এই চিঠি ঘিরেই বিতর্ক। নিজস্ব চিত্র।
দুর্নীতি-সহ নানা অভিযোগে ডায়মন্ড হারবার ১ ব্লক যুব তৃণমূল সভাপতি গৌতম অধিকারীর বিরুদ্ধে সরব হয়েছেন দলেরই পঞ্চায়েত ও পঞ্চায়েত সমিতি স্তরের বেশ কয়েক জন জনপ্রতিনিধি। তৃণমূল সূত্রে দাবি, গৌতমের বিরুদ্ধে তদন্তের দাবি তুলে ওই জনপ্রতিনিধিরা দলের ডায়মন্ড হারবার ১ ব্লক সভাপতি উমাপদ পুরকাইতের কাছে চিঠিও পাঠিয়েছেন। বিষয়টি প্রকাশ্যে আসার পরে শোরগোল পড়েছে তৃণমূলের অন্দরে। ডায়মন্ড হারবারে বেশ 'প্রভাবশালী' নেতা বলে পরিচিত গৌতম। তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগকারী তৃণমূল জনপ্রতিনিধিদের বক্তব্য, গৌতমের কারণে তাঁরা এলাকায় উন্নয়নের কাজ করতে পারছেন না। চিঠি প্রকাশ্যে আসায় অস্বস্তিতে পড়েছেন তৃণমূল নেতৃত্ব।
তৃণমূল সূত্রে জানা গিয়েছে, তৃণমূলের ওই জনপ্রতিনিধিদের লেখা চিঠিতে দুর্নীতি, তোলাবাজি, মারধর, হুমকি, মিথ্যা মামলায় ফাঁসানোর মতো বেশ কিছু অভিযোগের উল্লেখ রয়েছে। গৌতমবাবু অবশ্য সে সব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। দাবি করেছেন, ‘‘এমন কোনও চিঠির কথা আমার জানা নেই।’’ আর, অভিযোগ সম্পর্কে প্রতিক্রিয়া জানতে চাওয়ায় তাঁর বক্তব্য, ‘‘যাঁরা এ সব বলছেন, তাঁরা গত বিধানসভা ভোটে কেউ বিজেপির হয়ে, কেউ বা ভাইজানের (আব্বাস সিদ্দিকী) হয়ে কাজ করেছিলেন।’’ গৌতমের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ এসেছে বলে স্বীকার করেছেন উমাপদ। তাঁর মন্তব্য, ‘‘এটি আমাদের দলীয় ব্যাপার। বাইরে বলার বিষয় নয়। আমরা দলীয় স্তরে তদন্ত করব। তার পরে, বলব। একটা অভিযোগ আমার কাছে এসেছে।’’
তৃণমূল সূত্রে খবর, গৌতমের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্রে সই করেছেন দশ জনের বেশি জনপ্রতিনিধি। চিঠিতে অভিযোগকারীদের দাবি, ‘আমরা গৌতমের বিভিন্ন অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করেছিলাম। আমরা প্রত্যেকে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি হওয়া সত্ত্বেও দীর্ঘ তিন বছর ধরে সংসদ এলাকাতে গৌতম আমাদের কোনও কাজ করতে দেননি। প্রতিবাদ করলে উল্টে প্রাণনাশের হুমকি দিয়েছেন। এমনকী, ঘরছাড়াও করেছেন। আবার এক পঞ্চায়েতের নির্বাচিত প্রধানকে মিথ্যা মামলায় জেল খাটিয়েছেন।’
বাসুলডাঙা পঞ্চায়েতের প্রধান, তৃণমূলের রিপন লস্করের অভিযোগ, ‘‘আমাকে মিথ্যা মামলায় জেল খাটিয়েছেন ব্লক যুব তৃণমূল সভাপতি। মারধরও করা হয়েছে। আমি এখন ঘরছাড়া। পঞ্চায়েতের কোনও কাজে আমাকে যোগ দিতে দেওয়া হয় না।’’ এ প্রসঙ্গে গৌতমের বক্তব্য, ‘‘রিপনের বিরুদ্ধে দুর্নীতির ভুরিভুরি অভিযোগ ছিল। ওর বিরুদ্ধে মামলাও হয়েছে। আমি কাউকে ঘরছাড়া করেনি। আদালতের নির্দেশেই ও এলাকায় ঢুকতে পারে না।’’ গৌতমের আরও দাবি, ‘‘আমাকে এবং দলকে হেয় করার জন্য কিছু লোক চক্রান্ত করছে। অনেককে না পড়িয়েই আমার বিরুদ্ধে লেখা অভিযোগপত্রে সই করিয়ে নেওয়া হচ্ছে।’’
গৌতমের বিরুদ্ধে অভিযোগ ওঠার পরে বিষয়টি নিয়ে দলের অন্দরে ‘কোন্দল’ ‘তীব্র’ হয়েছে বলে তৃণমূল সূত্রে খবর। দলীয় ‘সমীকরণে’ গৌতমের বিপরীতে থাকা এক তৃণমূল নেতার দাবি, ‘‘অভিযোগপত্রের কথা জানাজানি হওয়ার পরেই গৌতমের লোক জন অভিযোগকারীদের সঙ্গে যোগাযোগ করে তাঁদের সাদা কাগজে সই করিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করছেন।’’
গৌতমের বিরুদ্ধে লেখা অভিযোগপত্রে সই থাকা এক জনপ্রতিনিধি ফোন করে আনন্দবাজারকে বলেন, ‘‘বিশেষ কাজে আমি দলীয় কার্যালয়ে গিয়েছিলাম। আমাকে একটা কাগজে সই করতে বলা হয়েছিল। বিশ্বাস করে সই করেছি। এখন শুনছি, ওই কাগজে গৌতমের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগের কথা লেখা আছে। ওর বিরুদ্ধে আমার কোনও অভিযোগ নেই।’’
গৌতমের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্রে লেখা হয়েছে, ‘আমরা নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি হওয়া সত্ত্বেও আমাদের এলাকায় গৌতম নিজের লোককে দিয়ে ব্লকের আটটি পঞ্চায়েতে নানা দুর্নীতি করছে। যে হেতু আমরা নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি হয়ে মানুষের জন্য কাজ করতে পারছি না, মানুষকে সরকারের উন্নয়নমূলক কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করাতে পারছি না, ফলে আমরা মনে করছি, আমাদের জনপ্রতিনিধি পদে থাকা মূল্যহীন। আমরা দলের নীতি আদর্শ মেনে দলের এক জন সাধারণ কর্মী হিসেবে থাকব। কিন্তু জনপ্রতিনিধি হিসেবে পদত্যাগ করতে চাই। গৌতমের বিরুদ্ধে তদন্ত করে উপযুক্ত শাস্তিপ্রদানের ব্যবস্থা করলে দলের ও এলাকার মানুষের সার্বিক উন্নতি হবে।’
কী বলছেন গৌতম?
তাঁর দাবি, ‘‘২০২১ বিধানসভা ভোটে ভাইজানের হয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করা অনেকে দলে ঢুকেছে। তারা চক্রান্ত করছে। এতে দলের বদনাম হবে।’’ সঙ্গে যোগ করেন, ‘‘আমার বিরুদ্ধে যা হচ্ছে, তা আমি ঠিক জায়গায় জানিয়ে রেখেছি। আবার জানাব। এ সব অভিযোগের কোনও ভিত্তি নেই।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy