ধৃত যুব নেতা। নিজস্ব চিত্র
কলেজ পড়ুয়া তরুণীকে শ্লীলতাহানির হুমকি, মারধরের অভিযোগ উঠল বাগদার এক যুব তৃণমূল নেতা ও তাঁর স্ত্রীর বিরুদ্ধে। বাগদার রণঘাট পঞ্চায়েত এলাকার ঘটনা। শুক্রবার ওই তরুণী বাগদা থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন।
তদন্তে নেমে পুলিশ শনিবার রাতে শুভেন্দু মণ্ডল ওরফে সদা নামে ওই নেতাকে গ্রেফতার করে। রবিবার বনগাঁ মহকুমা আদালতে তোলা হলে বিচারক তাঁকে জেল হেফাজতের নির্দেশ দেন। পুলিশ জানিয়েছে, সদার স্ত্রী মাম্পির খোঁজ চলছে।
এ দিকে, সন্ধের পর থেকে খোঁজ মিলছে না তরুণীর। তাঁর বাবা মৌখিক ভাবে বিষয়টি জানিয়েছেন পুলিশকে। তাঁর আশঙ্কা, মামলা তুলে নেওয়ার জন্য চাপ সৃষ্টি করতে অপহরণ করা হয়েছে মেয়েকে। পুলিশ জানিয়েছে, বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
তদন্তকারীরা জানান, অতীতে সদার বিরুদ্ধে মারধর, মহিলাদের যৌন নির্যাতন, বাইক ছিনতাইয়ের মতো নানা অপরাধের অভিযোগ রয়েছে। পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, কয়েক মাস সদা তরুণীকে রাস্তাঘাটে দেখা হলে কটূক্তি করত। অশালীন মন্তব্য করত বলে অভিযোগ। তরুণী জানান, তাঁকে বিয়ে না করলে দেখে নেবে বলে হুমকি দিয়েছিল সদা। সোশ্যাল মিডিয়ায় ফেক প্রোফাইল তৈরি করে অশালীন মন্তব্য করছিল।
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, বৃহস্পতিবার দুপুরে তরুণী তাঁর এক বান্ধবীর বাড়িতে যান। সেখানে সদার স্ত্রী মাম্পি চড়াও হয়ে তরুণীকে মারধর করে সদারই মদতে। ওই দিন বিকেলেও সদা স্কুলের মাঠে তরুণীকে আটকে গালিগালাজ, মারধর করে বলে অভিযোগ। তরুণীর বাবাকে খুনের হুমকি দেয়।
সদার আচরণে বিরক্ত তৃণমূল নেতৃত্বের একাংশও। রণঘাটা অঞ্চল তৃণমূল সভাপতি গৌতম মণ্ডল বলেন, ‘‘অতীতে এক মহিলাকে ঘর থেকে বের করে মারধর করেছিল। আমার ভাইপোর কাছ থেকে বাইক কেড়ে নিয়ে পুড়িয়ে দিয়েছিল। সদা ওই সব কাজ করে বাগদা পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি গোপা রায়ের মদতে। তাঁর ছত্রচ্ছায়ায় থাকে। ওই তরুণীকে অভিযোগ তুলে নেওয়ার জন্যও ফোন করেছিলেন গোপা।’’
দলের একটি সূত্র জানাচ্ছে, সদাকে থানা থেকে ছাড়ানোর জন্য গোপা পুলিশের কাছেও তদারকি করেন। তরুণীও জানিয়েছেন, পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি ফোন করে সদার বিরুদ্ধে অভিযোগ না করার পরামর্শ দিয়েছিলেন। বলেছিলেন, ‘‘সদার স্ত্রী অন্যায় করেছে। সে শাস্তি পাবে। সদার বিরুদ্ধে যেন অভিযোগ না করি।’’ বাগদার তৃণমূল নেতা তথা জেলা পরিষদ সদস্য পরিতোষ সাহা বলেন, ‘‘সদার বিরুদ্ধে দলের জেলা নেতৃত্বকে জানানো হচ্ছে।’’ তৃণমূলের জেলা সভাপতি জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক বলেন, ‘‘পুলিশকে বলেছি অভিযুক্ত যুবকের বিরুদ্ধে কড়া আইনি পদক্ষেপ করতে। ধৃত যুবকের সঙ্গে দলের কোনও সম্পর্ক নেই। ওকে যদি দলের কেউ মদত দেয়, তাঁদের বিরুদ্ধেও দল কড়া পদক্ষেপ করবে।’’
স্থানীয় ও তৃণমূল সূত্রে জানা গিয়েছে, সদা অতীতে সিপিএম কর্মী হিসাবে পরিচিত ছিল। গত লোকসভা ভোটের আগে সে তৃণমূলে যোগ দেয়। পরে রণঘাট যুব তৃণমূল সভাপতির পদও পায়। তারপর থেকে তার দাপট আরও বেড়েছে। জ্যোতিপ্রিয় বলেন, ‘‘সিপিএম থেকে দলের ভাবমূর্তি নষ্ট করতেই এসেছিল ও।’’
কী বলছেন পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি গোপা? তাঁর কথায়, ‘‘তরুণীকে ফোন করেছিলাম, কারণ তিনি আমায় বলেছিলেন, সদার স্ত্রী তাঁকে মারধর করেছে। তাঁকে ফোন করে জানতে চেয়েছিলাম, তাঁর অভিযোগ কার বিরুদ্ধে। কোনও চাপ দেওয়া হয়নি। পুলিশের সঙ্গে সদার বিষয়ে কোনও কথা হয়নি।’’ তাঁর দাবি, ‘‘আমার ভাবমূর্তি নষ্ট করতে ভুল বার্তা ছড়ানো হচ্ছে। আর পাঁচটা কর্মীর মতো সদার সঙ্গে আমার পরিচয়। অন্যায় করলে শাস্তি হোক।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy