গ্রামাঞ্চলে রানের ঝুড়ি মুখ থুবড়ে পড়েছিল পুর এলাকায় এসে। পাঁচ বছরে সেই ক্ষতে কতটা প্রলেপ পড়ল, না কি সঙ্কট গভীরতর হল, তা নিয়েই এখন চিন্তিত বসিরহাট তৃণমূল নেতৃত্বের একটি অংশ। কারণ, বসিরহাট দক্ষিণের বিধায়ক দীপেন্দু বিশ্বাসের আমলে দলের ভাঙন বরং আরও প্রকট হয়েছে পুর অঞ্চলে, এমনটাই মনে করেন দলের অনেকে।
এই পরিস্থিতিতে ঘর গোছাতে তৎপর বিজেপি। দীপেন্দুর আগে এই কেন্দ্র তাদেরই দখল ছিল। বিধায়ক ছিলেন শমীক ভট্টাচার্য। বিজেপির দাবি, গত পাঁচ বছরে তারা ছিন্নমূল তো হয়ইনি, বরং শিকড় আরও গভীরে গিয়েছে। অনুন্নয়নের নানা ফিরিস্তি শুনিয়ে তৃণমূলের সমালোচনায় ক্রমশই সুর চড়াচ্ছে তারা।
বিরোধীদের অভিযোগ, গত পাঁচ বছরে রাস্তাঘাটের উন্নতি হয়নি। পানীয় জল নিয়ে অভিযোগ আছে। যানজট শহরের নিত্য সমস্যা। শহরবাসীর বড় অংশ অবশ্য মনে করেন, পাঁচ বছরে উন্নয়ন হয়নি, এমনটা নয়। কিন্তু শাসকদলের বিরুদ্ধে কাটমানি এবং দুর্নীতির নানা অভিযোগ ফেরে মুখে মুখে। শহরের রাস্তায় পড়ে থাকা পানীয় জলের প্রকল্পের বড় বড় পাইপ পর্যন্ত গায়েব হয়ে গিয়েছে। গাছ কেটে, পুকুর বুজিয়ে রাতারাতি দোকান-বাড়িই হওয়ার পিছনে কাদের স্বার্থ কাজ করে, প্রশ্ন ঘোরে বসিরহাটের বাতাসে। সরকারি প্রকল্পের ঘর বহু দরিদ্র মানুষ পাননি এখনও। তার উপরে আমপানে ক্ষতিপূরণ দুর্নীতির নালিশ তো আছেই।
করোনা-আবহে সমালোচনার আরও কারণ যুক্ত হয়েছে শাসক দলের বিরুদ্ধে। এই মহকুমায় ৬৫ জনের প্রাণ গিয়েছে করোনায়। তারপরেও বসিরহাটে কেন উন্নতমানের কোভিড হাসপাতাল হবে না, সেই অস্বস্তিকর প্রশ্ন শুনতেই হচ্ছে তৃণমূল নেতৃত্বকে। হাড়োয়ায় যে কোভিড হাসপাতাল আছে, তার মান খুবই খারাপ বলে অভিযোগ করছেন সাধারণ মানুষ।
তৃণমূল নেতৃত্ব পাল্টা দাবি করেন, তা হলে কি বসিরহাটে সুপার স্পেশালিটি হাসপাতাল কারও চোখে পড়ে না? নাকি কোটি টাকা ব্যয়ে পানীয় জল প্রকল্প যে শেষের মুখে, তা ভুলে যান মানুষ? নার্সিং ট্রেনিং স্কুল, ডায়ালিসিস ইউনিট চালু হয়েছে মানুষেরই প্রয়োজনে।
দলের নেতারা যখন এ কথা বলেন, তক্ষুণি স্থানীয় মানুষ মনে করিয়ে দেন, কই টাউনহল, রবীন্দ্রভবন যে দীর্ঘ দিন বন্ধ, তার কোনও ব্যবস্থা কেন হল না? কেন রবীন্দ্রভবন বছরের পর বছর ধরে কন্যাশ্রী প্রকল্পের সাইকেলের গুদাম হয়ে আছে? বসিরহাটের মানুষের সংস্কৃতি চর্চা এক রকম বন্ধের মুখে, এটা কেন নজরে পড়ে না শাসকদলের? টাউন কংগ্রেসের সভাপতি হিরন্ময় দাস বলেন, ‘‘পুর এলাকার মার্টিনবার্ন রাস্তা খুবই খারাপ অবস্থায়। টাকি রাস্তার অবস্থাও তথৈবচ। ত্রিমোহণী থেকে চৌমাথা, আমতলা, দন্ডিরহাট, শাঁকচুড়ো হয়ে টাকি রাস্তার অধিকাংশই তো তাপ্পি মারা। পিচ-পাথর উঠে ভয়ঙ্কর চেহারা নিয়েছে। দুর্ঘটনা ঘটে হামেশাই। শহরের মানুষ কোভিড হাসপাতাল পেলেন না। ব্যবসা হল না কর্মতীর্থে। হাসপাতালে চিকিৎসকের অভাব। ভ্যাবলা এলাকায় ওভারব্রিজের প্রতিশ্রুতি পালনেও ব্যর্থ বিধায়ক।’’
বিজেপির জেলা সভাপতি তারক ঘোষের কথায়, ‘‘বসিরহাটে রাস্তা থেকে পাইপ চুরি হয়। এক বালতি পানীয় জলের জন্য পুরসভার ট্যাঙ্কের পিছনে লাইন দিতে হয়। চিকিৎসক, নার্স না থাকায় অসুস্থদের রেফার করার রোগ কমল না এখনও।’’ শমীক বিধায়ক থাকাকালীন ওভার ব্রিজ এবং কেন্দ্রীয় বিদ্যালয়ের চেষ্টা করলেও বর্তমান বিধায়ক তা সম্পূর্ণ করতে পারেননি বলে অভিযোগ করেন তারক।
সিপিএমের জেলা কমিটির সদস্য শ্রীদীপ রায়চৌধুরী আবার বলেন, ‘‘উন্নয়ন উন্নয়ন করে গলা ফাটিয়ে লাভ নেই। সুযোগ থাকা সত্ত্বেও কৃষিভিত্তিক শিল্প তৈরি হল না এত বছরে। সরকারি ব্যবস্থাপনায় কারিগরি প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা না থাকায় চাকরি নেই। খাল সংস্কার না হওয়ায় নিকাশি বেহাল। যানজট নিয়ন্ত্রণের উদ্যোগ লক্ষ্য করা যায় না। অসামাজিক কাজ বাড়ছে।’’
মাঠে-ময়দানের পরিবেশ থেকে রাজনীতির বৃত্তে এসে পড়া দীপেন্দু কখনও রক্ষণাত্মক, কখনও আক্রমণাত্মক ভঙ্গিতে সামাল দেন রাজনীতির আঙিনার প্রতিপক্ষদের। সব কাজ যে শেষ হয়নি, মেনে নেন। পাশাপাশি বলেন, ‘‘তিনটির মধ্যে দু’টি মেডিক্যাল সেন্টারের কাজ হয়ে গিয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী তাঁর স্বপ্নের বসিরহাটের জন্য কোটি কোটি টাকা দিয়েছেন। তা খরচ করে টাকি শহরের যথেষ্ট উন্নয়ন করা হয়েছে। অধিকাংশ পঞ্চায়েতের রাস্তা বর্তমানে কংক্রিটের। রাস্তায় আলো দেওয়া হয়েছে। হাসনাবাদে একশো কোটি টাকা ব্যয়ে বনবিবি সেতু, ভ্যাবলায় পলিটেকনিক কলেজ হয়েছে। ৩৪টি হাইস্কুলে মাল্টিজিম, গ্রন্থাগার, সাইকেল রাখার ছাউনি হয়েছে। শহরের মধ্যে অধিকাংশ মাঠে আলো লাগানো হয়েছে। সীমান্ত বাণিজ্যের জন্য ঘোজাডাঙা রাস্তা ছাড়াও আরও তিনটি বড় রাস্তা তৈরি হয়েছে। এ ছাড়া পুরসভার পক্ষেও প্রভূত উন্নতি করা হয়েছে।’’ দলের অন্দরের কোন্দল প্রসঙ্গে দীপেন্দুর বক্তব্য, ‘‘বড় পরিবারে এ ধরনের ঘটনা থাকে। তবে ভোটের মরসুমে আমরা সকলে এককাট্টা হয়েই নেমেছি।’’ কাটমানি-দুর্নীতির অভিযোগ প্রসঙ্গে দীপেন্দুর বক্তব্য, ‘‘উন্নয়নের জোয়ার দেখতে না পেয়ে বিরোধীরা এমন বলেই থাকে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy