Advertisement
২৩ ডিসেম্বর ২০২৪
Tiger

পেটের টানে জঙ্গলে গিয়ে ফের বাঘের মুখে

বুধবার সকালে সুন্দরবনের ঝিলা ৫ নম্বর জঙ্গলে সুজিত মণ্ডল নামে  বছর পঁয়তাল্লিশের এক মৎস্যজীবীকে বাঘে টেনে নিয়ে গিয়েছে জঙ্গলে।

প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

নিজস্ব সংবাদদাতা
গোসাবা শেষ আপডেট: ৩০ এপ্রিল ২০২০ ০৪:২৭
Share: Save:

লকডাউন পরিস্থিতিতে ঘরে নগদ টাকা নেই। এ দিকে, বাজারে চাল-ডাল-তেলের দাম বেড়েছে। বন দফতরের নিষেধাজ্ঞার তোয়াক্কা না করেই অনেকে গভীর জঙ্গলে ঢুকছেন মাছ-কাঁকড়া-মধুর খোঁজে। বাঘের আক্রমণের শিকারও হচ্ছেন।

বুধবার সকালে সুন্দরবনের ঝিলা ৫ নম্বর জঙ্গলে সুজিত মণ্ডল নামে বছর পঁয়তাল্লিশের এক মৎস্যজীবীকে বাঘে টেনে নিয়ে গিয়েছে জঙ্গলে। কাঁকড়া ধরতে তিনি জঙ্গলে ঢুকেছিলেন। এই নিয়ে গত দশ দিনে তিনজন বাঘের হানার মুখে পড়লেন সুন্দরবনে। ২০ এপ্রিল জেমসপুরের বাসিন্দা রথীন সরকারকে বাঘে তুলে নিয়ে গিয়েছিল। ২৭ এপ্রিল মধু সংগ্রহ করতে গিয়ে বাঘের হামলায় প্রাণ হারান ছোটমোল্লাখালির বাসিন্দা নবীন সরকার।

বন দফতর ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, নিরাপদ মণ্ডল ও একাদশী মণ্ডলকে সঙ্গে নিয়ে সুজিত গিয়েছিলেন জঙ্গলে। গোসাবার লাহিড়িপুর পঞ্চায়েতের চরঘেরি গ্রামের বাসিন্দা সুজিত। দুই সন্তান ও স্ত্রীকে নিয়ে সংসার। নদীতে মাছ, কাঁকড়া ধরেই জীবিকা নির্বাহ করেন। ছেলে শৌভিক ভিন রাজ্যে কাজ করেন। লকডাউনের কারণে আপাতত সেখানেই আটকে রয়েছেন। মেয়ে সঙ্গীতা অষ্টম শ্রেণির ছাত্রী।

পরিবারের লোকজন জানান, লকডাউনের জেরে নদীতে মাছ, কাঁকড়া ধরার উপরে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে বন দফতর। এর ফলে দিন আনা দিন খাওয়া বহু পরিবার সমস্যায় পড়েছে। সরকারি ত্রাণ সে ভাবে কিছুই পাননি সুজিত, দাবি পরিবারের। ঘরে যেটুকু রসদ ছিল, তা-ও শেষ হতে বসেছে। এই পরিস্থিতিতে পেটের টানে বন দফতরের নিষেধাজ্ঞাকে অমান্য করেই দুই সঙ্গীকে নিয়ে জঙ্গলে যান সুজিত। বুধবার ভোরে নিরাপদর ডিঙি নৌকোয় করে তিনজন রওনা দেন কালীরচরের দিকে। সকাল সাড়ে ৬টা নাগাদ সেখানে পৌঁছে ঝিলা ৫ নম্বর জঙ্গলের পাড়ে নেমে কাঁকড়া ধরছিলেন। সে সময়ে হানা দেয় দক্ষিণরায়। ঘাড়ে কামড় বসিয়ে টানতে টানতে জঙ্গলে নিয়ে যায়। সুজিতকে বাঁচাতে কাঁকড়া ধরার লোহার শিক নিয়ে বাঘের দিকে তেড়ে গিয়েছিলেন নিরাপদ ও একাদশীরা। কিন্তু বেশি দূর ধাওয়া করতে সাহস পাননি।

দু’জন ফিরে আসেন গ্রামে। সুন্দরবন কোস্টাল থানা ও স্থানীয় পঞ্চায়েতকে জানান। বনকর্মীরা ঘটনাস্থলে যান। কিন্তু সুজিতের খোঁজ মেলেনি।

খবর পেয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েছেন সুজিতের স্ত্রী সুলতা। তাঁর কথায়, ‘‘ঘরে চাল, ডাল শেষ হয়ে এসেছে বলেই দু’টো পয়সার জন্য কাঁকড়া ধরতে গিয়েছিল। বিক্রি করে বাজার করে ফিরবে বলেছিল। পেটের দায়েই এই অবস্থা হল আমাদের।’’

লাহিড়িপুর পঞ্চায়েতের প্রধান প্রকৃতি ঘরামি পরিবারটির পাশে দাঁড়ানোর আশ্বাস দিয়েছেন। বাঘের হানায় মৃত ও নিখোঁজ মৎস্যজীবী পরিবারের পাশে থাকা একটি সংগঠনের আহ্বায়ক অমল নায়েক বলেন, ‘‘সুন্দরবনের মানুষের বিকল্প কর্মসংস্থান না করলে এই মৃত্যুমিছিল কমানো যাবে না।’’

এ বিষয়ে সুন্দরবন ব্যাঘ্র প্রকল্পের এক আধিকারিক বলেন, ‘‘লকডাউনের কারণে সুন্দরবনের নদী, খাঁড়িতে মাছ, কাঁকড়া ধরা বা মধু সংগ্রহ বন্ধ রয়েছে। কিন্তু তবু কিছু মানুষ সেই নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে জঙ্গলে প্রবেশ করছেন। সে কারণেই দুর্ঘটনা ঘটছে।’’

অন্য বিষয়গুলি:

Tiger Sunderbans
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy