তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। ফাইল চিত্র।
তৃণমূলের প্রাক্তন প্রধানের বিরুদ্ধে আর্থিক দুর্নীতির অভিযোগ তুললেন দলেরই পঞ্চায়েত সদস্যেরা।
হাবড়া ১ ব্লকের কুমড়া পঞ্চায়েতের ঘটনা। সোমবার ওই পঞ্চায়েতের প্রাক্তন প্রধান রত্না বিশ্বাসের বিরুদ্ধে আর্থিক দুর্নীতির অভিযোগ তুলে দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে চিঠি লিখেছেন পঞ্চায়েতের ২০ জন তৃণমূল সদস্য। রত্না অবশ্য অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। প্রশাসনের একটি সূত্র জানাচ্ছে, নানা অভিযোগ আগেই হয়েছিল তাঁর বিরুদ্ধে। কিছু ক্ষেত্রে প্রমাণ মিলেছে। সেই মতো পদক্ষেপ করা হয়েছে। বাকি বিষয়গুলি খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
২০১৮ সালে পঞ্চায়েতের প্রধান হন রত্না। ২০২২ সালের মার্চ মাসে তাঁকে সরিয়ে দেওয়া হয়। দলের পঞ্চায়েত সদস্যেরা তাঁর বিরুদ্ধে অনাস্থা আনেন। অনাস্থায় পরাজিত হন রত্না।
অভিষেককে লেখা চিঠিতে রত্নার বিরুদ্ধে একাধিক দুর্নীতির অভিযোগ করেছেন পঞ্চায়েত সদস্যেরা। অভিযোগ, একশো দিনের কাজের প্রকল্পে পুকুর না কেটে প্রায় ৪ লক্ষ টাকা আত্মসাত করেছেন বলে অভিযোগ রত্নার বিরুদ্ধে। অন্য একটি পুকুর শ্রমিক দিয়ে না কেটে মাটি কাটা যন্ত্র দিয়ে কেটে প্রায় সাড়ে ৭ লক্ষ টাকা তুলে নেওয়া হয় বলে অভিযোগ। মৎস্য দফতর থেকে গীতাঞ্জলি প্রকল্পে দেওয়া ঘরের টাকাও প্রাক্তন প্রধান আত্মসাৎ করেছেন বলে অভিযোগ। আরও নানা দুর্নীতির অভিযোগ তোলা হয়েছে প্রধানের বিরুদ্ধে।
পঞ্চায়েত সদস্য বিপ্লব হালদার বলেন, ‘‘রত্না বিশ্বাসের বিরুদ্ধে আর্থিক দুর্নীতির প্রমাণ-সহ অভিযোগ সরকারি বিভিন্ন মহলে আগেই জমা পড়েছিল। বিভিন্ন দফতর থেকে অভিযোগের তদন্তও হয়। দুর্নীতি প্রমাণিত হয়েছিল। হাবড়া থানায় মামলা হয়েছে। সেই সব জানিয়ে দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদকের কাছে পদক্ষেপের আবেদন করা হয়েছে।” অভিযোগকারী পঞ্চায়েত সদস্যদের দাবি, রত্নার কাজকর্মের জন্য এলাকার মানুষের মধ্যে ক্ষোভ তৈরি হয়েছে। সামনে পঞ্চায়েত ভোট। তাঁর বিরুদ্ধে পদক্ষেপ করা না হলে জনমানসে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে।
স্থানীয় সূত্রের খবর, গত দশ বছরে রত্নার জীবনযাত্রা পাল্টে গিয়েছে। আগে বিড়ি বেঁধে সংসার চালাতেন। ফুটপাতে স্বামীর পানের দোকান ছিল। থাকতেন ভাড়া বাড়িতে। বর্তমানে রত্নার একাধিক বাড়ি হয়েছে বলে জানাচ্ছে দলেরই একটি সূত্র। দামী গয়নাগাটি পরে থাকতে দেখা যায় তাঁকে, উঠছে এমনও অভিযোগ।
গত শনিবার দিদির সুরক্ষা কবচ কর্মসূচিতে কুমড়া পঞ্চায়েত এলাকায় এসেছিলেন বনমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক। সে সময়ে দেখা মেলেনি রত্নার। তাঁর বাড়িতে মন্ত্রীর খাওয়া-দাওয়ার কথা ছিল বলে দাবি করেছিলেন রত্না। তবে মন্ত্রী সেখানে খাননি। এলাকায় গিয়ে রত্নার বিরুদ্ধে একাধিক অভিযোগ শোনেন জ্যোতিপ্রিয়।
অভিষেককে লেখা চিঠি প্রসঙ্গে রত্না বলেন, ‘‘যাঁদের যা কাজ, তাঁরা তা করবেন। আমাকে কী কারণে প্রধানের পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছিল, জানি না। সরালে একটা অজুহাত তো দিতে হয়। সেটা দুর্নীতির অভিযোগ হলে মানুষকে বলা সহজ। বিভিন্ন দফতরে আমার নামে অভিযোগ হয়েছে। প্রমাণ করতে পারেনি। আমি দুর্নীতি করলে প্রমাণ হোক। আমিও অনেক কিছু বলতে পারি। কেউ ধোয়া তুলসী পাতা নন!’’ জ্যোতিপ্রিয় বলেন, “প্রশাসন অভিযোগের তদন্ত করে আইনি পদক্ষেপ করবে। যদি রত্না টাকা নিয়ে থাকেন, তা হলে ওঁর উচিত টাকা ফেরত দিয়ে মানুষের কাছে ক্ষমা চেয়ে নেওয়া।”
ব্লক প্রশাসন সূত্রে জানানো হয়েছে, রত্নার বিরুদ্ধে অভিযোগ বিভিন্ন দফতর তদন্ত করেছে। ব্লক প্রশাসনের তদন্ত রিপোর্ট জেলাশাসকের দফতরে জমা আছে। একটি পুকুর কাটার অভিযোগের সত্যতা মিলেছে। দু’জন কর্মীর বিরুদ্ধে থানায় এফআইআর করা হয়েছে। এক জনের কাজ চলে গিয়েছে। হাবড়ার বিজেপি নেতা বিপ্লব হালদার বলেন, “তৃণমূল দুর্নীতিতে ডুবে আছে। সব পঞ্চায়েতে ওরা লুটেপুটে খাচ্ছে। মন্ত্রীর কাছে হয় তো ভাগ কম যাচ্ছিল। তাই রত্নাকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছিল। পুরোটাই ভাগ-বাঁটোয়ারা নিয়ে দ্বন্দ্ব।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy