেই বাকিবুল্লা হামলা চালায় বলে প্রাথমিক ভাবে অনুমান পুলিশের।
মঙ্গলবার রাতে মনিরুল যখন বাড়ি ফিরছিলেন, সে সময়ে সাতুলিয়া ব্রিজের কাছে বাকিবুল্লা তাঁর উপরে ধারাল অস্ত্র নিয়ে চড়াও হয় বলে অভিযোগ। হাঁসুয়ার কোপ লাগে মনিরুলের হাতে। রক্তাক্ত অবস্থায় মনিরুল পালিয়ে একটি দোকানে ঢুকে সাটার ফেলে দেন। ঘটনা জানাজানি হতেই মনিরুলের লোকজন বাকিবুল্লাকে তাড়া করে একটি মাঠের মধ্যে ধরে ফেলে। সেখানে শ’দেড়েক লোক লাঠি, বাঁশ দিয়ে দীর্ঘক্ষণ ধরে মারধর করে বাকিবুল্লাকে। মাথায় ভারী কিছু দিয়ে আঘাত করা হয়।
গণপিটুনির খবর পেয়ে বাকিবুল্লাকে বাঁচাতে আসে কিছু লোক। ইতিমধ্যে ঘটনাস্থলে পৌঁছয় কাশীপুর থানার পুলিশ। তারাই গুরুতর জখম বাকিবুল্লা ও মনিরুলকে উদ্ধার করে জিরানগাছা ব্লক হাসপাতালে নিয়ে যায়। পরে বাকিবুল্লাকে নীলরতন সরকার মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তরিত করা হলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। বুধবার সকালে সাতুলিয়া বাজারে আসেন পুলিশ সুপার। গণপিটুনিতে জড়িত সন্দেহে গ্রেফতার করা হয় সালাউদ্দিন মোল্লা, হাফিজুর রহমান, নিজামউদ্দিন মোল্লা, আবু বক্কর মোল্লা, কাদের আলি মোল্লা ও আজিবর মোল্লাকে। ধৃতদের বুধবার বারুইপুর আদালতে তোলা হলে বিচারক তিন জনকে পাঁচ দিনের পুলিশি হেফাজতে রাখার নির্দেশ দেন।
বাকিবুল্লার ভাই রব্বানি মোল্লা বলেন, ‘‘আমার দাদা জমির দালালি সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। মনিরুলের কাছে টাকা পেতেন। দাদা সেই টাকা চাইতে গেলে গন্ডগোল হয়। এই নিয়ে দাদাকে পিটিয়ে খুন করা হয়েছে।’’
অভিযোগ উড়িয়ে দিয়ে মনিরুল বলেন, ‘‘আমি কোনও দিন জমির দালালির সঙ্গে যুক্ত ছিলাম না। বাকিবুল্লার সঙ্গে আমার কোনও আর্থিক লেনদেনও ছিল না। আমাকে পরিকল্পিত ভাবে খুন করতেই অস্ত্রের কোপ মারে ও।’’
এ বিষয়ে ভাঙড় ২ ব্লক তৃণমূল সভাপতি ওহিদুল ইসলাম বলেন, ‘‘টাকা-পয়সার লেনদেন-সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে গন্ডগোলের জেরেই এই ঘটনা ঘটেছে। এর সঙ্গে রাজনৈতিক সম্পর্ক নেই।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy