Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪
IC

TMC: আইসির বিরুদ্ধে মুখ খুলে বিতর্কে আমডাঙার বিধায়ক

অঞ্জন এ বিষয়ে মুখ খোলেননি। তবে তাঁর স্ত্রী অলির বক্তব্য, বিধায়কের বক্তব্যের ফলে তাঁর স্বামীর এবং তাঁর পরিবারের সামাজিক সম্মান নষ্ট হচ্ছে।

আইসি অঞ্জন দত্ত (বাঁ দিকে), বিধায়ক রফিকুর রহমান। নিজস্ব চিত্র

আইসি অঞ্জন দত্ত (বাঁ দিকে), বিধায়ক রফিকুর রহমান। নিজস্ব চিত্র

সীমান্ত মৈত্র  
আমডাঙা শেষ আপডেট: ১১ অগস্ট ২০২২ ০৭:৪০
Share: Save:

আমডাঙায় আইসির বিরুদ্ধে ফের তোপ দেগেছেন স্থানীয় তৃণমূল বিধায়ক রফিকুর রহমান। এর আগেও একাধিকবার আইসির বিরুদ্ধে মুখ খুলেছিলেন তিনি। সোমবার দাড়িয়াপুরহাটে এক মাদক কারবারির বিরুদ্ধে সরব হয়ে প্রহৃত হয়েছিলেন স্থানীয় যুবক। ওই ঘটনাকে কেন্দ্র করে রফিকুরের অভিযোগ, মাদকের কারবারে শুধুমাত্র মদত দিচ্ছেন না আইসি অঞ্জন দত্ত, নিজেও তিনি মাদকের কারবারি (স্টকিস্ট)। আইসির অপসারণ দাবি করেছেন বিধায়ক। গত বছর ডিসেম্বর মাসে আমডাঙার করুণাময়ী কালীমন্দিরে ডাকাতির ঘটনার পরেও আইসিকে দুষেছিলেন রফিকুর।

অঞ্জন এ বিষয়ে মুখ খোলেননি। তবে তাঁর স্ত্রী অলির বক্তব্য, বিধায়কের বক্তব্যের ফলে তাঁর স্বামীর এবং তাঁর পরিবারের সামাজিক সম্মান নষ্ট হচ্ছে। বিষয়টি নিয়ে আইনি পদক্ষেপ করা যায় কি না, তা ভাবনা-চিন্তা করছেন। প্রয়োজনে মুখ্যমন্ত্রীর দ্বারস্থ হতে পারেন।

আমডাঙা থানার আইসি হিসেবে বছরখানেক আগে কাজে যোগ দেন অঞ্জন। প্রথম তিন মাস সব কিছু ঠিকঠাক থাকলেও তারপর থেকেই বিরোধ শুরু হয় বিধায়কের সঙ্গে।

আমডাঙার বহু মানুষ মনে করছেন, আইসি-বিধায়কের এই দ্বৈরথের পিছনে অন্য কারণ আছে। যার জেরে গত চার মাস বিধায়ক থানায় যান না। দু’জনের কথাবার্তাও কার্যত বন্ধ।

থানা সূত্রে জানানো হয়েছে, বিধায়ক নানা রকম অনৈতিক দাবি করেছিলেন। যা আইসি মানতে চাননি। কোনও কোনও অপরাধীকে পুলিশ গ্রেফতার করলে তাকে ছেড়ে দেওয়ার জন্য বিধায়ক চাপ সৃষ্টি করতেন বলে অভিযোগ। ছোটখাটো মামলার (প্রিভেন্টিভ কেস) অপরাধীদেরও ছাড়ার আবদার আসত। পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, কয়েক মাস আগে বিধায়কের ভাই বধূ নির্যাতনের মামলা নিয়ে কথা বলতে থানায় এসেছিলেন। অনুমতি না নিয়ে সরাসরি আইসির ঘরে ঢুকে পড়েন তিনি। আইসি তাঁকে সটান জানিয়ে দেন, অনুমতি নিয়ে তবেই ঘরে ঢুকবেন।

ওই ঘটনার প্রতিবাদে সড়ক অবরোধ করা হয়েছিল। থানার সামনে বিক্ষোভ দেখায় তৃণমূলের কিছু কর্মী-সমর্থক।

বিধায়ক অবশ্য পুলিশের দাবি উড়িয়ে দিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘‘এই আইসির কার্যকালে গত এক বছরে আমডাঙায় হেরোইন-গাঁজার কারবার দশগুণ বেড়ে গিয়েছে। আগে থানায় যে সব আইসি, ওসিরা কাজ করে গিয়েছেন, তাঁদের কাছে জিজ্ঞাসা করলেই জানা যাবে আমি কখনও তাঁদের কাছে কোনও অন্যায় দাবি করেছি কি না। ব্যক্তিগত প্রয়োজনে কখনও পুলিশের কাছে যাই না।’’ বিধায়কের দাবি, হেরোইনের নেশায় আসক্ত হয়ে এলাকার অন্তত ৩০ জন গরিব পরিবারের যুবক এখন নেশামুক্তি কেন্দ্রে রয়েছেন। মাদকের কারবার বাড়ার পিছনে আইসির ভূমিকা আছে বলে তাঁর অভিযোগ।

তবে স্থানীয় বাসিন্দাদের একাংশ জানালেন, এলাকায় হেরোইন ও গাঁজার কারবার আগেও চলত। চুরি-ছিনতাইয়ের কয়েকটি ঘটনাও ঘটেছে। পুলিশ ধরপাকড়ও করে। আমডাঙা থানার কাছে পুরনো পেট্রল পাম্প এলাকায় বাসিন্দারা জোটবদ্ধ হয়ে কিছুদিন আগে হেরোইন ঠেক ভেঙে দিয়েছিলেন। চুরির অভিযোগে দুই যুবককে মারধর করে সম্প্রতি পুলিশের হাতে তুলে দেয় জনতা।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, বর্তমান আইসির সময়ে গাঁজা পাচারের বড়সড় কারবারিরা গ্রেফতার হয়েছে। ২০০-৩০০ কেজি গাঁজাও উদ্ধার হয়েছে এক লপ্তে। বাস থামিয়ে তল্লাশি চালিয়ে পুলিশ প্রচুর গাঁজা আটক করেছিল। পুলিশ জানিয়েছে, গত এক বছরে ৭ জন গাঁজা পাচারকারীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। হেরোইনের খুচরো বিক্রেতা এবং নেশাখোর মিলিয়ে প্রায় ৫০০ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।

গোটা ঘটনা নিয়ে বারাসত জেলা পুলিশের কর্তারা মুখে কুলুপ এঁটেছেন। পুলিশের এক কর্তা বলেন, ‘‘আইসির বিরুদ্ধে ওঠা কয়েকটি অভিযোগ খতিয়ে দেখা হয়েছিল। কোনও প্রমাণ মেলেনি।’’

আইসি নিজে এ বিষয়ে কোনও মন্তব্য করতে চাননি। তবে তাঁর স্ত্রী অলি দত্ত বলেন, ‘‘আমার স্বামীর বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ করা হচ্ছে। এর ফলে আমার পরিবারের এবং স্বামীর সামাজিক সম্মান নষ্ট হচ্ছে। যদি কোনও ঘটনা ঘটে যায়, তার দায়িত্ব কে নেবে?’’ অলি জানান, বিধায়কের বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ করবেন। মুখ্যমন্ত্রীর কাছেও যাওয়ার চিন্তা-ভাবনা করছেন বলে জানিয়েছেন তিনি।

বিধায়ক বলেন, ‘‘যে যা-ই বলুক, আমি আমার বক্তব্য থেকে সরছি না। আইসি মাদক পাচারে জড়িত।’’

গোটা ঘটনায় কটাক্ষ করতে ছাড়ছে না বিরোধীরা। বিজেপির বারাসত সাংগঠনিক জেলা সভাপতি তাপস মিত্র বলেন, ‘‘ভাগ-বাঁটোয়ারা নিয়ে বিধায়ক ও আইসির মধ্যে বিরোধ বেধেছে। বিধায়ক শাসকদলের। আইসি রাজ্য সরকারের স্বরাষ্ট্র দফতরের অধীন। আইসি হয় তো ঠিকমতো ভাগ পৌঁছে দিচ্ছেন না। তাই বিধায়ক এ সব বলছেন।’’

সিপিএমের উত্তর ২৪ পরগনা জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য সত্যসেবী করও বলেন, ‘‘দু’জনের কোনও কারণে ভাগ-বাঁটোয়ারা নিয়ে বনিবনা হচ্ছে না। তবে হেরোইন-গাঁজার কারবার জেলা জুড়েই বেড়েছে। পুলিশ হাত গুটিয়ে বসে।’’

অন্য বিষয়গুলি:

IC Amdanga TMC MLA
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy