Advertisement
২৩ ডিসেম্বর ২০২৪
BJP Protest Campaign

বিজেপির কর্মসূচি ঘিরে বেনজির নিরাপত্তা বনগাঁয়

বনগাঁ-রামনগর সড়ক সংলগ্ন এলাকায় বনগাঁর পুলিশ সুপারের অফিসে। অফিসের সামনে দিয়ে চলে গিয়েছে রামনগর সড়ক।

পুলিশের ব্যারিকেডের সামনে বিজেপির বিক্ষোভ। বনগাঁ-রামনগর রোডে।

পুলিশের ব্যারিকেডের সামনে বিজেপির বিক্ষোভ। বনগাঁ-রামনগর রোডে। নিজস্ব চিত্র ।

সীমান্ত মৈত্র  
বনগাঁ শেষ আপডেট: ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ০৯:১৩
Share: Save:

বনগাঁয় বিজেপির পুলিশ সুপারের অফিস অভিযান ঘিরে অভূতপূর্ব নিরাপত্তা দেখা গেল বৃহস্পতিবার। সকাল থেকে অফিস সংলগ্ন এলাকা কার্যত নিরাপত্তার চাদরে মুড়ে ফেলা হয়। নিরাপত্তার কারণে পথে বেরিয়ে অনেককে যাতায়াতের সমস্যায় পড়তে হয়েছে। কিছুটা পথ ঘুরে যানবাহনে উঠতে হয়েছে।

এত কিছুর পরে অবশ্য কর্মসূচিতে তেমন লোকজন হয়নি বলে অভিযোগ তৃণমূলের। এক তৃণমূল নেতার কটাক্ষ, ‘‘এ দিন বিজেপির কর্মসূচিতে যত কর্মী-সমর্থক গিয়েছিলেন, তার থেকে পুলিশ ছিল বেশি!’’ পুলিশি নিরাপত্তা নিয়ে বিজেপির বনগাঁ সাংগঠনিক জেলার সভাপতি দেবদাস মণ্ডলের বক্তব্য, ‘‘তৃণমূলের পুলিশ বিজেপিকে ভয় পাচ্ছে। সে কারণে এ দিন বনগাঁ পুলিশ সুপারের অফিস এলাকা কার্যত পুলিশের দুর্গে পরিণত করে রেখেছিল।’’

বনগাঁ-রামনগর সড়ক সংলগ্ন এলাকায় বনগাঁর পুলিশ সুপারের অফিসে। অফিসের সামনে দিয়ে চলে গিয়েছে রামনগর সড়ক। পুলিশ সুপারের অফিসের দু’দিকে একশো মিটার করে ২০০ মিটার রাস্তা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল। রাস্তায় সাত ফুট উচ্চতার বাঁশের বেড়া দেওয়া হয়েছিল। তারপর ছিল গার্ডরেল। সকাল থেকে এলাকার দখল চলে গিয়েছিল পুলিশের হাতে। বনগাঁ থানার আইসি শিবু ঘোষ ছাড়াও এসডিপি (বনগাঁ) অর্ক পাঁজা, পেট্রাপোল, গোপালনগর এবং বাগদার ওসি, বনগাঁ মহিলা থানার আইসি সহ প্রচুর পুলিশ কর্মী মোতায়েন ছিলেন। হ্যান্ড মাইক, লাঠি, ঢাল, কাঁদানে গ্যাস, জলকামান নিয়ে পুলিশ সকাল থেকে প্রস্তুত ছিল।

ওই রাস্তা দিয়ে বাস, অটো, টোটো সহ বিভিন্ন যানবাহন চলে। সকাল থেকে রামনগর সড়ক থেকে যানবাহন অন্য রাস্তায় ঘুরিয়ে দেওয়া হয়। এসপি অফিসে পৌঁছনোর আগে সমস্ত রাস্তা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল। অফিস সংলগ্ন এলাকায় বসতবাড়ি, দোকানপাট, কারখানা, ব্যাঙ্ক আছে। দুপুর পর্যন্ত বহু মানুষকে কার্যত ঘরেই কাটাতে হয়েছে। দোকান, কারখানায় অনেকেই যাতায়াত করতে পারেননি বলে অভিযোগ। যাঁরা কাজে বেরিয়েছিলেন, তাঁদের অনেকটা পথ হেঁটে যানবাহন ধরতে হয়েছে। এক প্রবীণ ব্যক্তির কথায়, ‘‘১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের পরিস্থিতি মনে পড়ে যাচ্ছিল। এত পুলিশি নিরাপত্তা তারপর আর কখনও দেখেছি বলে মনে পড়ে না।’’

বেলা ১টা নাগাদ বিজেপির কর্মী-সমর্থকেরা বাঁশের বেড়ার কাছে জড়ো হন। সন্দেশখালিতে মহিলাদের উপরে অত্যাচারের অভিযোগে, তৃণমূল নেতা শেখ শাহজাহানকে গ্রেফতারের দাবিতে মহিলারা ঝাঁটা হাতে বিক্ষোভ দেখান। টোটোয় মাইক বেঁধে কয়েক জন বক্তৃতা করেন। পরে কয়েক জনের প্রতিনিধি দল এসপি অফিসে গিয়ে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সুমন্ত কবিরাজের কাছে স্মারকলিপি দেন। সন্দেশখালির ঘটনার প্রতিবাদে এ দিন বারাসতে পুলিশ সুপারের অফিসের সামনেও বিক্ষোভ সমাবেশ হয়। উপস্থিত ছিলেন বিজেপির রাজ্য কমিটির সদস্য তাপস মিত্র।

বনগাঁয় এ দিনের অভিযানে বিজেপির বনগাঁ সাংগঠনিক যুব মোর্চার সভাপতি রাজীব রায় নেতৃত্ব দেন। ছিলেন বিজেপির বনগাঁ সাংগঠনিক জেলার সাধারণ সম্পাদক চন্দ্রকান্ত দাস। কিন্তু এত বড় কর্মসূচিতে বিজেপির কোনও বিধায়ক-সাংসদকে দেখা যায়নি। ছিলেন না বিজেপির বনগাঁ সাংগঠনিক জেলার সভাপতি দেবদাস মণ্ডলও। দেবদাস জানিয়েছেন, তিনি দিল্লিতে। রাজীবের দাবি, এ দিন প্রায় দেড় হাজার কর্মী-সমর্থক কর্মসূচিতে গিয়েছিলেন। শান্তিপূর্ণ ভাবে কর্মসূচি পালন করা হয়েছে। তৃণমূলের বনগাঁ সাংগঠনিক জেলার সভাপতি বিশ্বজিৎ দাস অবশ্য বলেন, ‘‘এ দিনের কর্মসূচি দেখে বোঝা গিয়েছে, মানুষ বিজেপিকে প্রত্যাখান করেছে। সর্বত্র অশান্তি গোলমাল পাকাচ্ছে। পুলিশ সে কারণেই নিজেদের কাজ করেছে।’’

পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, এ দিনের বিজেপির কর্মসূচির কোনও অনুমতি ছিল না। সে কারণে দেবদাসকে পুলিশ ই-মেল করে জানিয়েছিল, অনুমতিহীন কর্মসূচির জন্য আইনি পদক্ষেপ করা হতে পারে। তবে সব কিছু ছাপিয়ে পুলিশের নিরাপত্তার বহর বনগাঁবাসীর আলোচনার বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। এলাকার এক বাসিন্দার কথায়, ‘‘সব কিছু দেখেশুনে মনে হচ্ছিল, যুদ্ধকালীন অবস্থা। বহিরাগত শক্র হয় তো পুলিশ সুপারের অফিস আক্রমণ করতে আসছে!’’

অন্য বিষয়গুলি:

BJP Bangaon
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy