তৃপ্ত: তৃণমূল শিবির। ছবি: সজল চট্টোপাধ্যায়
ভাটপাড়ার পুরপ্রধান অপসারণের বৈঠক আদালতে ধাক্কা খেলেও তৃণমূল উচ্ছ্বসিত তাদের সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে। কারণ, ৩৫ আসনের পুরসভায় (এই মুহূর্তে সংখ্যাটা ৩৩) বৃহস্পতিবার তৃণমূল তলবি সভায় ১৯ জন কাউন্সিলরকে হাজির করেছিল।
তৃণমূলের নেতারা অনেকেই জানাচ্ছেন, লড়াইটা যতটা না ছিল বিজেপির বিরুদ্ধে, তার থেকে বেশি বিজেপি সাংসদ অর্জুন সিংহের বিরুদ্ধে। সেই লড়াই জিতে তৃপ্ত তৃণমূলের উত্তর ২৪ পরগনা জেলা নেতৃত্ব। তাঁদের বক্তব্য, পুরসভায় সিপিএমের এক কাউন্সিলর এক জন। তাঁকে বাদ দিলে এই মুহূর্তে কাউন্সিলরের সংখ্যা ৩৩। কারণ এক জন কাউন্সিলরের মৃত্যু হয়েছে। আগের পুরপ্রধান সাংসদ হওয়ায় তিনি পদত্যাগ করেছেন।
এ দিনের বৈঠকে তাঁর ভাইপো সৌরভ সিংহ পুরপ্রধানের পদ থেকে অপসারিত করা হয়েছে বলে তৃণমূল দাবি করলেও, হার মানতে নারাজ একদা তৃণমূলের বাহুবলী নেতা অর্জুন। তিনি জানাচ্ছেন খেলা ঘুরবেই। তিনি বলেন, ‘‘তৃণমূলের বৈঠকেই তো হাইকোর্ট বাতিল করেছে। ভোটাভুটির সময়ে আসল খেলা দেখা যাবে।’’
খেলা ঘুরবে কিনা, তা সময় বলবে। তবে এ দিন সৌরভ অপসারণের পরে কাঁকিনাড়া জুড়ে তৃণমূলের মিছিলে উদ্দীপনাই চোখে পড়েছে।
বৃহস্পতিবারই তৃণমূলের ওই বৈঠককে চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে গিয়েছে তৃণমূল। কিন্তু সংখ্যা যে এই মুহূর্তে তাঁদের সঙ্গে নেই, তা পরিষ্কার হয়ে গিয়েছে। কারণ, নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে অনাস্থার মুখোমুখি হতে চাননি সৌরভ। বৈঠক ডাকলেও ভোটাভুটির জন্য সময় নিয়েছেন ৩১ দিন। অন্য দিকে, বিজেপি থেকে বেশ কয়েক জন কাউন্সিলর তৃণমূলে ফিরলেও অনাস্থা আনার জন্য এক মাস অপেক্ষা করতে হয়েছে। আশঙ্কা ছিল, তার মধ্যে বিজেপি ফের দল ভাঙিয়ে কাউন্সিলর নিয়ে পুরবোর্ড ধরে রাখবে। কিন্তু কার্যক্ষেত্রে তা হয়নি।
বিধায়কের পাশাপাশি ভাটপাড়ার পুরপ্রধানও ছিলেন অর্জুন। লোকসভা ভোটের আগে তৃণমূলে ছেড়ে বিজেপিতে যোগ দিয়ে ব্যারাকপুরের প্রার্থী হয়ে যান। তৃণমূলের প্রার্থী দীনেশ ত্রিবেদীকে সামান্য ব্যবধানে হারিয়ে সাংসদও হয়েছেন। ভোটের ফল প্রকাশের পরে পরেই ব্যারাকপুর শিল্পাঞ্চল জুড়ে অশান্তি শুরু হয়। তৃণমূলের প্রায় ৩০০ পার্টি অফিস দখল হয়ে যায় বলে অভিযোগ। প্রায় রাতারাতি হালিশহর, কাঁচরাপাড়া এবং নৈহাটি পুরসভা দখল হয়ে যায়।
এই তিন পুরসভার সিংহভাগ কাউন্সিলরকে দিল্লিতে নিয়ে গিয়ে বিজেপিতে যোগ দেওয়ানো হয়। তারও মাসখানেক পরে নোয়াপাড়ার বিধায়ক তথা গারুলিয়ার পুরপ্রধান বিজেপিতে যোগ দেন। বিজেপিতে যোগ দেন তৃণমূলের বেশ কয়েকজন কাউন্সিলর। তার ফলে গারুলিয়া পুরসভাও তাদের হাতছাড়া হয়।
অন্য দিকে, বিজেপিতে যোগ দেওয়ার পরে অনাস্থা এনে ভাটপাড়ার পুরপ্রধানের পদ থেকে অর্জুনকে অপসারিত করেছিল তৃণমূল। কিন্তু লোকসভা ভোটের পরে ভোটাভুটিতে জিতে পুরপ্রধান হন অর্জুনের ভাইপো সৌরভ। কিন্তু শিল্পাঞ্চলে নিজেদের জমি খুঁজে পাওয়ার পরে ভাটপাড়া দখলে ঝাঁপায় তৃণমূল। তবে তারা কাজ গুছিয়েছে খুব সন্তর্পণে। ভাটপাড়া দখলে তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দায়িত্ব দিয়েছিলেন নৈহাটির বিধায়ক পার্থ ভৌমিককে। বিজেপিতে যাওয়া কাউন্সিলরদের বুঝিয়ে, সাহস যুগিয়ে ধীরে ধীরে পুরনো দলে টেনে আনেন। সেই কাজে তাঁর তাঁকে সাহায্য করেছেন ভাটপাড়ার তৃণমূল নেতা সোমনাথ শ্যাম।
এ দিন বৈঠকের পরেই ভাটপাড়া-কাঁকিনাড়ায় মিছিল বার করে তৃণমূল। লোকসভা ভোটের পরে এত বড় মিছিল তৃণমূল এখানে করতে পারেনি। কাঁকিনাড়া বাজার দিয়ে মিছিল পার হওয়ার সময়ে তৃণমূল নেতাদের বলতে শোনা যায়, ‘‘আর দোকান বন্ধ রাখতে হবে না। ভাটপাড়ায় এখন থেকে শান্তি থাকবে।’’
কাঁকিনাড়া বাজারে শুরু হয়ে ভাটপাড়া পুরসভার সামনে হয়ে মিছিল যায় কাঁকিনাড়া স্টেশন পর্যন্ত। বৈঠক চলা পর্যন্ত তৃণমূলের জেলা সভাপতি জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক, দলের জেলা পর্যবেক্ষক নির্মল ঘোষ, নৈহাটির বিধায়ক পার্থ ভৌমিকেরা কাঁকিনাড়ার কাছারি বাজারে রাস্তার ধারে ঠায় বসেছিলেন।
তৃণমূলের বৈঠককে অবশ্য শুরু থেকেই কটাক্ষ করেছিলেন অর্জুন। তিনি বলেন, ‘‘শুধু তৃণমূল নয়, আমি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কেও মুখ্যমন্ত্রী বলে মানি না। ফলে তিনি কাকে দিয়ে কী করালেন, তাতে আমাদের কিছু যায় আসে না।’’ তৃণমূলের জেলা সভাপতি জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক বলেন, ‘‘অর্জুন ভাল থাকুন। ওঁর প্রতি আমাদের কোনও দ্বেষ নেই। কিন্তু যে দলে ও গিয়েছে, সেই দল প্রতিদিন জনবিরোধী কাজ করছে। ফলে এ সব কথা ওঁরা বলবেনই।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy